কৈশোরে এক যুবকের প্রেম প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন স্কুল পড়ুয়া লক্ষ্মী আগরওয়াল৷ সেটাই ছিল তাঁর ‘অপরাধ’৷ ফলে শাস্তিও জুটেছিল কপালে৷ প্রত্যাখ্যানের জবাবে ওই যুবক লক্ষ্মীর মুখে ছুঁড়ে দিয়েছিল অ্যাসিড৷ তারপর থেকে লক্ষ্মীর জীবন সাক্ষী নানা উত্থান-পতনের৷ সেই স্কুলের গণ্ডি পেরোতে না পেরোতেই শুরু হয়েছিল পাড়া-প্রতিবেশীর কানাঘুষো, হাসি-ঠাট্টা, রক্তচক্ষু। সেসব এড়িয়ে এগিয়ে চলেছেন লক্ষ্মী৷ প্লাস্টিক সার্জারির পর আবারও জীবন স্বাভাবিক ছন্দে ফেরেন তিনি৷ লক্ষ্মী ‘চানভ ফাউন্ডেশন’ নামে এনজিও-র পক্ষে মহিলাদের উপর অ্যাসিড আক্রমণের বিরুদ্ধে এবং যেসব আক্রান্ত মহিলারা আবার নতুন জীবন পাচ্ছেন তাঁদের পুনর্বাসনের জন্য ভারতজুড়ে কাজ করতেন৷ তবে প্রায় বছরখানেক ধরে কর্মহীন লক্ষ্মী৷ অর্থ সংকটে ভুগছিলেন৷ স্বামীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের পর নিজের কন্যাসন্তান ও মায়ের খরচ জোগাতে গিয়ে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছিলেন লক্ষ্মী৷ কী করবেন ভেবেই পাচ্ছিলেন না তিনি৷
এমনই বিপদের দিনে লক্ষ্মীর পাশে দাঁড়ালেন বলিউড সুপারস্টার অক্ষয় কুমার৷ লক্ষ্মীকে পাঁচ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য করেন ‘খিলাড়ি’৷ এ খবর চাউর হওয়ার পর অক্ষয়ের পথ ধরেই বহু মানুষ এগিয়ে এসেছেন লক্ষ্মীর পাশে৷ অন্তত দু’শো জন ফোন করেছিলেন তাঁকে৷ এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ায় নেটিজেনরাও অনেকেই পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁর৷ কেউ লক্ষ্মীকে দশ হাজার টাকা আর্থিক সাহায্য করেছেন। কেউ আবার দিয়েছেন পনেরো হাজার টাকা৷ সব মিলিয়ে প্রায় পঞ্চাশ হাজার টাকা সাহায্য পেয়েছেন তিনি৷ লক্ষ্মী বলেন, ‘বিপদের দিনে একা লাগছিল৷ কিন্তু এভাবে সবাইকে পাশে পেয়ে নতুন করে আবারও লড়াইয়ের সাহস পেলাম৷’ লক্ষ্মী অক্ষয়র প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান, বিপদের দিনে তাঁর পাশে এসে দাঁড়ানোর জন্য।
পূর্ব দিল্লির লক্ষ্মীনগরের বাসিন্দা লক্ষ্মী যে শুধু অর্থ সাহায্যেই পেয়েছেন তা নয়৷ এর পাশাপাশি চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই বহু চাকরিরও প্রস্তাব পেয়েছেন তিনি৷ বিউটিশিয়ান কোর্স পাশ করেছিলেন লক্ষ্মী৷ তিনি জানান, ‘একটি মেকআপ অ্যাকাডেমি থেকে চাকরির প্রস্তাব পেয়েছি৷ ওই সংস্থা আমার মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালানোরও দায়িত্ব নিতে চায়৷ একটি গয়না প্রস্তুতকারক সংস্থাও আমার মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালাতে চায়৷’ যাঁদের কাছ থেকে চাকরির প্রস্তাব পেয়েছেন তাঁদের সকলের সঙ্গে দেখা করবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি৷ ইতিমধ্যেই সারা দেশের মানুষ জেনে ফেলেছে লক্ষ্মীর এই জীবন সংগ্রামের গল্প। যেভাবে তিনি জীবনে ফিরে এসেছেন, তা অনেক অ্যাসিড আক্রান্ত মহিলাদের সাহস জুগিয়েছে।