বন্যা বিধ্বস্ত কেরালাকে নতুনভাবে গড়ে তুলতে প্রয়োজন কয়েক হাজার কোটি টাকা। সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত মিলেছে দু’হাজার কোটি।বিদেশি কিছু রাষ্ট্রের তরফে ত্রাণ বাবদ মোটা অঙ্কের অর্থ দেওয়ার প্রস্তাব কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার বাতিল করায় কিছুটা হতাশ হয়েছিলেন বিজয়নরা। কিন্তু এই আর্থিক সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার জন্য বাম জোটের প্রশাসন রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের এক মাসের বেতন ও পেনশনের টাকা মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এই নির্দেশ ঘিরেই আলোড়িত হচ্ছে কেরালার রাজ্য রাজনীতি।জমেছে ক্ষোভ। অস্বস্তিতে পড়েছে সিপিএমও।
এই আদেশের তীব্র বিরোধিতা করেছে বিরোধীরা। তাঁদের মতে, বিধ্বংসী বন্যায় বহু সরকারি কর্মীর পরিবার সর্বস্বান্ত হয়েছে। পাশাপাশি ইতিমধ্যে কর্মীরা এক বা দু’দিনের বেতন-সহ তাঁদের সাধ্যমতো আর্থিক সাহায্য করেছেন ত্রাণ তহবিলের জন্য। এই অবস্থায় এক মাসের বেতন বা পেনশন কেটে নিলে সরকারি কর্মীরা ভয়ঙ্কর অসুবিধায় পড়বেন। তাছাড়া এভাবে সরকারি আদেশ বের করে ত্রাণ তহবিলের জন্য টাকা কেটে নেওয়া যায় না। কারণ, এই দান কখনওই বাধ্যতামূলক করা যায় না।
শুধু রাজনৈতিক মহলে নয়, সরকারের এই আদেশনামার বিরুদ্ধে ত্রিবাঙ্কুর দেবশ্যম বোর্ডের কর্মচারীদের একটি সংগঠন মামলাও করেছে তিরুবনন্তপুরম হাইকোর্টে। এই ঘটনাকে হাইকোর্টের বিচারপতিরা ‘সংগঠিত লুট’ বলে মন্তব্য করেছেন। ত্রাণ তহবিলে অর্থ জমা দেওয়ার বিষয়টি কর্মচারীদের স্বেচ্ছার বিষয় বলেই জানিয়েছেন তাঁরা। বেকায়দায় পড়ে এখন সরকার মূল আদেশটি সংশোধনের চিন্তাভাবনা করছে। চিকিৎসার কারণে মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন বর্তমানে আমেরিকায় রয়েছেন। চলতি সপ্তাহে তাঁর ফেরার কথা। আগামী সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে এনিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
জানা গেছে, কর্মীদের এক মাসের বেতন ও পেনশন বাবদ সরকারের কোষাগার থেকে ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা খরচ হয়। রাজ্যের এই বিপর্যয়ে সরকারি কর্মীরা তাঁদের এক মাসের বেতন বা পেনশন মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে জমা করবেন-এই আশায় মার্কিন মুলুকে পাড়ি দেওয়ার আগে অর্থ দপ্তরকে আদেশ বের করার নির্দেশ দিয়ে যান বিজয়ন। প্রায় চার হাজার কোটি টাকা এভাবে জোগাড় হয়ে গেলে পুনর্গঠনের কাজ অনেকটাই এগিয়ে নেওয়া যাবে বলে মনে করেছেন তিনি। গত সপ্তাহের গোড়ায় অর্থ দপ্তর ওই আদেশ বের করে। তাতে বলা হয়, যাঁরা এই টাকা দিতে চাইবেন না, তাঁদের সেই আপত্তির কথা বিভাগীয় কর্তাদের কাছে আগাম লিখিতভাবে জানাতে হবে। এই আদেশ বেরনোর পরই শুরু হয় শোরগোল। বিরোধীরা তো বটেই, সিপিএমের সমর্থক সরকারি কর্মচারী সংগঠনের সদস্যরাও অনেকে এই সিদ্ধান্ত মানতে পারেননি। এর মধ্যেই সরকার নিয়ন্ত্রিত ত্রিবাঙ্কুর দেবশ্যম বোর্ডের কর্মচারী সংগঠনের তরফে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করা হয়। এখন পরিস্থিতি বেগতিক দেখে সংশোধিত আদেশ বের করতে চাইছে রাজ্য সিপিএম।