‘৯৭ সালের সেই পি কে অমল দ্বৈরথের পর ডার্বি নিয়ে এরকম উত্তেজনা দেখেনি কলকাতা
কানায় কানায় ভরে উঠেছিল যুবভারতী। তুমুল উন্মাদনায় কলকাতা ছিল আজ সরগরম।
একদিকে কোস্টারিকান বিশ্বকাপার জনি অ্যাকোস্টা, অন্যদিকে ক্যামেরুনের গোল মেশিন ডিপান্ডা ডিকা। একদিকে সিরিয়ার মাঝমাঠের জাদুকর আল আমনা, অন্যদিকে উগান্ডার হেনরি কিসেকা। চলতি ঘরোয়া লিগের কার্যত ফাইনালে সমান জায়গা থেকেই খেলতে নেমেছিল দুই প্রধান। খেলাটাও হলো তাই। প্রথমার্ধ মোহনবাগানের তো দ্বিতীয়ার্ধ ইস্টবেঙ্গলের। তুল্যমূল্য এই ম্যাচে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর ২-২ গোলে অমীমাংসিত থাকল খেলা।
খেলার শুরু থেকে দুই দল নিজেদের মধ্যে পাস খেলে আক্রমণ তুলে আনার চেষ্টা করতে থাকে। প্রথম কয়েক মিনিটের পর খেলা ধরে মোহনবাগান। ৫ মিনিটের মাথায় হেনরির ফ্রিকিক দারুণ বাঁচান রক্ষিত ডাগর। শুরু থেকে আমনাকে বেশ কিছুটা পেছন থেকে খেলাচ্ছিলেন সুভাষ ভৌমিক। তারই প্রভাব পড়ছিল খেলায়। মাঝমাঠে কর্তৃত্ব নিয়ে খেলছিলেন ব্রিটো, সৌরভ, পিন্টু মাহাতারা। বেশ কিছুটা চাপ তৈরি হয় সামাদ, জনি অ্যাকোস্টার ডিফেন্সে। বাঁ প্রান্ত ধরে একের পর এক আক্রমণ তুলে আনতে থাকেন অরিজিৎ বাগুই।
১৯ মিনিটের মাথায় বাঁ প্রান্ত ধরে অরিজিৎ বাগুইয়ের ক্রসে চলতি বলে দুরন্ত শটে গোল করে মোহনবাগানকে এগিয়ে দেন পিন্টু মাহাতা। চাপ বাড়াতে থাকে সবুজ মেরুন ব্রিগেড। খেই হারিয়ে ফেলে ইস্টবেঙ্গল মাঝমাঠ। ২৯ মিনিটের মাথায় বাঁ প্রান্ত থেকে সেই অরিজিতের ক্রস ট্র্যাপ করে সামাদ ও অ্যাকোস্টার মাঝখান দিয়ে বল জালে জড়িয়ে ব্যবধান বাড়ান উগান্ডার হেনরি কিসেকা। ২-০ এগিয়ে যায় মোহনবাগান। প্রথমার্ধের শেষ দিকে কিছুটা আক্রমণ করার চেষ্টা করে ইস্টবেঙ্গল। প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে অ্যাকোস্টার হেড শিল্টনের হাতে লেগে রিবাউন্ড করলে ফিরতি বল বের করতে গিয়ে অ্যাকোস্টার মাথায় লেগে বল জড়িয়ে যায় জালে। এ দিনই প্রথম খেলতে নামা বিশ্বকাপার অ্যাকোস্টার গোলে ব্যবধান কমায় ইস্টবেঙ্গল।
দ্বিতীয়ার্ধে ঠিক উলটো ছবি। প্রথম থেকেই গোল পরিশোধের জন্য মরিয়া ইস্টবেঙ্গল একের পর আক্রমণ তুলে আনতে থাকে। দ্বিতীয়ার্ধে আমনাকে সামনের দিকে এগিয়ে দিতেই পালটে যায় খেলা। একের পর এক থ্রু বাড়াতে থাকেন আমনা। ৫৪ মিনিটের মাথায় নতুন নামা মেহতাব হোসেনের ভুলে সুযোগ পায় ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু একের বিরুদ্ধে এক পরিস্থিতিতে আমনার শট দারুণ বাঁচান শিল্টন পাল। পরিবর্ত হিসেবে নেমে ২ মিনিটের মধ্যেই চোট পেয়ে উঠে যেতে হয় মেহতাবকে। ফলে পরিকল্পনায় কিছুটা ব্যাঘাত ঘটে বাগান কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তীর।
এই সময় খেই হারিয়ে ফেলে মোহনবাগান। ৬০ মিনিটের মাথায় কর্নার থেকে বাঁ পায়ের বাক খাওয়ানো শটে বল প্রায় গোলেই ঢুকিয়ে দিচ্ছিলেন রালতে। সেই শট কোনও রকমে শিল্টন আটকালেও ফিরতি বলে গোল করে সমতা ফেরান ডানমাওয়াইয়া। এরপরেও আক্রমণের ধার অনেক বেশি দেখা যায় লালহলুদ ব্রিগেডের কাছে। এর মধ্যেই চাপ সামলে কিছু আক্রমণ তুলে আনে মোহনবাগান। কিন্তু ডিকা অনেক চেষ্টা করেও গোল করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত খেলা ড্র হয় ২-২ গোলে।
এই ড্রয়ের ফলে এক জায়গাতেই খেকে গেল দুই দল। ৮ ম্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে। সুযোগ পেয়েও জয় পেল না ময়দানের দুই প্রধান। দু দলেরই বাকি তিনটি করে ম্যাচ। অর্থাৎ ঘরোয়া লিগের ফয়সালা হবে বাকি তিন ম্যাচের উপরেই।
ফুটবলের পাশাপাশি আজকের যুবভারতীর প্রাপ্তি দর্শকদের উন্মাদনা।দুই প্রধানের সমর্থকরা হঠাৎ একসাথে জ্বালিয়ে দিলেন হাজার হাজার মোবাইলের আলো। আলোমালায় ভরে উঠল যুবভারতী। বাঙালির প্রিয়তম খেলা ফুটবলের জয়পতাকা উড়িয়ে কলকাতা জানান দিল কলকাতা আছে কলকাতাতেই।