খোঁজ নেই তিরুপতি মন্দিরের বিপুল রত্নভাণ্ডার ও গয়নার। ষোড়শ শতকে রাজা শ্রীকৃষ্ণ দেবরায় তাঁর সম্পত্তি উৎসর্গ করেছিলেন এই মন্দিরে। কিন্তু, হায়দরাবাদের ডিরেক্টর অব আর্কিওলজি অ্যান্ড মিউজিয়াম ২০১১ সালের একটি রিপোর্টে জানিয়েছে, মন্দিরে রাজার দান করা কোনও গয়নারই অস্তিত্ব মেলেনি। এবার সেই বিপুল সোনার হদিশ পেতে এবার মাঠে নামল সিআইসি বা কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশন।
সিআইসি চেয়ারম্যান শ্রীধর আচারাইয়ালু সোনা নিখোঁজের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। তাঁর কথায়, দেবতার নামে উৎসর্গ করা সোনা কোন্ দান তহবিলে রয়েছে তা জানানো মন্দির কর্তৃপক্ষের কর্তব্য। এর আগেও ভেঙ্কটেশ মন্দিরের সোনা নিখোঁজের ঘটনা প্রকাশ্যে আসে৷ প্রথমে সিআইসি-কে অভিযোগ জানান বিকেএসআর আয়াঙ্গার নামে জনৈক ব্যক্তি। কিন্তু মামলায় সেভাবে গতি না আসায় আয়াঙ্গার বিষয়টি নিয়ে আরটিআই-এর দ্বারস্থ হন।কিন্তু সন্তোষজনক কোনও উত্তর মেলেনি।
তথ্য কমিশনার আচারুলু জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি ডি পি ওয়াধওয়া এবং বিচারপতি জগন্নাথ রাওকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করেছিল টিটিডি ট্রাস্ট। কিন্তু, সেই কমিটিও অলঙ্কারের কোনও হদিশ দিতে পারেনি। ওই প্যানেল জানায়, ১৯৫২ থেকে তিরুমালা মন্দিরে ‘তিরুভারানম’ রেজিস্টার ব্যবহার করা শুরু হয়। কিন্তু, সেখানেও রাজা শ্রীকৃষ্ণ দেবরায়ের দান করা গয়না ও রত্নের কোনও উল্লেখ মেলেনি। মন্দিরের রত্নভাণ্ডারে কোনও হিসেব ১৯৫২ সালের আগে রাখা হত না। ১৯৩৯ সালে এক পুরোহিতের কাছ থেকে অলঙ্কারের ভার টিটিডি নেয় বলে জানায় ওই কমিটি। আদৌ ওই অলঙ্কারের হিসেব রাখার কোনও ব্যবস্থা তিরুমালা মন্দিরে ছিল কি না, তা নিয়েও সন্দেহপ্রকাশ করে কমিটির সদস্যরা।
আয়াঙ্গারের অভিযোগ, মন্দির কমিটি দেড় হাজার বছরের প্রাচীন এই মন্দিরের সম্পত্তির ঠিক মতো সংরক্ষণ করতে পারেনি। এরপরই সোনার খোঁজ চেয়ে তিন ধাপে রিপোর্ট তলব করে সিআইসি। মন্দির কমিটির বিরুদ্ধে রীতিমতো চুরির অভিযোগ তোলেন আয়াঙ্গার। তাঁর দাবি, ২০০৩ সালে গোপনে মন্দিরের প্রধান দরজা ভেঙে ফেলে মন্দির কমিটি৷ দরজার মূল্যবান সামগ্রী মন্দিরের বদলে ব্যক্তিগত তহবিলেই জমা পড়ে৷ হেরিটেজ ঘোষণার পর কোনও নির্দেশ ছাড়া মন্দিরের প্রধান দরজা কীভাবে ভাঙা হল? এই প্রশ্ন তুলেই এবার তদন্ত শুরু করেছে সিআইসি।
সিআইসি-র বক্তব্য, কেন্দ্রীয় তথ্য-সংস্কৃতি মন্ত্রক, এএসআই বিভিন্ন রাজ্যের হেরিটেজ সংরক্ষণ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির সংস্কৃতি দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে৷ কিন্তু, এক্ষেত্রে যোগাযোগের অভাব স্পষ্ট৷ তাঁদের মতে, শতাব্দী প্রাচীণ মন্দিরের সম্পত্তি উধাও হওয়ার সঠিক কারণ ব্যাখ্যার দায় মন্দির কমিটির। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর এবং সংস্কৃতি মন্ত্রককে কটাক্ষ করে আচারুলু বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের তত্ত্বাবধানে রাজ্যের সঙ্গে সমন্বয় রেখে দেশের ঐতিহাসিক এবং পুরাতাত্ত্বিক সৌধগুলির রক্ষার দায়িত্ব মন্ত্রকেরই। তাই টিটিডি’র মধ্যে থাকা রাজনৈতিক রাঘব বোয়ালদের হাতে না দিয়ে এই মন্দিরকে রক্ষায় কড়া পদক্ষেপ পিএমওকেই নিতে হবে।’