বোমা ফাটালেন লিকার ব্যারন। ৯ হাজার কোটি টাকার দেনা শোধ না করেই দেশ ছেড়ে পালান বিজয় মালিয়া। তবে পালাবার আগে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির সঙ্গে দেখা করেছিলেন তিনি। বাকি ধার দেনা না-কি শোধ করতেও চেয়েছিলেন। কিন্তু ব্যাংকগুলি রাজি হয়নি। লণ্ডনের ওয়েস্টমিনিস্টার চত্বরে দাঁড়িয়ে এমনই বিস্ফোরক দাবি করলেন বিজয় মালিয়া। উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘জেনিভায় আগে থেকেই জেটলির সঙ্গে বৈঠক নির্ধারিত ছিল। সেই বৈঠকে যোগ দিতেই দেশ ছাড়ি। এটাই সত্যি’।
২০১৬ সালে বিজয় মালিয়া ভারত ছাড়েন। তারপর আর মালিয়ার নাগাল পায়নি ভারত সরকার। বলা চলে দীর্ঘদিন আত্মগোপন করে ছিলেন তিনি। পরে লন্ডনে একটি ক্রিকেট ম্যাচ চলাকালীন স্টেডিয়ামে ছেলের সঙ্গে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। ততদিনে ভারত সরকারের হাতের নাগাল থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। লন্ডনের নাগরিকত্ব নিয়ে দিব্যি খোস মেজাজে রয়েছেন।
জেটলি কিন্তু সপাটে মালিয়ার এই বিস্ফোরক দাবিকে ভুয়ো বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। বিবৃতি জারি করে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন দেশ ছাড়ার আগে বিজয় মালিয়া তাঁর সঙ্গে কোনও বৈঠক করেনি। ২০১৪ সাল থেকে বিজয় মালিয়ার সঙ্গে তাঁর কোনও সাক্ষাৎই হয়নি। জেটলি বলেন, মালিয়ার সঙ্গে এক বার সাক্ষাত হয় সংসদ চত্বরে। রাজ্যসভার সদস্য হওয়ার সুবাদে বিজয় মালিয়া ভবনের করিডোরে সাক্ষাতের সুযোগ নেয়। বোঝাপড়ার জন্য কিছু কথা তিনি বলতে চেয়েছিলেন। আমি কথা বাড়াইনি। সরাসরি বলেছিলাম, আমার সঙ্গে নয়, যা বলার ব্যঙ্ককে গিয়ে বলুন। তাঁর হাতে যে কাগজপত্র ছিল সেগুলোও আমি নিইনি’।
বিজয় মালিয়ার এমন বিস্ফোরক মন্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই দেশ জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। চরম অস্বস্তিতে পড়েছে বিজেপি। তড়িঘড়ি সাংবাদিক বৈঠক ডেকে ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামেন অরুণ জেটলি। কিন্তু ততক্ষণে যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গেছে। দেশ জুড়ে সমালোচনা এবং অর্থমন্ত্রী ঘটনার কথা অস্বীকার করায় সুর নরম করতে বাধ্য হন বিজয় মালিয়া। বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে অযথা বিতর্ক হচ্ছে। কারণ জেটলির সঙ্গে আমার আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়নি। অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে হঠাৎ দেখা হয়ে গিয়েছিল মাত্র’। তবে মালিয়া সুর নরম করলেও ততক্ষণে তাঁর বক্তব্যের সূত্র ধরে মোদী সরকারের তুমুল সমালোচনা শুরু করে বিরোধীরা। বলা হতে থাকে, কালো টাকা নিয়ে মালিয়াকে বিদেশে পালাবার সুযোগ করে দিয়েছে এনডিএ সরকার। কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিঙভি বলেন, ‘আমরা ১৮ মাস ধরে এই অভিযোগই করে আসছি, বিজয় মালিয়া, নীরব মোদী, মেহুল চোকসির মতো ঋণখেলাপিদের বিদেশে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে বিজেপি’। সিপিআইএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি জানিয়েছেন, ‘তাদের লুট করতে সরকার সাহয্য করেছে। এ বিষয়ে সরকারে দায়িত্ব নেওয়া উচিত’ ।অরবিন্দ কেজরিওয়াল বিজেপিকে আক্রমণ করে বলেন, অরুণ জেটলির সঙ্গে বিজয় মালিয়া যদি বৈঠক করে থাকেন তাহলে সে কথা নিশ্চয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জানতেন।
প্রসঙ্গত, দেউলিয়া হয়ে যাওয়া কিংফিশার এয়ারলাইনের কর্ণধার বিজয় মালিয়ার বিরুদ্ধে ৯ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ খেলাপের অভিযোগ ওঠে। ২০১৬ মার্চ মাস থেকে দেশ ছাড়া হয় বিজয় মালিয়া। কিংফিশার এয়ারলাইন্সকে বাঁচাতে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক থেকে প্রায় ৯৯৯০ কোটি টাকার ঋণ নেন বিজয় মালিয়া। ডেবিট রিকভারি ট্রাইবুন্যাল নয়া নির্দেশ অনুযায়ী ইতিমধ্যে ১১.৫ শতাংশ সুদ-সহ আরও ৬,২০৩ কোটি টাকা মেটাতে হবে বিজয় মালিয়াকে।