রেশনে খাদ্যদ্রব্যের ওজন আর গুণগতমানে দুর্নীতি ধরা পড়লে এবার থেকে রেশন ডিলারদের বহিষ্কার করা হবে বলে স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিলেন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। রাজ্যের ‘খাদ্যসাথী’ প্রকল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে গতকাল, মঙ্গলবার কাঁথি মহকুমার কচুড়িতে খাদ্য নিয়ামকের নবনির্মিত কার্যালয় (খাদ্য ভবন) উদ্বোধন করতে এসেছিলেন খাদ্যমন্ত্রী। এদিন কাঁথির খাদ্য ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকেই মন্ত্রী হলদিয়া ও এগরা খাদ্য ভবনেরও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের পরিবহণ ও পরিবেশ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, জেলার দুই সাংসদ শিশির অধিকারী ও দিব্যেন্দু অধিকারী, এগরা ও হলদিয়া পুরসভার দুই চেয়ারম্যান শঙ্কর বেরা, শ্যামল আদক, বিধায়ক অখিল গিরি, জ্যোর্তিময় কর, বনশ্রী মাইতি, রণজিৎ মণ্ডল, ফিরোজা বিবি-সহ রাজ্য ও জেলা খাদ্য দপ্তরের বিভিন্ন অধিকারিকরা।
কোলাঘাটের বলাকা মঞ্চে খাদ্যমন্ত্রী এদিন সাংবাদিক বৈঠকে স্পষ্ট বলেন, ‘রেশনের চালের গুণগত মান নিয়ে কোনওভাবে আপোস করবে না খাদ্য দপ্তর। মুখ্যমন্ত্রী খুব কষ্টে গরিব মানুষকে ২ টাকা কেজিতে চাল দিচ্ছেন। খাদ্য দপ্তরের জন্য বরাদ্দকৃত ৮ হাজার ৩৯ কোটি টাকার মধ্যে শুধুমাত্র রেশনের চাল, গমের জন্যই খরচ করা হচ্ছে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা। সেই চাল নিয়ে কোনও ব্যবসা করা যাবে না।’ রেশন-দুর্নীতি রুখতে এবার থেকে ১০০টি ভিজিল্যান্স টিম রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে চালের মান খতিয়ে দেখবে বলেও জানান মন্ত্রী। বলেন, ‘এই টিম সাদা পোশাকে কখন, কোথায়, কীভাবে হানা দেবে কেউ জানবে না। মূলত ডিস্ট্রিবিউটরের গুদামে, রেশন দোকানে এবং রাইস মিলে হানা দেবে টিম।’ গ্রাহকদের হয়রানি কমাতে খাদ্য দপ্তর এবার থেকে ৫ হাজার গ্রাহক পিছু একটি করে রেশন দোকানের অনুমোদন দেবে বলেও জানান মন্ত্রী। ২৬ শতাংশ ছাড়ে রেশন দোকানে সাবান, তেল, মশলা, হরলিকস থেকে শুরু করে ৬০০ প্রোডাক্ট বিক্রির কথাও এদিন ঘোষণা করেন তিনি। রেশন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর পাশাপাশি কৃষকদের ক্ষেত্রে ধান কেনার অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে খাদ্য দপ্তর। এবার ধান বিক্রি করতে হলে কৃষকের যাবতীয় তথ্য রেজিস্ট্রেশন করাতে হবে। রেজিস্ট্রেশন করালে একটি কার্ড পাবেন কৃষকরা। সেই কার্ড দেখিয়ে সহজে সরকারি ধান ক্রয়কেন্দ্রে সরকারি দামে ধান বিক্রি করা যাবে। মন্ত্রী বলেন, ‘এবার আরও বেশি ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে খাদ্য দপ্তর। গত বছর আমরা ৩৫ লক্ষ মেট্রিক টন ধান কিনেছিলাম। এবার বেশি ধানের পাশাপাশি দামও বাড়ানো হয়েছে। ধান বিক্রির টাকা সরাসরি কৃষকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে যাবে।’
কালোবাজারি ও বেনিয়ম রুখতে খাদ্য দফতর কতটা মরিয়া, তা বোঝাতে এদিন খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এবার থেকে প্রতিটি জেলায় খাদ্য দফতরের পক্ষ থেকে টোল ফ্রি নম্বর চালু করা হবে।’ তিনি জানান, রেশন ডিলারদের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের অভিযোগ মাঝেমধ্যেই উঠছে। সে ক্ষেত্রে কোনও বেনিয়ম দেখলে এই নম্বরে ফোন করে অভিযোগ জানানো যাবে। পাশাপাশি, ধান বিক্রি করতে না পারা বা ধান বিক্রির পর সঠিক দাম না পাওয়ার অভিযোগও উঠছে। সে ক্ষেত্রেও এই টোল ফ্রি নম্বরে ফোন করে অভিযোগ জানানো যাবে। খাদ্যমন্ত্রী জানান, এই কাজের জন্য প্রায় দশ হাজার স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে নিয়োগ করা হবে।