আজই আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠল আলোকমঞ্জির। শরতের আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে সাদা মেঘের ভেলা। সঙ্গে চলছে রোদের লুকোচুরি। ইতিউতি দেখা মিলছে কাশেরও। কোথাও আবার মাঠের উপর শিউলি ঝ’রে পড়ে আছে। সবমিলিয়ে গোটা রাজ্যজুড়েই পুজো পুজো গন্ধ।
তবে মহালয়ার আগেই পুজোর বাজারের পাঠ চোকাতে গতকাল শহরের বাজারগুলিতে উপচে পড়ল মানুষের ভিড়। কেনাকাটায় ঝাঁপিয়ে পড়ল প্রায় গোটা কলকাতা। প্রসঙ্গত, পুজো শুরুর আগে এটাই ছিল শেষ রবিবার। এই অনলাইন শপিং-এর যুগেও ঠাসা ভিড়ে গলদঘর্ম হয়ে পছন্দসই রঙের পোশাকে হাত বুলিয়ে, মান যাচাই করে সাধের শাড়ি কিংবা জামা বাছতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেনি বাঙালি।
আসলে পরের রবিবার পঞ্চমী। হাতে সময় খুব কম। অনলাইনে কেনাকাটার সময়ও আর নেই। কাজেই কেনাকাটা করতে বেলা যতই বাড়ল, ততই ভিড় বাড়ল শপিংমল থেকে শুরু করে ফুটপাথের বাজারেও। উত্তর থেকে দক্ষিণ, টালা থেকে টালিগঞ্জ— পায়ে পায়ে ভিড় জমল গোটা মহানগরীতে। গড়িয়াহাট, নিউ মার্কেট, হাতিবাগানে রীতিমত ঠেলাঠেলি করে এগিয়ে চললেন ক্রেতারা।
শহরের এসি শপিং মলগুলিতেও ছিল মাত্রাছাড়া ভিড়। যদিও মল কর্তৃপক্ষের একাংশের দাবি, মলের ভিড়ের সঙ্গে বিক্রিবাটার হার গুলিয়ে ফেললে চলবে না। কেননা, অধিকাংশ ক্রেতাই এসির হাওয়ায় ‘উইন্ডো শপিং’ করতে আসেন। মাত্র হাতে গোনা ক’টা লোকই গাঁটের কড়ি দিয়ে জামাকাপড় কেনেন।
গড়িয়াহাট এলাকার দোকানগুলিতে দুপুর থেকেই ছিল চোখে পড়ার মত ভিড়। সময় যত এগোতে থাকে, পাল্লা দিয়ে ভিড়ও আরও বাড়তে থাকে। মহিলাদের পোশাক বিক্রেতাদের দাবি, পুজোর আগে এটাই ছিল শেষ রবিবার, তাই মাত্রাছাড়া ভিড় হয়েছে। তার উপর মহিলাদের পছন্দসই পোশাক জোগান দিতে নাভিশ্বাস উঠছে। কিছু বিক্রেতা জানান, পুজোর জন্য দোকানে বাড়তি দু’-তিনজন করে কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে।
অন্যদিকে, ইমিটেশন গয়না এবং হরেক রকম জাঙ্ক জুয়েলারি বিক্রেতাদের দাবি, জিএসটি এবং নোটবন্দির চক্করে বিক্রি খানিকটা কমেছে ঠিকই, তবে পুজোয় কলেজপড়ুয়া এবং তরুণীরা জাঙ্ক জুয়েলারি কেনায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
আবার হাতিবাগানের স্থানীয় দোকানিদের দাবি, আগের দু’টি রবিবারের মতই ছিল ভিড়। যদিও জনসমুদ্রে বিধান সরণী দিয়ে গাড়ি চলাচল করাতে রীতিমতো হোঁচট খাচ্ছিলেন কলকাতা পুলিশের অফিসাররা। স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর দাবি, এখানে মূলত নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষজন কেনাকাটা করতে আসেন। তাই অনেকেই পুজোর বোনাস পাওয়ার পরই পুজোর জামাকাপড় কিনতে আসেন। ফলে পুজোর দিনকয়েক আগে অবধি ভিড় থাকবে।
আবার মধ্য কলকাতার নিউ মার্কেট এলাকায় আরেক চিত্র। ঠাসা ভিড়ে প্রাণ ওষ্ঠাগত হওয়ার যোগাড় ছিল অনেকেরই। ওখানের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনলাইন শপিং অ্যাপগুলির দৌলতে বিক্রিতে কিছুটা হলেও প্রভাব পড়েছে। কিন্তু ধীরে ধীরে তা কাটতে চলেছে। কারণ, ক্রেতারা নিজেরাই এসে বলছেন, অনলাইনে যে পোশাক দেখে অর্ডার করছেন হাতে পাওয়ার পর তা পছন্দ হচ্ছে না। রং, কাপড়ের মান সহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি হচ্ছে। সেগুলি রিটার্ন করে নতুন পোশাক পেতে পেতে অনেকেই ধৈর্য হারিয়ে ফেলছেন। স্বভাবতই ফের দেখেশুনে কেনার ট্রেন্ড ফিরে আসছে। ফলে অনলাইন ছেড়ে আবারও নিউ মার্কেটে ফিরে আসছেন মানুষ।
জুতোর দোকানগুলিতেও ছিল দেখার মত ভিড়। শুধু নামী পোশাক কিনলেই তো হবে না, সঙ্গে মানানসই জুতো না হলে পুরো সাজটাই যে মাটি। ক্রেতাদের নজর টানতে হরেক রকম ফ্যাশনেবল জুতো নিয়ে হাজির দোকানগুলি। হাই হিল থেকে শুরু করে রকমারি জুতো। ফলে ভিড় উপচে পড়ছে শ্রীলেদার্স, খাদিমস, এলিটের মত বড় বড় দোকানগুলিতে।
মোদ্দা কথা, শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায় খামতি রাখতে রাজি নয় আর কেউই। এখনও যাদের পুজোর পোশাক কেনা হয়নি, তারা প্রত্যেকেই পড়ি কি মরি করে ছুটছেন বাজারহাটগুলিতে। সবমিলিয়ে জমজমাট পুজোর বাজার।