এবারের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে, মাস্টার ব্লাস্টার শচীন রমেশ তেণ্ডুলকরকে সাম্মানিক ডিলিট দিতে চায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত নিয়ামক এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সমাজের অন্যান্য কৃতীদের সঙ্গে ডিলিট প্রাপকদের তালিকায় নাম রয়েছে শচীনেরও। দেশের সর্বোচ্চ সম্মান ‘ভারতরত্ন’ পেয়েছেন শচীন। পদ্মশ্রী, রাজীব খেলরত্ন, অর্জুন পুরস্কার-সহ একাধিক সম্মানের পালক ইতিমধ্যেই তাঁর মুকুটে। পেয়েছেন বহু আন্তর্জাতিক সম্মানও। তাই বাংলার অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় যাদবপুরও চাইছে, এবছর শচীনকে বাংলার মাটিতে বরণ করে নিতে। ডিলিট দিয়ে তাঁকে সম্মান জ্ঞাপন করতে। শচীনের সম্মতি মিললেই, এই ব্যাপারে অফিসিয়ালি ঘোষণা করা হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে।
জানা যাচ্ছে, শীঘ্রই বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে মুম্বই গিয়ে মাস্টার ব্লাস্টারকে এই সম্মান গ্রহণের অনুরোধ জানানো হবে। যাদবপুর মনে করছে সাম্মানিক ডিলিট গ্রহণে মাস্টার ব্লাস্টারের বিন্দুমাত্র আপত্তি থাকবে না। বর্তমানে রাজ্যসভার সংসদ শচীন। তাঁর সংসদ তহবিল থেকে এ রাজ্যের কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ইতিমধ্যে প্রচুর অর্থসাহায্য করেছেন তিনি। বাংলার প্রতি তাঁর অকুণ্ঠ ভালবাসার কথা একাধিকবার জানিয়েওছেন নিজের মুখেই। বাংলা তথা দেশের অন্যতম সেরা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুরোধ তাই তিনি সানন্দে গ্রহণ করবেন বলেই মনে করছে যাদবপুর কর্তৃপক্ষ।
ইসি-তে শচীনের নাম সিদ্ধান্ত হলেও নিয়মানুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্ট এই নামে সিলমোহর দেবে। আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর কোর্টের বৈঠক। যাদবপুর কর্তৃপক্ষ চাইছে, তার আগেই শচীনের কাছ থেকে সবুজ সংকেত পেতে। কারণ বৈঠকের দিন, এই নামে সিলমোহর দেবেন রাজ্যের রাজ্যপাল তথা রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য, কোর্টের শীর্ষপদে থাকা কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। ১৯ তারিখের কোর্ট বৈঠকে তিনিও থাকবেন। নামে সিলমোহর পড়লেই সরকারি ঘোষণা করবে বিশ্ববিদ্যালয়। তাই তার আগেই তড়িঘড়ি শচীনকে বিষয়টি জানানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সব ঠিক থাকলে আগামী ২৪ ডিসেম্বর সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যাদবপুরের গাউন পরে ডিলিট গ্রহণ করতে দেখা যাবে শচীন রমেশ তেণ্ডুলকর। স্বাভাবিকভাবেই সেই অনুষ্ঠানে রাজ্যের বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, বছর দু’য়েক আগে ক্রিকেটের মহারাজ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে সাম্মানিক ডিলিট গ্রহণের অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে তিনি সেই অনুষ্ঠানে থাকতে পারবেন না বলে সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। তারপর আর সৌরভের নাম ওঠেনি। শচীনের সঙ্গে সৌরভের সম্পর্ক বরাবর মধুর। তাই শচীন এই প্রস্তাবে সম্মতি জানালে, সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সৌরভকেও আমন্ত্রণ জানানো হবে। সেক্ষেত্রে ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম সেরা দুই মুখের নতুন এক ফ্রেম তৈরি হবে যাদবপুরের সমাবর্তনে।
তবে, বিশেষ কোনও কাজে শচীন ওই সময় না আসতে না পারেন বা কোনও কারণে প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন, তবে ‘প্ল্যান বি’ ভেবে রেখেছে যাদবপুর। অলিম্পিকে পদকজয়ী বক্সার মেরি কমের নামও আলোচনা হয়েছে। রাজ্যসভার সাংসদ মেরি কম বিশ্ববন্দিত ক্রীড়াব্যক্তিত্ব। আন্তর্জাতিক বক্সিংয়ে গোটা পৃথিবীতেই তিনি আলোচিত নাম। জেদ এবং অধ্যবসায়কে সম্বল করে তাঁর জীবনচর্যা এতটাই আকর্ষণীয় যে, তা নিয়ে সিনেমা তৈরি হয়েছে বলিউডে। ভারত সরকার মেরি কমকে ইতিমধ্যে অর্জুন, পদ্মশ্রী এবং পদ্মবিভূষণ দিয়েছে। একান্তই শচীনের পক্ষে আসা সম্ভব না হলে মেরি কমকে সাম্মানিক ডিলিট দেবে যাদবপুর। এমনই খবর। যদিও আশা করা যাচ্ছে যাদবপুরের ডিলিট গ্রহণে সম্মতি জানাবেন শচীন এবং সমাবর্তনের দিন আবারও বাংলার মাটিতে পা রাখবেন ক্রিকেটের ইশ্বর।