প্রায় সাড়ে তিনদিন সময় লেগেছে আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে। পুড়ে গেছে সমস্ত কিছুই। সর্বস্বান্ত হয়েছেন অনেক ব্যবসায়ী। ইতিমধ্যেই বিপর্যয়ের ধাক্কা সামলে খুলতে শুরু করেছে ফুটপাথের বেশ কিছু দোকান ও ডালাও। ডালা ও দোকান আগলে তাঁরা এই ক’দিন বসেছিলেন ক্যানিং স্ট্রিটে। ধীরে ধীরে সকলে ধাতস্তও হচ্ছেন। তবুও কোথাও যেন বাগড়ির দুর্ঘটনার আকস্মিকতা, ভয়, সংশয় লেগে রয়েছে ক্যানিং স্ট্রিটের দোকানগুলির দেওয়ালে। এবার বাগরি মার্কেটে আগুন লাগার ঘটনায় সরাসরি অন্তর্ঘাতের ইঙ্গিত দিলেন রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
বাগরি মার্কেটের অগ্নিকাণ্ড পরবর্তী পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বৃহস্পতিবার নবান্নে বৈঠকে বসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গড়া মন্ত্রিগোষ্ঠী। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের পার্থবাবু বলেন, বাগরি মার্কেটের আগুন লাগার নেপথ্যে ষড়যন্ত্র বা অন্তর্ঘাত রয়েছে কি না, তা তদন্ত করে দেখার বিষয়টি এদিনের আলোচ্যসূচিতে ছিল। বিষয়টি যাদের দেখার কথা, তারা তা দেখছে। এরপরই পার্থবাবুর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, সোমবার বা সপ্তাহের অন্য কোনও কাজের দিনে নয়, শুধু শনিবার আগুন লাগে কেন, এটাও দেখতে হবে! আগুন নেভার পরেও বিপজ্জনক হয়ে থাকা বাগরি মার্কেট এখন যে খোলা হচ্ছে না, তাও জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। বিদেশ সফররত মুখ্যমন্ত্রী যে রাজ্যের যাবতীয় বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন, এদিন তাও জানান পার্থবাবু। মন্ত্রিগোষ্ঠীর পরবর্তী বৈঠক আগামী সোমবার।
মন্ত্রিগোষ্ঠীর প্রধান পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ফরেন্সিক তদন্ত শুরু হয়েছে। এখন মার্কেটের বিভিন্ন অংশ থেকে চাঙড় খসে পড়ছে। এরকম একটা অবস্থায় ভিতরে যাওয়া বিপদের। ওই মার্কেট ‘ফিট ফর ট্রেড’ কি না, সেটা দেখবেন স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়াররা। তাঁদের মতামত নিয়েই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।
বাগরি মার্কেটের মতো ঘিঞ্জি এলাকায় আগুন নেভাতে যেভাবে স্থানীয় মানুষের সাহায্যে দমকল, কলকাতা পুলিশ, সিইএসসি এবং কলকাতা পুরসভা একযোগে কাজ করেছে, তা প্রশংসনীয়। আগুন নিভে গিয়েছে। তবে যেখানে আগুন লেগেছিল, তার উৎসস্থলে পৌঁছনোই ছিল কষ্টসাধ্য। দৃশ্যত বিরক্ত পার্থবাবু বলেন, ব্যবসায়ীদের বিপদে আমরা বরাবরই পাশে আছি। তবে বাগরি মার্কেটের ক্ষেত্রে দেখা গেল, ব্যবসায়ীরা আইন-কানুনের ধার ধারেননি। অনেক বিষয়ে সহমত হয়েও, অনেকে তা প্রয়োগ করেননি। তাঁদেরও দেখা উচিত, নিজেদের ব্যবসার জন্য যেন ক্ষয়ক্ষতি না হয়। যে সমস্ত ব্যবসায়ী আইন মেনে চলছেন না, তাঁদের কীভাবে মানতে বাধ্য করবেন? পার্থবাবুর জবাব, আইন যা আছে, সে অনুযায়ীই কাজ হবে। তবে এটাও মনে রাখা দরকার, আমরা শীতল থাকি বলে কেউ যেন দুর্বল না ভাবে। একইসঙ্গে তিনি জানান, আগুনের জেরে ওষুধের সঙ্কট দেখা দিতে পারে বলে কিছু অংশ থেকে প্রচার চালানো হচ্ছে। জেনে রাখা দরকার, এরকম কোনও সঙ্কট রাজ্যে নেই। কোনও রকম গুজব বা প্ররোচনামূলক মন্তব্যে কান দিতে বারণ করেন তিনি।