প্রায় ষাট বছর ধরে রুপোলি পর্দায় দাপিয়ে অভিনয় করে যাওয়া সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়- এর মুকুটে, যুক্ত হল নতুন পালক। এ বছর প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে ডিলিট সম্মান পেতে চলেছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ১১ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হবে এই সম্মান। একই সঙ্গে ডিএসসি সম্মানে সম্মানিত করা হবে বিশিষ্ট বিজ্ঞানী সিএনআর রাও–কে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যাচ্ছে , এক দিকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, আর অন্যদিকে বাংলা তথা ভারতীয় চলচ্চিত্র; দুই মেরুর এই দুই ব্যক্তিত্বকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতেই এই উদ্যোগ। বাংলা ছবিতে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অবদানের কথা মাথায় রেখেই তাঁকে এই সম্মান জানানো হচ্ছে। সেই সত্যজিৎ রায়ের আমল থেকে বাংলা সিনেমার দর্শককে একের পর এক ভাল ছবির উপহার দিয়ে আসছেন সৌমিত্র। ব্যর্থ প্রেমিক হিসেবে যেমন তিনি সফল, তেমনই সফল দুঁদে গোয়েন্দা হিসেবেও। তবে ‘দেবদাস’-এর সৌমিত্রকে ‘সোনার কেল্লা’-র সৌমিত্রর মধ্যে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তেমনই ‘ঝিন্দের বন্দি’-র ময়ূরবাহনের সঙ্গেও কোথাও মিল নেই ‘হীরক রাজার দেশে’-র উদয়ন পণ্ডিতের। সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় ‘অশনি সংকেত’, ‘ঘরে বাইরে’, ‘অপুর সংসার’, ‘চারুলতা’, ‘সোনার কেল্লা’, ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’, ‘অভিযান’, ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’- র মত ছবি যেমন করেছেন, অন্য পরিচালকের ছবিতেও অভিনয় করেছেন চুটিয়ে। তার প্রমাণ ‘পদক্ষেপ’, ‘নিশিযাপন’, ‘বাঘিনী’, ‘তিন ভুবনের পারে’-র মত অনেক ছবি। এমনকি হালফিলের ‘ময়ূরাক্ষী’, ‘বেলাশেষে’ ছবিতেও তাঁর অভিনয় মনে দাগ কেটে গেছে। সিনেমায় অভিনয়ের পাশাপাশি নাট্যনির্দেশক, নাট্যাভিনেতা ও বাচিকশিল্পী হিসেবেও তিনি বরেণ্য।
কর্মজীবনে মোট তিনবার জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন সৌমিত্রবাবু। ১৯৯১ সালে ‘অন্তর্ধান’ ছবির জন্য তিনি স্পেশাল জুরি অ্যাওয়ার্ড পান। ২০০০ সালে ‘দেখা’ ছবির জন্যও পান স্পেশাল জুরি অ্যাওয়ার্ড। ২০০৭ সালে ফের সেরা অভিনেতা হিসেবে ‘পদক্ষেপ’ ছবির জন্য জাতীয় পুরস্কার পান। ২০০৪ সালে তাঁকে পদ্মভূষণ সম্মানে ভূষিত করে ভারত সরকার। ২০১২ সালে তিনি পান ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের সবচেয়ে বড় সম্মান দাদাসাহেব ফালকে। ‘ময়ূরাক্ষী’ ছবির জন্য এ বছর সমালোচকদের বিচারে সেরা অভিনেতা হিসাবে ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড (ইস্ট) পান। শুধু দেশে নয়, বিদেশেও বহুবার সম্মানিত হয়েছেন তিঁনি। ২০১৭ সালে ফ্রান্স সরকার তাঁকে সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান ‘লিজিওন অফ অনার’-এ ভূষিত করে।
মঙ্গলবার প্রেসিডেন্সির উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া বলেন, ‘এই দুজন বিখ্যাত মানুষকে সম্মান জানাতে পেরে প্রেসিডেন্সি গর্বিত। বিজ্ঞানী সিএন রাও দীক্ষান্ত ভাষণ দেবেন। এ বছর বাংলা সিনেমার ১০০ বছর। এরকম একটা সময়ে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে সম্মানিত করতে পারছি, এটা আমাদের কাছে খুবই গর্বের।’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, তাদের আমন্ত্রণে সম্মতি জানিয়েছেন, সৌমিত্রবাবু এবং সিএনআর রাও, এই দুই বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বই। নির্ধারিত দিনে তাঁরা উপস্থিত থাকবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিরোজিও হলে।