লগ্নি টানতে জার্মানির ফ্র্যাঙ্কফুর্টে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তাঁর মন পড়ে আছে রাজ্যেই। বাগরি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ড নিয়ে উদ্বেগ পিছু ছাড়ছে না তাঁর। বারবার ফোন করে খবর নিচ্ছেন আগুন নিভলো কিনা। দুপুরের দিকে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানালেন, আগুন এখন নিয়ন্ত্রণে। সেই ফোন পেয়ে কিছুটা স্বস্তি পেলেন মুখ্যমন্ত্রী।
বিদেশে এসেও রোজকার রুটিন বদলাননি। সকাল ১০ টা নাগাদ প্রাসাদোপম কেনেডি হোটেল থেকে বেরিয়ে হাঁটতে শুরু করলেন। টানা ১১ কিলোমিটার। পাল্লা টানতে গিয়ে তাঁর সঙ্গের প্রতিনিধিদল কার্যত ছুটছেন। এর মাঝে একবার বিরতি। ‘টেডি প্যারাডাইস’ কফি শপে বসে গলা ভেজালেন ক্যাপুচিনোতে। তারপর আবার হাঁটা। এর ফাঁকেই চোখ যায় এক পথ শিল্পীর দিকে। মিকি মাউস সেজে আর্কেডিয়ানে সুর তুলছেন তিনি। দাঁড়িয়ে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রথমে শুনলেন কিছুক্ষণ। তারপর নিজেই বাজাতে চাইলেন। মিকি মাউস তো খুব খুশি। বাড়িয়ে দিলেন আর্কেডিয়ান। পরম মমতায় একবার আর্কেডিয়ানের গায়ে হাত বোলালেন মুখ্যমন্ত্রী। তারপর শুরু করলেন বাজানো। ঝড়ের গতিতে আঙুল চললো আর্কেডিয়ানের রিডে। বেজে উঠল ‘উই শ্যাল ওভারকাম’। বাজনা শেষ হতেই চারদিকে হাততালি। মমতার সুর ছুঁয়ে গেছে সবাইকে। এবার হোটেলে ফেরার পালা।
কন্যাশ্রী, যুবশ্রী, ১০০ দিনের কাজে পশ্চিমবঙ্গের সাফল্য নিয়ে প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনা করতে করতে হালকা মেজাজেই হাঁটতে হাঁটতে হোটেলে ফিরছিলেন মমতা। কিন্তু জাতীয় রাজনীতি তথা আগামী লোকসভা ভোটের প্রসঙ্গ উঠতেই চোয়াল শক্ত। বলেন, ‘জনপ্লাবন চাই, গণপ্লাবন চাই। কে প্রধানমন্ত্রী হবে, পরে ঠিক করা যাবে। প্রধান লক্ষ্য, আগে বিজেপিকে হটানো। কৃষক, সংখ্যালঘুরা ভয়ে ভয়ে রয়েছেন। বলুন তো, এনআরসি নিয়ে কীসব হচ্ছে!’ জাতীয় রাজনীতির পাশাপাশি তাঁর মন যে বাগরি মার্কেটের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডেও পড়ে রয়েছে, তাও জানাতে ভোলেননি। বলেন, ‘বাথরুম বিক্রি করেছে কোন অধিকারে? ১০০ বছর ধরে এরকম চলছে। কেউ দেখেনি!’
প্রথমে ২০১৬ সালে মিউনিখ। তারপর কলকাতা এবার ফ্র্যাঙ্কফুর্ট। পশ্চিমবঙ্গে সেই বানিজ্যলাভেই এবার মুখ্যমন্ত্রীর বিদেশ সফর। প্রথমবার মিউনিখে গিয়ে জার্মান বিনিয়োগকারীদের কাছে বাংলায় শিল্পায়নের দরজা খুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী। সেবার যথেষ্ট সাড়া ফেলেছিল। যার জেরে গতবছর বিশ্ববাণিজ্য সম্মেলনে যোগ দিতে এসেছিলেন ৩২ টি দেশের প্রতিনিধিরা। ছিলেন জার্মানি এবং ইতালির শিল্পপতিরাও। আজ মঙ্গলবার ফ্যাঙ্কফুর্টের জুমেইরা হোটেলে আয়োজিত শিল্প সম্মেলনে সেই বক্তব্যই তুলে ধরবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানা গিয়েছে, প্রথমে শিল্পসংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে ওয়ান-টু-ওয়ান বৈঠক হবে। তারপর বক্তব্য পেশ করবেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনিই প্রধান বক্তা। তারপর বাণিজ্য সম্মেলনের শিল্পপতিরা তাঁদের বক্তব্য তুলে ধরবেন সম্মেলনে। সেখানে থাকবেন জার্মানির মূল তিনটি বণিকসভার শীর্ষকর্তারা। আইএইচকে’র তরফে থাকবেন ম্যানেজিং ডিরেক্টর জার্গান র্যা টিনজার, ডুসেলডর্ফের ইন্দো-জার্মান চেম্বার অব কমার্সের ডিরেক্টর ডার্ক ম্যাটার এবং ভিডিএমএ’ তরফে উপস্থিত থাকবেন অলিভার ওয়্যাক। জার্মানিতে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত মুক্তা দত্ত তোমর এবং কনসাল জেনারেলও উপস্থিত থাকবেন। আমন্ত্রিত সংস্থার সিইও’রা এই শিল্প সম্মেলনে বক্তব্য রাখবেন বলেও জানা গিয়েছে।
অর্থমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর সফরসঙ্গী ডঃ অমিত মিত্র বলেন, ‘প্রথম সারির শিল্পপতিরা সম্মেলনে বক্তব্য পেশ করবেন। আমাদের শিল্পোদ্যোগীদের সঙ্গে পারস্পরিক আলোচনা হবে। এর সুফল মিলবে বলেই আশা করছি আমরা।‘