নেতাজির আদর্শই আমার আদর্শ। কখনও আমি তা থেকে বিচ্যুত হব না। প্রয়োজনে বিজেপি ত্যাগ করব। দলের রাজ্য নেতৃত্ব সম্পর্কে বীতশ্রদ্ধ হয়ে শুক্রবার এমনই বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ভাতুষ্পুত্র চন্দ্র বসু। প্রসঙ্গত, চন্দ্রবাবু এর আগে রাজ্য নেতৃত্বের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহকে চিঠি দিয়েছিলেন। রাজ্য বিজেপি’র অন্যতম এই সহ-সভাপতির দলবিরোধী কথা নিয়ে এর আগে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে নালিশ করেছেন রাজ্যের নেতারা। যা নিয়ে দলের মধ্যে তীব্র চাপানউতোর চলছিলই। শুক্রবার দলের রাজ্য কমিটির বৈঠকে চন্দ্রবাবুর গরহাজিরা নিয়েও জোর গুঞ্জন শুরু হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে বসু পরিবারের এই সদস্য বলেন, এই ধরনের বৈঠকে স্ট্যাচু হয়ে বসে থাকার জন্য বিজেপিতে যোগ দেইনি। ওখানে সব বাজে আলোচনা হয়। তাঁর অভিযোগ, রাজ্য বিজেপিতে এখন জোর গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চলছে। দিলীপ ঘোষ, রাহুল সিনহা, মুকুল রায়, আশিস সরকার সহ একাধিক নেতার আলাদা আলাদা গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে দলের ভিতরেই। এভাবে চলতে থাকলে আগামী ৩০ বছরেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ক্ষমতা থেকে হটানো যাবে না।
যদিও এ প্রসঙ্গে দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিনহা কেউই মন্তব্য করতে রাজি হননি। বিজেপির রাজ্য কমিটির এক নেতার কথায়, চন্দ্র বসু সোশ্যাল মিডিয়ায় যেভাবে দলবিরোধী কথা বলেন, তা শৃঙ্খলাভঙ্গের শামিল। ওঁর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। দলের সহ-সভাপতি হওয়া সত্ত্বেও কোনও সাংগঠনিক বিষয়ে ওনার পরামর্শ কিংবা উপস্থিতি মেলে না। শুধু বেফাঁস মন্তব্য করে দলের অস্বস্তি বাড়ানোই ওনার কাজ। ওই নেতার দাবি, দিল্লির তরফে এই মুহূর্তে চন্দ্রবাবুকে গুরুত্ব না দেওয়ারই পরমার্শ দেওয়া হয়েছে। আমরা সেটাই করছি। ২০১৯ সালের ভোট মিটলে এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ওই নেতা বলেন, ২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটে কলকাতার এক সভায় অমিত শাহের উপস্থিতিতে চন্দ্র বসু সিপিএমকে ভোট দেওয়ার আহ্বান করেছিলেন। শুধু তাই নয়, পঞ্চায়েত ভোটের আগে কিংবা পরে কঠিন লড়াইয়ে তাঁর টিকি দেখা যায়নি। সোশ্যাল মিডিয়ায় বড় বড় কথা না বলে নেতাজির ভাইপোকে বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে রাজনীতি করার পরামর্শ দিয়েছেন ওই নেতা।
জবাবে চন্দ্র বসু বলেন, কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে গিয়ে বিজেপি’র মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ইয়েদুরাপ্পাকে চরম দুর্নীতিগ্রস্ত বলে মন্তব্য করেছিলেন অমিত শাহ। দলের সর্বভারতীয় সভাপতি ভুলবশত এই মন্তব্য করেছিলেন। একইভাবে তিনি ভুল করে সিপিএমকে ভোট দেওয়ার কথা বলেছিলেন। তাঁর অভিযোগ, বিজেপি’র রাজ্য নেতৃত্ব কোনও বিষয়ে তাঁকে ডাকে না। পরামর্শ তো দূরের কথা, আলোচনা করার সৌজন্যও দেখায় না। এরকমই চলতে থাকলে তিনি বিজেপি ত্যাগ করতেও রাজি বলে জানান। তার কথায়, নেতাজির আদর্শেই দীক্ষিত আমি। এভাবে বারবার রাজ্য নেতৃত্বের দ্বারা অসম্মানিত হতে থাকলে, মাথা উঁচু করেই দলত্যাগ করব।