পুজোর আগেই মাঝেরহাটের বিকল্প পথ তৈরি করতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। ভেঙে পড়া মাঝেরহাট সেতুর দুপাশের রাস্তাকে খালের ওপর কালভার্ট বানিয়ে জুড়ে এবং রেললাইনে লেভেল ক্রশিং তৈরি করে ওই পথে যান চলাচলের পরিকল্পনা নিয়েছে প্রশাসন। পুজোর আগেই বিকল্প এই পথ খুলে দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
মাঝেরহাট ব্রিজ ভেঙে বিপর্যস্ত দক্ষিণ শহরতলির বিস্তীর্ণ এলাকার যান চলাচল। বিভিন্ন পথে যান ঘুরিয়ে দিয়েও ব্যস্ত সময় যানজট এড়াতে হিমশিম খাচ্ছে পুলিস। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে নতুন পথ বের করল রাজ্য সরকার।
মাঝেরহাট সেতুর নিচে পাশ বরাবর-দু দিকে রাস্তা রয়েছে। মাঝে রেললাইন আর খাল। সেই অংশে কোনও রাস্তা নেই। খালের ওপর কালভার্ট করে সেই রাস্তা দুটি চওড়া করে, রেল লাইনের অংশেও পাকা রাস্তা তৈরি করা হবে। রেল লাইনের দু-দিকে হবে লেভেল ক্রশিং। সেই পথ দিয়ে গাড়ি চলবে। এরফলে ডায়মন্ডহারবার রোড ধরে তারাতলা থেকে মোমিনপুরের দিকে যেতে পারবে বেশকিছু যানবাহন। বিকল্প পথ তৈরি করতে ইতিমধ্যেই রেলের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে রাজ্য। সোমবার এনিয়ে রেলের সঙ্গে রাজ্য সরকারের বৈঠকের হওয়ার কথা। রেলের সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে কাজটা করবে রাজ্যের পূর্ত দপ্তর।
এদিকে ২০ চাকার পণ্যবাহী যানের পাশাপাশি কলকাতার ৪টি গুরুত্বপূর্ণ সেতুর ওপর ছোট পণ্যবাহী যান চলাচলও বন্ধ করে দিল কলকাতা পুলিস। যতদিন না ওই ব্রিজগুলি মেরামত করার কাজ শেষ হচ্ছে, ততদিন ছোট–বড় কোনও পণ্যবাহী যানই সেগুলির ওপর দিয়ে যাতায়াত করতে পারবে না। কলকাতার নগরপাল রাজীব কুমার বলেন, ‘মাঝেরহাট ব্রিজ ভেঙে পড়ায় কলকাতা ও কলকাতার আশপাশের এলাকার মানুষের যে সমস্যা হয়েছে, তা দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। বিকল্প পথের সন্ধান করা হচ্ছে। ২ থেকে ১ দিনের মধ্যে সমস্যা মিটে যাবে।’
আপাতত বিকল্প পথ হিসেবে গার্ডেনরিচ সেতুও ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছেন নগরপাল। এতে বেহালা যেতে গেলে কিছুটা ঘুরপথে যেতে হবে। সেখানে যে রাস্তাগুলি খারাপ আছে, সেগুলি দ্রুত সারানোর ব্যবস্থা হচ্ছে। গার্ডেনরিচ রোডেও মেরামতি চলছে। ওই ঘুরপথে তারাতলা থেকে খিদিরপুর যাওয়ার দূরত্ব কিছুটা বেড়েছে। ফলে সময়ও একটু বেশি লাগছে। নগরপালের কথায়, ‘শহরবাসীরা যাতে নিরাপদে সুস্থ-স্বাভাবিক পথ দিয়ে যাতায়াত করতে পারেন, সেজন্য সরকারের সমস্ত সংস্থা দিনরাত পরিশ্রম করছে। বিকল্প পথে যাতায়াতের অভ্যাস হতে একটু সময় লাগবে।’ তিনি জানান, মাঝেরহাট সেতুতে উদ্ধারকাজ শেষ। এখন ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ চলছে। এখন ঘটনার পেছনে কে বা কারা, সেই তদন্তে জোর দেওয়া হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার বিকেলে ভেঙে পড়ে মাঝেরহাট সেতু। এতে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে বেহালা-সহ দক্ষিণ শহরতলির বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের। বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে খিদিরপুর ডক থেকে কন্টেনারবাহী যান চলাচলও। পরিস্থিতি সামাল দিতে হাইড রোড-সহ বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে যান ঘুরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন পুলিশ কর্তারা। কিন্তু তাতে লাভের লাভ হয়নি। ওদিকে ভেঙে পড়া মাঝেরহাট সেতুরও খুব তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা কম। তাই পুজোর আগে এভাবেই বিকল্প পথ তৈরি করতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার।