জাতীয় পুরস্কার নিয়ে রাজ্যের প্রতি বঞ্চনার অভিযোগ তুললেন শিক্ষকরা। কারণ, ছ’জনের মনোনয়নের মধ্যে মাত্র একজনকেই জাতীয় সম্মান দেবে কেন্দ্র। অথচ, পশ্চিমবঙ্গের থেকে ছোট রাজ্য সিকিমের তিনজন শিক্ষক এই সম্মান পাবেন। গুজরাত, তেলেঙ্গানা, রাজস্থানের মতো রাজ্য থেকেও একাধিক শিক্ষককে সম্মান জানানো হবে। মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের তৈরি করা তালিকায় এমনটাই উল্লেখ করা হয়েছে।
এবার গতবারের চেয়ে জাতীয় শিক্ষক বাছাইয়ে অনেক কাটছাঁট করেছে কেন্দ্র। প্রথমে রাজ্য পিছু সর্বোচ্চ কতগুলি মনোনয়ন জমা করা যাবে, তা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। সেখানেও রাজ্যের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করার অভিযোগ উঠেছিল কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। বড় বড় রাজ্যের মধ্যে এ রাজ্যকেও ধরা হয়। মহারাষ্ট্র, গুজরাত কিংবা উত্তরপ্রদেশে থেকে ছ’টি করে মনোনয়ন জমা দিতে বলা হলেও, এ রাজ্য থেকে তিনজনের নাম পাঠাতে বলা হয়। এ নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের কাছে চিঠি দেয় শিক্ষা দপ্তর। তারপর চাপে পড়ে সেই সংখ্যা তিন থেকে ছয় করা হয়।
মনোনয়নগুলি খতিয়ে দেখে শেষ পর্যন্ত কতজনকে সম্মান জানানো হবে, তার চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করে ফেলেছে কেন্দ্র। সব মিলিয়ে মোট ৪৫ জনকে জাতীয় শিক্ষক সম্মান জানানো হবে। গতবার সেই সংখ্যা ছিল প্রায় ৩৭৫ জন। এ রাজ্য থেকে ২০-২২ জন এই সম্মান পেয়েছিলেন। এবার রাজ্যের ভাগ্যে মাত্র একটি সম্মানই জুটল। সিকিম (৩), কেরল (২), কর্ণাটক (৩), পাঞ্জাব (২), গুজরাত (২), রাজস্থান (২), তেলেঙ্গানা (৩), ছত্তিশগড় (২) থেকে একের বেশি শিক্ষক এই সম্মান পাচ্ছেন। সিবিএসই বোর্ড থেকেও তিনজন রয়েছেন। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, এগুলির মধ্যে তিনটি এমন রাজ্য রয়েছে, যেখানে বিজেপি সরকার শাসন করছে। একজন করে শিক্ষক সম্মান পাচ্ছেন, এমন রাজ্যগুলির মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও রয়েছে দিল্লি, অসম, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ ইত্যাদি।
তবে এবার যেভাবে শিক্ষকদের বাছাই করা হয়েছে, তা নিয়েও বেশ ক্ষুব্ধ শিক্ষমহল। তাদের মতে, গতবার পর্যন্ত শিক্ষকদের ভাগ করে পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ, প্রাথমিক-মাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষা পৃথকভাবে দেখা হয়েছিল। কিন্তু এবার আর সেই বিভাজন রাখা হয়নি। যে তালিকা তৈরি করা হয়েছে, তাতে বেশিরভাগই প্রশাসনিক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত। সব রাজ্য মিলিয়ে ১৫৩টি মনোনয়ন জমা পড়েছিল। এই শিক্ষকদের দিল্লিতে গিয়ে ১০ মিনিটের পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন দিতে হয়েছে। যার ভিত্তিতে চূড়ান্ত ৪৫ জনের নাম ঠিক করেছে কেন্দ্র। শিক্ষকদের বক্তব্য, প্রথমে রাজ্যস্তরে অন্তত পাঁচটি ধাপ পেরতে হয়েছে। বাড়ি, কর্মস্থলেও খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে। ছেঁকে নাম পাঠানো হয়েছে দিল্লিতে। তারপরও ১০০ জনের বেশির শিক্ষকের নাম কোন যুক্তিতে বাদ দেওয়া হল, তা বোঝা যাচ্ছে না।