স্মার্টফোনের এই যুগে মোবাইল গেমগুলো দিন দিন খুবই জনপ্রিয়তা লাভ করছে। মানুষ কম্পিউটার গেমের পাশাপাশি আজকাল এসব মোবাইল গেমের প্রতি ঝুকছে। গেমস পছন্দ করে না এমন কাউকে হয়তো বর্তমানে খুঁজে পাওয়া যাবে না। কোনো কাজ কিংবা পড়াশোনার ফাঁকে কিছুক্ষণের জন্য গেমের জগতে হারিয়ে যেতে কার না ভালো লাগে! গত কয়েক বছরে তাই নানা রকম নানা ধাঁচের মোবাইল গেম তৈরি হয়েছে। রেসিং, শুটিং, রোল প্লেয়িং কিংবা পাজল গেমসের মতো নানা গেম তৈরি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তবে এসব গেম খেলে বিনোদন ছাড়া আপনার তেমন কোনো উপকার কিন্তু হচ্ছে না। কেমন হয় যদি আপনি অবসর সময়ে গেম খেলে বিনোদনের পাশাপাশি নিজের মস্তিষ্কটিকেও একটু ঝালিয়ে নিতে পারেন?
হ্যাঁ, সাধারণ মোবাইল গেমের পাশাপাশি এমন কিছু গেম রয়েছে যেগুলো আপনার মস্তিষ্কের কর্মদক্ষতা বাড়ানোর জন্য বিশেষ ভাবে তৈরি করা হয়েছে। এগুলোকে বলা হয় ‘ব্রেইন ট্রেইনিং গেমস’। এ গেমগুলো আপনাকে দ্রুত ভাবতে, সিদ্ধান্ত নিতে কিংবা আপনার স্মরণশক্তি বাড়াতে সাহায্য করবে। অবসর সময়ে আপনি এসব গেম খেলে যেমন মজা পাবেন তেমনি আপনার মস্তিষ্কটিকে করে নিতে পারবেন চাঙ্গা।
পিক (Peak)
‘ব্রেইন ট্রেইনিং গেমস’ এর কথা বলতে গেলে সবার প্রথমেই আসে পিকের নাম। ২০১৬ সালে গুগল কর্তৃক সেরা অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ পুরস্কার পাওয়া এই গেমটি আপনার মস্তিষ্কের কর্মদক্ষতা বাড়াতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে এটি আপনার স্মৃতি, মানসিক দক্ষতা, কোনো সমস্যা সমাধান করার ক্ষমতা, আপনার মনোযোগ ও যোগাযোগের ক্ষমতাকে বাড়াতে সাহায্য করে।
নানা ধরনের প্রায় ৪০টির বেশি মিনি গেম রয়েছে পিকে। এর প্রত্যেকটি গেমই অনেক মজার। পিকের প্রত্যেকটি গেম নির্মাণেই কাজ করেছেন একদল স্নায়ুবিজ্ঞানী। গেমটি নির্মাণে তাদের মূল লক্ষ্য ছিল গেমিং ও মস্তিষ্কের দক্ষতা বাড়ানো এ দুটি যেন এক সাথে করা যায়। আর তারা এ দুটোকে একসাথে এনেছেন পিকের মাধ্যমে। পিকের প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে রয়েছেন ইয়েল স্কুল অফ মেডিসিনের অধ্যাপক ব্রুস ই. ওয়েক্সলার এবং কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর বারবারা সাহাকিয়ান। পিকের মজার মিনি গেমগুলো নানা রকম ধাঁধাঁ ও মজার পাজলের মাধ্যমে আমাদের মস্তিষ্কের কর্মদক্ষতাকে বাড়াতে সাহায্য করে। পিক সম্পর্কে গার্ডিয়ান পত্রিকাতে বলা হয়,
পিকের সবচেয়ে চমৎকার বৈশিষ্ট্য হলো এর কোচ বা ‘ব্যক্তিগত প্রশিক্ষক’। এটি পিকের ব্যবহারকারীদের সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি করতে দেয়। আর এসব মস্তিষ্কের অনুশীলন বা কাজটি করার পর আপনি আগের থেকে ঠিক কতটুকু উন্নতি করেছেন সেটাও জানিয়ে দেয় পিক। ফলে নিজের মস্তিষ্কের কর্মদক্ষতার একটা ধারণা পান পিকের ব্যবহারকারীরা।
চমৎকার এই গেমটি খেলা যাবে আইফোন ও অ্যান্ড্রয়েড ফোনগুলোতে।
এলিভেট (Elevate)
সেরা ব্রেইন ট্রেইনিং গেমগুলোর মধ্যে বহু আগে থেকেই এলিভেট তার নিজস্ব অনন্য বৈশিষ্ট্যগুলোর জন্য ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। ২০১৪ সালে এটি অ্যাপলের ‘অ্যাপ অফ দ্য ইয়ার’ পুরষ্কার পায়। এছাড়াও গুগল প্লেস্টোরে ‘এডিটরস চয়েস’ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে এটি। এ পর্যন্ত ১৫ মিলিওনের বেশি বার এই গেমটি ডাউনলোড করেছে গোটা বিশ্বের মানুষ। সুতরাং বুঝতেই পারছেন ব্রেইন ট্রেইনিং গেম হিসেবে এলিভেট কতটা জনপ্রিয়।
জনপ্রিয় এই গেমটিতে রয়েছে নানা চমৎকার ফিচার। এটি মূলত ৫টি ভাগে কাজ করে। এর ভাগগুলো হলো- Listening, Writing, Reading, Speaking এবং Math। এর প্রত্যেকটি ভাগেই অনেকগুলো মজার খেলা ও ধাঁধাঁর মুখোমুখি হতে হয় ব্যবহারকারীকে। সময়ের সাথে সাথে গেমটি সহজ থেকে ক্রমাগত কঠিন হতে থাকে।
এলিভেটকে এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে আপনি কাজের ফাঁকে, বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় কিংবা যেকোনো অবসর সময়েই এটি খেলতে পারেন। নানা গবেষক ও প্রশিক্ষকদের সহায়তায় এই গেমটি নির্মাণ করা হয়েছে। এক জরিপে দেখা যায়, যারা এলিভেট নিয়মিত ব্যবহার করেন তাদের ব্যাকরণ, লেখার ও শোনার দক্ষতা যারা এটি ব্যবহার করেন না তাদের থেকে ৬৯% বেশি। তাই আপনিও আপনার দক্ষতা বাড়াতে চাইলে ডাউনলোড করে নিন গেমটি।
এলিভেট আইফোন ও অ্যান্ড্রয়েড উভয় ফোনেই ব্যবহার করা যায়।