সকাল সকাল পুলিসের এনকাউন্টার। খতম দুই দুষ্কৃতী। তবে অভিনব বিষয় হল, খোদ পুলিসের ‘আমন্ত্রণে’ এনকাউন্টারের ‘সাক্ষী’ থাকলেন সাংবাদিকরা। ‘অনুমতি’ও মিলে গেল গুলি চালানোর দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করার।
ঘটনাস্থল উত্তরপ্রদেশের রামগড়। তখন সকাল সাড়ে ছ’টা। কাছেই একটি পরিত্যক্ত সরকারি অফিস। তার ভিতরে আশ্রয় নিয়েছে খুনে অভিযুক্ত দুই দুষ্কৃতী। পুলিসের নিশানায় সেই পরিত্যক্ত সরকারি অফিসটিই। বন্দুক তাক করে গুলি চালালেন পুলিসকর্মীরা। পরে দুই দুষ্কৃতীর দেহ বের করে এনে পাঠান হয় ময়নাতদন্তের জন্য। ঘটনাস্থল থেকে উঠে আসা ভিডিও ফুটেজে দেখা গিয়েছে এনকাউন্টারের সেই দৃশ্য। যদিও এই ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ্যে আসার পর স্থানীয় প্রশাসন থেকে সংবাদমাধ্যমকে আমন্ত্রণ জানানোর ঘটনা অস্বীকার করা হয়।
পুলিসের দাবি, বেশ কিছুদিন ধরে মুস্তাকিম ও নৌসাদ নামে দু’জনের খোঁজে তল্লাশি চলছিল। গত মাসে ছ’জনকে খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত এই দুই দুষ্কৃতী। নিহতদের মধ্যে দু’জন পুরোহিত, এক দম্পতি ও দু’জন কৃষক। দুই দুষ্কৃতীর মাথার দাম ধার্য হয়েছিল ২৫ হাজার টাকা করে। আলিগড়ের পুলিস সুপার বলেন, সকাল সাড়ে ছ’টা নাগাদ ঘটনাটা ঘটে। অভিযুক্ত মুস্তাকিম ও নৌসাদ একটি বাইকে ছিল। পুলিসের একটি দল তাদের থামানোর চেষ্টা করে। তখন পুলিসকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় তারা। আমরা তাদের পিছনে ধাওয়া করি। প্রায় চার কিলোমিটার দূরে একটি পরিত্যক্ত সরকারি দপ্তরের ভিতরে ঢুকে পরে দুই দুষ্কৃতী। সেখান থেকেও তারা আমাদের লক্ষ্য করে গুলি চালাতে শুরু করে। আমরা বাড়তি বাহিনী নিয়ে আসি। পাল্টা নিশানায় গুলিবিদ্ধ হয় দু’জনেই। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে দু’জনকেই মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।
ঘটনার ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর সাংবাদিকদের ‘আমন্ত্রণ’ জানানোর কথা অস্বীকার করেন আলিগড়ের (গ্রামীণ) পুলিস সুপার মণিলাল পাটীদার। তিনি বলেন, প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে এনকাউন্টার চলে। এক পুলিসকর্মীও জখম হয়েছেন। সেই সময় সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা সেখানে পৌঁছে যান। সম্ভবত দূর থেকে তাঁরা ঘটনার ভিডিও করেন।
উত্তরপ্রদেশে ২০১৭ সালের মার্চে যোগী আদিত্যনাথ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে পুলিসের এনকাউন্টারের পালা অব্যাহত। এখনও পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছে পুলিসের সঙ্গে সংঘর্ষে। এনকাউন্টারের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। কয়েক হাজার অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের পুলিস প্রধান ও পি সিং বলেন, হাজার হাজার অপরাধীকে গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে সুপরিকল্পিত ‘কৌশলে’র অঙ্গ হল এইসব এনকাউন্টার। এর ফলে এখনও পর্যন্ত পাঁচ পুলিসকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে ৫০০ জনেরও বেশি অপরাধীকে। এনকাউন্টার অপরাধ দমনের অংশ। এটা সরকারি নীতি নয়, পুলিসের নীতি। আমরা এটাকে এনকাউন্টার বলি না। আমরা বলি, এটা পুলিসের কাজ। চূড়ান্ত পেশাদারি ও কৌশলগতভাবে আমরা অপরাধীদের মোকাবিলা করি।
(সংগৃহীত)