বহু সম্পন্ন মানুষ আছেন যাঁরা শুধু পরিচয়পত্রের জন্য রেশন কার্ড রাখতে আগ্রহী। তাঁদের রেশন দোকানে সরবরাহ করা দুই টাকার চাল-গমের প্রয়োজন নেই। এই ধরনের লোকেদের জন্য বিশেষ ডিজিটাল রেশন কার্ড ইস্যু করতে চাইছে খাদ্য দপ্তর। এই কার্ডে উল্লেখ করা থাকবে, এটা দেখিয়ে রেশনের চাল-গম মিলবে না। কিন্তু খাদ্য দপ্তরের এই প্রস্তাব এখনও নবান্নর শীর্ষ পর্যায় থেকে অনুমোদন পায়নি। সরকারি সূত্রের খবর, এই ব্যবস্থা নিয়ে নবান্ন থেকে কিছু প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এই কার্ড পেয়ে মানুষের কী সুবিধা হবে, তা বুঝতে চাইছে নবান্ন। যদিও খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানিয়েছেন, এই প্রস্তাব নবান্ন বিবেচনা করছে। অনুমোদন পেলেই ওই কার্ড দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পের রেশন কার্ড এ রাজ্যে আছে প্রায় ৬ কোটি ১ লক্ষ। এর বাইরে রাজ্য সরকারের দুই ধরনের খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পে এখনও পর্যন্ত আড়াই কোটিরও কিছু বেশি রেশন কার্ড ইস্যু হয়েছে। জাতীয় প্রকল্পে রাজ্যের কোটা যেহেতু সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে, তাই নতুন কেউ আবেদন করলে তাঁকে রাজ্য প্রকল্পের কার্ড দিতে হচ্ছে। রাজ্য প্রকল্পে পুরো ভর্তুকির আর্থিক দায় রাজ্য সরকারের। স্বাভাবিকভাবে নতুন রেশন কার্ডের সংখ্যা বাড়লেই রাজ্যের কোষাগারে আর্থিক চাপ বৃদ্ধি পায়।
বহু মানুষ আছেন যাঁরা এক বা একাধিকবার নির্দিষ্ট ফর্মে আবেদন করেও রেশন কার্ড পাননি। অনেকেই আবেদনের নম্বর অনলাইনে দিলেও জানানো হচ্ছে যে কার্ড ইস্যু করার প্রক্রিয়া চলছে। অন্যদিকে, কয়েক লক্ষ কার্ডের প্রাপকের কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। ওই কার্ডগুলি পঞ্চায়েত ও পুরসভার কাছ থেকে ফেরত নিয়ে নিচ্ছে খাদ্য দপ্তর। কার্ডে নাম-ঠিকানা ভুল বা অসম্পূর্ণ ঠিকানা থাকার জন্য প্রাপকের কাছে তা না পৌঁছনোর অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। কম্পিউটারে নাম-ঠিকানা নথিভুক্ত করার সময় অপারেটরদের ভুলের কারণে এটা হতে পারে। পরবর্তী কালে খাদ্য দপ্তর নজরদারি বাড়ানোয় এই ভুল কমেছে। পরবর্তী পর্যায়ের কার্ডে পুরো ঠিকানা থাকছে। কার্ড না পেলে ফের আবেদন করার পরামর্শও দিচ্ছে খাদ্য দপ্তর।
রেশন কার্ড দেওয়ার ক্ষেত্রে আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করা হয় না বলে খাদ্য দপ্তরের দাবি। জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার জন্য বেশ কিছু আর্থিক মাপকাঠি নির্দিষ্ট করে দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। এ রাজ্যে নতুন রেশন কার্ডের জন্য আবেদন করার যে ফর্ম দেওয়া হয়, তাতে ২৩টি মাপকাঠির উল্লেখ আছে। তার সঙ্গে ২৪ নম্বরে বলা হয়েছে, আগের মাপকাঠিগুলির মধ্যে না থাকলেও আবেদনকারী ভর্তুকিতে রেশনের খাদ্য নিতে আগ্রহী। খাদ্য দপ্তরের বক্তব্য, আবেদনপত্র জমা পড়ার পর আর্থিক অবস্থা খতিয়ে দেখা হয়। আর্থিক অবস্থা খারাপ হলে এক নম্বর রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় আনা হয়। এতে দু’ টাকা দরে মাসে মাথাপিছু পাঁচ কেজি করে চাল-গম প্রাপ্য। আর্থিক অবস্থা ভালো হলে দুই নম্বর প্রকল্পের কার্ড মেলে। কিন্তু রেশন ডিলাররা জানিয়েছেন, বহু ক্ষেত্রেই আবেদনপত্রে ২৪ নম্বর উল্লেখ করলেই দুই নম্বর প্রকল্পের কার্ড দেওয়া হয়েছে। অনেকে না বুঝে ২৪ নম্বর উল্লেখ করেছিলেন। তাই অনেক গরিব মানুষ দুই নম্বর প্রকল্পের কার্ড পেয়ে গিয়েছেন। দুই নম্বর প্রকল্পের কার্ড ছেড়ে দিয়ে নতুন করে আবেদন করলে এক নম্বর প্রকল্পের কার্ড পাওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু ঝামেলা এড়ানোর জন্য কেউ এসব করেন না।
খাদ্য দপ্তরের বক্তব্য, দুই টাকা কেজি দরে চাল-গম নিয়ে অনেক সম্পন্ন মানুষ তা বিক্রি করে দেন। অনেকের ক্ষেত্রে অন্য কেউ খাদ্যসামগ্রী তুলে নেন। এতে সরকারের আর্থিক অপচয় হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের করা আর্থিক সমীক্ষা ঠিকমতো না হওয়ার কারণে অনেক সম্পন্ন পরিবার জাতীয় প্রকল্পের কার্ড পেয়ে গিয়েছেন। ডিজিটাল রেশন কার্ড ফেরত দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট ফর্ম চালু করেও তাতে খুব বেশি সাড়া মেলেনি। এই অবস্থায় রেশন কার্ড রাখতে ইচ্ছুক কিন্তু সস্তার চাল-গম নিতে চান না এমন পরিবারগুলির জন্য বিশেষ কার্ড চালু করতে চাইছে দপ্তর। ওই কার্ডে কেরোসিন তেল মিলবে। এখনও ডিজিটাল কার্ড না থাকলে পুরনো সাদা কার্ডে অল্প পরিমাণে কেরোসিন তেল পাওয়া যায়।