ভারতের ‘ভিলেজ রকস্টার্স’ চলল অস্কারের মঞ্চ মাতাতে। হ্যাঁ, এবারের অস্কার দৌড়ে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবে, গিটার বাজিয়ে দিনবদলের স্বপ্ন দেখা ‘ভিলেজ রকস্টার্স’। শনিবার এ কথা জানান ফিল্ম ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া নিয়োজিত অস্কার এন্ট্রি সিলেকশন কমিটির প্রধান কন্নড় পরিচালক এসভি রাজেন্দ্র সিং বাবু। অস্কারে যাওয়ার মনোনয়নের জন্য জমা পড়েছিল মোট ২৮টি ছবির তালিকা। তার মধ্যে ছিল সঞ্জয় লীলা বনশালির ‘পদ্মাবত’, আলিয়া ভাট অভিনীত ‘রাজি’, রানি মুখোপাধ্যায় অভিনীত ‘হিচকি’, বরুণ ধাওয়ান অভিনীত ‘অক্টোবর’ এবং সদ্য মুক্তি পাওয়া ছবি ‘মান্টো’ এবং ‘লাভ সনিয়া’। তাঁদের মধ্যে থেকে অসমিয়া ছবি ‘ভিলেজ রকস্টার্স’-কে ভারত থেকে অস্কারে পাঠানোর জন্য মনোনীত করা হয়েছে। এবার ৯১ তম অ্যাকাডেমি পুরস্কারে সেরা বিদেশি ভাষার ছবির বিভাগে লড়াই করবে এই ছবিটি। প্রসঙ্গত, অস্কারের মঞ্চে সেরা বিদেশি ভাষার ছবির চূড়ান্ত পর্ব পর্যন্ত ২০০১-এ ‘লগান’- এর পর আর কোনও ভারতীয় ছবি পৌঁছয়নি।
আসামের প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ে ‘ধুনু’। ১০ বছরের এই কিশোরী স্বপ্ন দেখে ইলেকট্রিক গিটার হাতে গান গাওয়ার, একটা রকব্যান্ড বানানোর। বাড়ির ‘নুন আনতে পান্তা ফুরোনো’-র মত দশা, কিন্তু তাতে ধুনুর স্বপ্ন ফুরায় না। এ গল্পকেই সেলুলয়েডে তুলে ধরেছেন রিমা। ৮৭ মিনিটের এই সিনেমার শ্যুটিং পুরোটাই হয়েছে রিমা দাসের নিজের গ্রাম ছয়গাঁওয়ে। শুধু নিজের গ্রামে শ্যুটিং করা নয়, যাঁদের নিয়ে রিমা সিনেমাটি করেছেন, তাঁদের অধিকাংশই পেশাদার অভিনেতা নন, গ্রামের সাধারণ মানুষ। ‘ধুনু’র চরিত্রে অভিনয় করেছে রিমার নিজেরই ভাইঝি ভনিতা দাস। কামরূপী ভাষায় নির্মিত এই ছবি প্রথম প্রদর্শিত হয়েছিল গত বছর টরেন্টো ইন্টারন্যাশনাল ফিন্ম ফেস্টিভালে এবং প্রশংসিত হয়েছিলেন রিমা। ইতিমধ্যেই ৭০টি চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয়েছে এই সিনেমা। জিতেছে প্রচুর পুরস্কার। এ বছর ৬৫তম জাতীয় চলচ্চিত্র উৎসবে ‘শ্রেষ্ঠ কাহিনিচিত্র’, ‘শ্রেষ্ঠ সম্পাদনা’, ‘শ্রেষ্ঠ লোকেশন সাউন্ড রেকর্ডিস্ট’ ও ‘শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী’ বিভাগে পুরস্কার জিতে নিয়েছে রিমার স্বপ্নের এই সিনেমা।
অস্কারে মনোনীত হওয়ার আনন্দে স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বসিত রিমা। এখন নিজের গ্রামের বাড়িতেই রয়েছেন তিনি। রিমা বলেন, ‘আমার জীবনের খুব বড় একটা দিন। আমার মতো একজন স্ব-প্রশিক্ষিত চলচ্চিত্র নির্মাতার জন্য এই স্বীকৃতি বিশাল। এই স্বীকৃতি আত্মবিশ্বাসকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। বাড়িতে ফিরেই এ সাফল্যের খবর পেলাম, এবার পরিবারের সঙ্গেই খুশি ভাগ করে নেব।’ প্রসঙ্গত, ২৮ সেপ্টেম্বর সারা ভারতে মুক্তি পাচ্ছে ‘ভিলেজ রকস্টার্স’। সিনেমার প্রোমোশন সে ভাবে করতে পারেননি রিমা। তাই বললেন, ‘আমিই প্রযোজক, কোনও স্টুডিয়ো ব্যাক-আপ নেই। অসম প্রশাসন ও কেন্দ্রীয় সরকার যদি আমার অবস্থা বুঝে সাহায্য করেন, খুব উপকৃত হব।’
রিমার এই সাফল্যকে স্বাগত জানাচ্ছেন টলিউডের পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ও। এসভি রাজেন্দ্র সিং বাবুর নেতৃত্বাধীন ১২ সদস্যের জুরিবোর্ডের সদস্য ছিলেন শিবপ্রসাদ। তাঁর কথায়, ‘দারুণ অভিজ্ঞতা। ২০১৮-এর ভারতবর্ষটা কী রকম, চোখের সামনে সেটা পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি।’ জুরি মেম্বার অনন্ত মহাদেবন বলেছেন, ‘ভিলেজ রকস্টার ছবিটি একটি আন্তর্জাতিক মানের ছবি। আমরা এই ছবি অস্কারের মঞ্চে পাঠানোর জন্য মনোনিত করতে পেরে গর্বিত।’