দু’দিন বন্ধ থাকার পর আজ বৃহস্পতিবার, ‘ভূমিকন্যা’র শুটিং শুরু হচ্ছে। টেকনিশিয়ানদের পারিশ্রমিক বাকি থাকার অভিযোগে ফেডারেশন অব সিনে টেকনিশিয়ানস অ্যান্ড ওয়ার্কার্স অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া শুটিং বন্ধ করার নির্দেশ দেয় বলে জানান ধারাবাহিকের পরিচালক, প্রযোজক অরিন্দম শীল। তার জেরেই গত মঙ্গলবার এবং বুধবার বন্ধ ছিল ‘ভূমিকন্যা’র শুটিং। আগের মাসেও কাজ বন্ধ ছিল প্রায় সকল ধারাবাহিকেরই। তখনই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে, নির্দেশ দিয়েছিলেন, যত সমস্যাই হোক কোনও অবস্থাতেই যেন শুটিং বন্ধ না হয়। অথচ সেই নির্দেশ অমান্য করেই আবারও বন্ধ রইল শুটিং। স্টার জলসায় গত ৩০ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে এই নতুন ধারাবাহিক। রূপক সাহার উপন্যাস ‘তরিতা পুরাণ’ অবলম্বনে তৈরি হয়েছে এর কাহিনি। পরিচালনা করছেন অরিন্দম শীল। পুনরায় শুটিং বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, তাঁর প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে অরিন্দম শীল সংবাদমাধ্যমের কাছে জানান, ‘সবার আগে আমি একটা প্রশ্নই করতে চাই, ফেডারেশন কী করে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অমান্য করে? অরূপ বিশ্বাসের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে, উনি বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলেছেন। ওঁর কথাতেই আমরা বৃহস্পতিবার থেকে শুটিং শুরু করছি।’
এ দিকে শুটিং চালু হলেও জট কাটেনি। ফেডারেশন প্রাথমিক ভাবে স্বীকারও করেনি যে, তাদের নির্দেশেই শুটিং বন্ধ হয়েছে। অথচ তাদের করা প্রযোজকদের (ডব্লুএটিপি) ইমেলে লেখা আছে, পাওনা আদায় না হলে শুটিং বন্ধের কথা। ‘টাকা বাকি থাকার কথা আমি একবারও অস্বীকার করছি না। সেই টাকা শুক্রবার দিয়ে দেব বলেছিলাম। তার আগেই শুটিং বন্ধ করে দেওয়া হল। মুখ্যমন্ত্রী যে কমিটি করে দিয়েছিলেন, সেখানেও বিষয়টি নিয়ে যাওয়া যেত। কিন্তু ফেডারেশন সেটাও করেনি। এদের ঔদ্ধত্য, মিথ্যাচারিতা আমাকে অবাক করছে’ বলছেন অরিন্দম। শুটিং বন্ধের জন্য আর্থিক ক্ষতির দায়ভার কে নেবে, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি। তিনি আরও জানান যে, তখন একটা দৃশ্যের শুটিং চলছে, হঠাৎ ফেডারেশনের পক্ষ থেকে ফোন চলে এলো। আমার টিমের সদস্যরা অনুরোধ জানাল, আর মাত্র দুটো শট বাকি আছে, সেটুকু করে দেওয়ার জন্য। কিন্তু টেকনিশিয়ানরা তখন জানালেন, ফেডারেশন থেকে বলেছে এক্ষুণি কাজ বন্ধ করে দিতে হবে। রীতিমত ক্ষুব্ধ হয়েই তিনি বলেন- ‘আমি খুব একটা বড় প্রোডিউসার নই। ভালবাসা আর প্যাশন থেকেই প্রোডিউসার হয়েছি। আজ পর্যন্ত কেউ বলতে পারবে না, আমার কোনও পেমেন্ট বাকি আছে। একটা কাজ চলছে, সেটা বন্ধ হওয়াতে আমার ৩ লক্ষ টাকা লোকসান হয়েছে। এটা কে দেবে আমাকে? ফেডারেশনের এত বড় ক্ষমতা হয়ে গেছে, রাজ্য সরকারের ওপরে চলে যাচ্ছে! মাঝেরহাট ব্রিজ ভেঙে পড়ার মত ঘটনার মধ্যেও আমাকে বাধ্য হয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করতে হয়েছে। ওদের উদ্দেশ্যটা খুব পরিষ্কার, একটা একটা করে প্রোডিউসার ধরে তাদের টার্গেট করা। আমরা প্রোডিউসাররা একটাই আশ্বাস চাইছি, কাজ শুরু করার পর মাঝপথে যেন আবার বন্ধ হয়ে না যায়।’
অন্যদিকে, ফেডারেশন অব সিনে টেকনিশিয়ানস অ্যান্ড ওয়ার্কার্স অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার প্রেসিডেন্ট স্বরূপ বিশ্বাস বলছেন, ‘আমাদের কলাকুশলীরা তাঁদের প্রাপ্য পারিশ্রমিক চাইতে গিয়েছিলেন, কিন্তু প্রযোজক কাজ বন্ধ করে দেন। জানা গেছে তিনি শুক্রবার পারিশ্রমিক দেবেন। সুতরাং আমাদের কলটাইম দিলেই কাজ শুরু হবে। আমরা তো কাজ বন্ধ করিনি, কাজেই আমাদের কাজ করতেও কোনও অসুবিধা নেই।’ সমস্যা যে এখনও মেটেনি, তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে প্রযোজক ও ফেডারেশনের তরজায়। জল কোনদিকে গড়ায়, এখন সেটাই দেখার।