আধার কার্ড নিয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুরেই সুর মেলাল দেশের শীর্ষ আদালত। মোদী সরকারের আধার কার্ড প্রণয়নের শুরুর দিন থেকেই এর বিরোধিতা করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী। বলেছিলেন, ‘আধার কার্ড দিলে স্বামী-স্ত্রীর কথাও আর ব্যক্তিগত থাকবে না। কেউ আড়ি পেতে শুনবে। তারপর পাঠিয়ে দেবে বিজেপির দপ্তরে। আমি আমার ফোন থেকে কার সঙ্গে কথা বলছি সেটা আমার ব্যাপার। গোপনীয়তা আমার অধিকার’। মঙ্গলবার আধার নিয়ে শীর্ষ আদালতের রায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই দাবিকেই মান্যতা দিল।
আজ বুধবার সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেয়, আধার সংবিধানিক হলেও বাধ্যতামূলক নয়। শীর্ষ আদালতের রায় বুঝিয়ে দিল দেশের নাগরিকের স্বার্থে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিমতই বাস্তবসম্মত। সারা দেশে একমাত্র মমতাই হুঙ্কার দিয়েছিলেন, কোনও মোবাইল কোম্পানিকে আধার নম্বর দেবেন না। সেই দাবিও মান্যতা পেল আজ। এদিন সুপ্রিম কোর্টের রায় ঘোষণার পর মিলান থেকেই একটি টুইটে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘প্রথম দিন থেকেই আমরা এর জন্য লড়াই করেছি। ব্যঙ্ক অ্যাকাউন্ট, মোবাইল ফোনের সাথে আধার সংযুক্তিকরণ বাধ্যতামূলক নয়। এর ফলে উপকৃত হবেন সাধারণ মানুষ। সকলকে জানাই শুভেচ্ছা’।
বাংলায় বাণিজ্যে লগ্নী আনতে ইউরোপ সফরে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আধার নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় বেরনোর পর মিলানেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘আমরা আগেই বলেছিলাম আধার কার্ডের নম্বর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দেবেন না। তাতে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ্যে চলে আসবে। আমাদের লড়াইকে আজ মান্যতা দিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত। এই জয় মানুষের জয়’।
প্রসঙ্গত, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও গোপনীয়তা রক্ষার সাংবিধানিক অধিকার খর্ব হওয়ার কথা উল্লেখ করে, শীর্ষ আদালতে আধার আইনের বিরোধিতা করে একাধিক পিটিশন জমা পড়ে। গত ১০মে আধার নিয়ে রায় ঘোষণা করার কথা থাকলেও প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র ও বিচারপতি একে সিকরি, বিচারপতিএএম খানবিলকর, ডিওয়াই চন্দ্রচূড় ও অশোক ভূষণের সাংবিধানিক বেঞ্চ রায় ঘোষণা স্থগিত রাখে। এই মামলায় আধারের বিরোধিতা করে আবেদনকারীরা বলেন, আধার আইনের কারণে সাধারণ মানুষের গোপনীয়তা রক্ষার মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। একই সঙ্গে তথ্য নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। আজ সেই মামলারই রায় দিল দেশের শীর্ষ আদালত। তাতে আধারকে সাংবিধানিক উল্লেখ করলেও বাধ্যতামূলক নয় বলেও জানিয়ে দিলেন বিচারকেরা। এই রায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক দূরদর্শিতাকেই আরও একবার মান্যতা দিল।