‘গণেশ চতুর্থী অত্যন্ত পবিত্র দিন। সে দিনই দ্বিতীয় দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের ভিত্তপ্রস্তর স্থাপন হল। নতুন কাজ শুরু করার জন্য এর চেয়ে শুভ দিন আর কী হতে পারে?’ গবেষক ও আগামী দিনের বিজ্ঞানীদের সামনে এ ভাবেই গণেশের মাহাত্ম্য প্রচার করলেন কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী হর্ষবর্ধন। এখানেই শেষ নয়। বারুইপুরের শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী অ্যাডভান্সড রিসার্চ ও ট্রেনিং (স্মার্ট) সেন্টারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উপলক্ষ্যে যাদবপুরে দেশের অন্যতম প্রাচীন গবেষণাকেন্দ্র ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স -এর মূল ক্যাম্পাস আয়োজিত অনুষ্ঠানে রীতিমত পুজোপাঠ ও হোমযজ্ঞ করেন। নারকেল ফাটিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনাও করেন। প্রসঙ্গত, মঞ্চেই একটি কাগজে গণেশের অবয়ব এঁকে, নিজেই পুজো শুরু করে দেন তিনি। তবে, পিছিয়ে থাকেননি প্রতিষ্ঠানের অধিকর্তা, শান্তনু ভট্টাচার্য। তাঁর গলাতেও প্রায় একই সুর। তিনি বলেন, গণেশ চতুর্থীর মত শুভদিনে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ শুরু খুবই ইতিবাচক। হর্ষবর্ধনের পরিচয় দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ছোট থেকেই উনি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের সঙ্গে যুক্ত। দীর্ঘদিন ধরে সঙ্ঘের প্রচারক।’ বস্তুত, ভবিষ্যতের বিজ্ঞানীদের তুলনায় মন্ত্রীর জীবনপঞ্জীর বর্ণনা দিতেই বেশি তৎপর ছিলেন তিনি।
হর্ষবর্ধন বলেন, ‘ভগবান গণেশ শুভবুদ্ধির দেবতা। যে কোনও কাজ এমন শুভদিনেই করা উচিত। গণেশ চতুর্থীর আশীর্বাদ নিয়ে এই কাজ শুরু হয়েছে। তাই নির্ধারিত সময়েই এই কাজ শেষ হয়ে যাবে।’ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী এবং আইএসিএস- এর অধিকর্তার মুখে গণেশ বন্দনা শুনে, চোখ কপালে উঠেছে বৈজ্ঞানিক মহলের। এই ঘটনায় বিস্মিত বিজ্ঞানী বিকাশ সিনহা। তিনি বলেন, ‘প্রথিতযশা বিজ্ঞানী মহন্দ্রলাল সরকারের হাতে গড়া বিজ্ঞান সাধনার ক্ষেত্রে এ ভাবে যুক্তিবাদকে সরিয়ে গণেশ, ভগবানস্তুতি ও পুজোপাট কোথা থেকে এল, সেটাই বুঝতে পারছি না। মানুষের নিজস্ব ধর্মীয় বিশ্বাস থাকতেই পারে। কিন্তু বিজ্ঞান সাধনার প্রতিষ্ঠানে সে বিশ্বাস না আনাই বাঞ্চনীয়। এটা আমায় পীড়া দেয়।’
অন্যদিকে, প্রশ্নোত্তর পর্বে সিএসআইআর-নেট উত্তীর্ণ গবেষকরা ফেলোশিপের টাকা মিলছে না বলে অভিযোগ জানান কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কাছে। গবেষকরা জানান, গত বছর জুন ও ডিসেম্বরে পাশ করেও জেআরএফ- এর টাকা পাচ্ছেন না তাঁরা। এই অবস্থা কেন? সেই বকেয়া অর্থ মিলবে কবে? কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। ফলে রীতিমত অসন্তোষ প্রকাশ করেন গবেষকরা। অবস্থা সামাল দিতে, হর্ষবর্ধন এক সময় বলে ওঠেন, ‘এটা খুবই সামান্য সমস্যা। এ ব্যাপারে আমার কী-ই বা বলার আছে?’ তখনই দেবদত্তা হালদার নামে আইসিএস- এর এক গবেষক হর্ষবর্ধনের অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘স্যার এটা শুধু কলকাতার সমস্যা নয়। সারা দেশের সমস্যা।’ মন্ত্রীকে এমন বিড়ম্বনায় পড়তে দেখে তড়িঘড়ি আসরে নামেন কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব আশুতোষ শর্মা। তিনি গবেষকদের বলেন, ‘আপনারা আপনাদের সমস্যার কথা জানিয়ে ডিজি সিআইএসআর-কে মেল করুন’। খোদ মন্ত্রী উপস্থিত থাকতে আলাদা করে ডিজি সিআইএসআর-কে জানাতে হবে কেন, তার কারণ অবশ্য জানাননি তিনি। অন্য এক গবেষক আবার এর মাঝেই জানতে চান, এই অবস্থায় তাঁদের ভবিষ্যৎ কী? কিন্তু বর্তমানে গণেশ পুজো নিয়ে মেতে থাকা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কাছে গবেষকদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনও উত্তরই ছিল না। বরং ততক্ষণে তাল কেটে গেছে গণেশ চতুর্থীর।