লগ্নি টানতে জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টে এসেছেন তিনি। কিন্তু বাগরি মার্কেটের অগ্নিকাণ্ড নিয়ে উদ্বেগ পিছু ছাড়ছে না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। রবিবার পৌঁছনোর পর থেকেই কলকাতায় বার বার ফোন করে বিস্তারিত খোঁজখবর নিচ্ছেন। ফোন করেছেন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। সোমবার ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে ক্ষুব্ধ মমতা বলেন, ‘এত দাহ্য পদার্থ ওখানে রাখা ছিল! সঙ্গে নেলপলিশের রাসায়নিক! দমকল যাওয়ার মতো জায়গাই তো নেই!’ বস্তুত, বহুতল ওই বাজারের ব্যবসায়ীদের আরও ‘দায়িত্বশীল’ হওয়া উচিত ছিল বলে মনে করছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘শুনলাম বাথরুম পর্যন্ত বিক্রি হয়ে গেছে! সেখানে ব্যবসা চলছে। এসব হতে দেওয়া যাবে না। এসব বন্ধ করতে হবে।’ টাকার লোভে বিভিন্ন তলের সিঁড়ি, এমনকি বাথরুমও লিজ দিয়ে গোটা বাগরি মার্কেটকে ‘জতুগৃহ’ বানিয়েছিল পরিচালন কর্তৃপক্ষ। স্কোয়ার ফুট অনুযায়ী সিঁড়ি ও বাথরুমের দাম ধার্য করা হয়েছিল। লিজ গ্রহীতারা মার্কেটের সিঁড়ি এবং বাথরুমকে মালপত্র রাখার গুদাম হিসেবে ব্যবহার করতেন। বাগরি মার্কেটের অগ্নিকাণ্ড নিয়ে সোমবার নবান্নে মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে মন্ত্রিগোষ্ঠীর বৈঠকে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। বাগরি পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল নবান্নে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক বসেছিল। বৈঠকে ছিলেন পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মেয়র তথা দমকলমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়, পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের মন্ত্রী জাভেদ খান এবং আরও অনেকে। সেখানেই যে প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট পেশ করা হয়, তাতেই এ প্রসঙ্গের উল্লেখ ছিল। প্রাথমিক রিপোর্টে আরও কয়েকটি বিষয়ের উল্লেখ ছিল। রিপোর্টে বলা হয়েছে বাগরি মার্কেটের অনেক ব্যবসায়ীর প্রয়োজনীয় ট্রেড লাইসেন্স নেই। বাজারের বাইরে যে ব্যবসায়ীরা অস্থায়ী ডালা নিয়ে বসতেন, তাঁদের অনুমতি কে দিয়েছিল, সে বিষয়টিও রিপোর্টে আছে। অন্যদিকে, আজ বাগরি মার্কেট থেকে নমুনা সংগ্রহ করবেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। সোমবারও বিশেষজ্ঞরা বাগরি মার্কেটে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাপমাত্রা বেশি থাকার কারণে তাঁরা নমুনা সংগ্রহ করতে পারেননি।
ইতিমধ্যেই ৫৬ ঘন্টা কেটে গিয়েছে। তবু এখনও অগ্নিনির্বাপন বাগরি মার্কেট। এরই মধ্যে নতুন আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। তা হল বাড়ি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা। আগুনের তাপে ইতিমধ্যেই ধসে গিয়েছে তিনতলার একাংশ! গত রাতে ‘গেট ডি’-র কাছে একতলার একটি অংশের ছাদ ভেঙে পড়ে। এই অবস্থায় গোটা বাড়িটাই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়বে কি না, সেই আশঙ্কা দমকল ও পুলিশ আধিকারিকদের মনে। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত বাগরি মার্কেটের সব জায়গা থেকে দ্রাহ্য বস্তুও সরিয়ে নেওয়াও সম্ভব হয়নি। এদিন সকালেও দেখা গেল বিভিন্ন জায়গা থেকে বেরিয়ে আসছে আগুনের হলকা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন দমকল কর্মীরা। রয়েছেন পুলিশ ও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীরা।
সোমবার অগ্নিদগ্ধ বাগরি মার্কেট ঘুরে দেখে বাজারের মালিককে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছেন পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। আর সেই ঘোষণার পর থেকেই বেপাত্তা বাগরি মার্কেটের তিন মালিক রাধা বাগরি, বরুণরাজ বাগরি এবং মোহন বাগরি। আগুন লাগার পর থেকেই তাঁদের কোনও খোঁজ নেই। মার্কেটের অন্যতম মালিক রাধা বাগরির বালিগঞ্জ প্লেসের বাড়িতে হানা দিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু সেখানেও খোঁজ মেলেনি রাধা বাগরির। বাড়ির দ্বাররক্ষীকে জেরা করেও মেলেনি বাড়ির মালিকের কোনও সূত্র। আপাতত যেটুকু জানা যাচ্ছে, তাতে এটা পরিষ্কার যে বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থার নিশ্ছিদ্র করার চেষ্টা করেননি বাগরি মার্কেটের মালিকরা। জুলাই মাসে মেয়রের সঙ্গে তাঁরা বৈঠকে বসেছিলেন। সেই বৈঠকে তাঁদের সতর্ক করে ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া হয়। যদিও ফায়ার লাইসেন্স ছাড়াই দেওয়া হয় এই লাইসেন্স। যথোপযুক্ত অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা তৈরি করে ফায়ার লাইসেন্স নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল বাগরিদের। কিন্তু সেসবের কিছুই করেননি তাঁরা।