তবে কি যা সন্দেহ করা হয়েছিল, আদতে তাই ঘটেছে? গত রবিবার ভোররাতে আগুন লেগেছিল কলকাতার বাগরি মার্কেটে। প্রথমদিন থেকেই থেকেই এই বাজারের দোকানদারদের একাংশ দাবি করে আসছিল যে এই অগ্নিকাণ্ডের নিছকই একটি দুর্ঘটনা নয়। দোকানদারদের উচ্ছেদ করার জন্যে রীতিমতো ছক কষে এই আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন সেই অন্তর্ঘাতের দাবিই আরও জোরালো হচ্ছে। কারণ প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ কর্তারা দেখেছেন, আগুন যাতে নেভানো না যায়, তার জন্য সমস্ত ব্যবস্থাই পাকা করে রাখা হয়েছিল। যেন কারও উদ্দেশ্যই ছিল, বাড়িটি পুড়িয়ে খাক করা। তারপর ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে বড়সড় শপিং মল বা রিয়েল এস্টেট তৈরি করা। এমন কোনও পরিকল্পনা আছে কি না, তা খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে। সেই কারণেই বাড়ির কেয়ারটেকার সহ একাধিক ব্যক্তিকে জেরা শুরু করেছেন অফিসাররা। অগ্নিকাণ্ডের কারণ কী, সেটাই এখন খুঁজে দেখার কাজ চলছে।
বুধবার তদন্তে নেমে বাজার লাগোয়া রাস্তার সিসিটিভি ফুটেজে যে দৃশ্য ধরা পড়েছে, তাতে বাগরি মার্কেটে আগুনের ঘটনায় ষড়যন্ত্রের তত্ত্বই ক্রমশ দৃঢ় হচ্ছে। মার্কেট লাগোয়া একটি ফুটপাতের স্টলে আগুন লাগার পর দুই যুবককে দৌড়ে এলাকা ছাড়তে দেখা গিয়েছিল। সিসিটিভি’র ফুটেজেই তা স্পষ্ট। তাঁদের সঙ্গেই দ্রুতগতিতে একটি বাইককেও চলে যেতে দেখা গিয়েছিল। ওই বাইকে ছিলেন দু’জন। এই ফুটেজ হাতে আসার পর অফিসাররা প্রথমে জানার চেষ্টা করেন, তাঁরা কারা। কোনওভাবে তাঁরা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত কি না, তাও জানার চেষ্টা চলে। ওই চারজনের পরিচয় মঙ্গলবার রাতে জেনেছেন তদন্তকারী অফিসাররা। জানা গিয়েছে, বাইক আরোহী দুই যুবকের নাম মহম্মদ সাজিদ ও সাকলিন। তাঁরা থাকেন ওই এলাকাতেই। তাঁদের জেরা করার পর পুলিশ জানতে পেরেছে, আগুন যখন লাগে, তখন তাঁরা ওই এলাকাতেই ছিলেন। সঙ্গে সঙ্গেই তাঁরা ঘটনাস্থলে যান। এরপর বাইকে করে দমকল অফিসে খবর দিতে যান। তাঁরাই প্রথম আগুনের খবর দেন দমকলকে। এই দু’জনের নাম ও ঠিকানা লিখে রাখা হয়। পরে যাচাই করে দেখা যায়, তাঁদের বয়ানে কোনও অসঙ্গতি নেই। তাঁরা পুলিশকে জানান, যে দুই যুবককে দৌড়তে দেখা গিয়েছে, তাঁরাও ওই এলাকারই ছেলে। তাঁদের এক আত্মীয়ের ডালা ছিল ওই বিল্ডিংয়ের সামনে। তাতে আগুন লেগে যায়। সেই খবর আত্মীয়ের বাড়িতে পৌঁছে দিতেই তাঁরা দৌড়চ্ছিলেন। তাঁদের সঙ্গেও কথা বলার পর অসংলগ্ন তেমন কিছু পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। তাহলে কে আগুন লাগালো এবং কীভাবেই বা লাগল, এই প্রশ্নের উত্তর জানা অত্যন্ত জরুরি।
এই কারণেই বিল্ডিংয়ে একসময়ের নিরাপত্তা রক্ষীদের জেরা করা শুরু হয়েছে। যাঁদের কিছুদিন আগেই ছাঁটাই করা হয়েছে। তাঁদের সঙ্গে কথা বলার পর জানা যাচ্ছে, বিল্ডিংয়ে আগুন লাগলে যাতে তা নেভানো না যায়, সেজন্য সমস্ত পরিকল্পনাই তৈরি করে রাখা হয়েছিল। তদন্তে উঠে আসছে, গেটের সামনে যে পাম্পটি ছিল সেটি পুড়ে গিয়েছিল। ভিতরে আর কোনও পাম্প নেই। রিজার্ভার থেকে উপরের ট্যাঙ্কে জল তোলার জন্য তাই কোনও ব্যবস্থা ছিল না। এই বিষয়টি জানার পরেও কেউ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। নিরাপত্তা রক্ষীরা ছাড়াও আরও কয়েকজনকে জেরা করা হয়েছে। যাঁরা এই বিল্ডিংয়ের বিভিন্ন কাজে যুক্ত। পাশাপাশি পলাতক বাগরির তিন মালিক রাধা বাগরি, বরুণরাজ বাগরি এবং কমলকৃষ্ণ কোঠারি গোপনে এই বাড়িটি হাতবদল করতে চেয়েছিলেন কি না, তাও খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে। একইসঙ্গে তাঁদের তিনজনকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।