১৯৯০ এর দশকের কথা মনে পড়ে গেল। ব্রিগেডে বিপুল জনসভায় বামফ্রন্টের বিদায় ঘণ্টা বাজাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কংগ্রেসের এক শ্রেণীর নেতার সাথে বামেদের আঁতাতের ফলে খানিকটা দেরি হলেও, সেই মমতাই ২০১১তে বাম-বিদায় করেছিলেন। একই পরিস্থিতি দেশের। মোদীর ‘নিউ ইন্ডিয়া’ তে নাভিশ্বাস ওঠার যোগাড় সাধারণ মানুষের। ‘ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি’ বলে ত্রাহি ত্রাহি করছেন জনসাধারণ। সবার চোখ ২০১৯-এ। বিজেপির গণেশ ওল্টানোর অপেক্ষা মাত্র।
২০১৪ সালে ২৮২ লোকসভা আসনে জিতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন মোদী। অনেকের আশা ছিল যে ইউপিএ সরকারের দুর্নীতিগ্রস্ত ও দুর্বল নেতৃত্বর অবসান ঘটিয়ে ৫৬ ইঞ্চির প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নের এক নতুন জোয়ার নিয়ে আসবেন। দেশবাসীর আশার সেই গুড়ে বালি দিয়েছেন মোদীবাবু। নোটবন্দি, জিএসটি, স্বজনপোষণ ও উগ্র হিন্দুত্ববাদের আগ্রাসী প্রকোপে নিত্যদিন দেশ নতুন করে সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে।
২০১৪ সালে ধরাশায়ী হওয়ার পর বিরোধী শিবির ছত্রখান হয়ে গেছিল। আশা যোগায় ২০১৫ সালে দিল্লী ও বিহারের বিধানসভা নির্বাচনের ফল। অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও নীতিশ কুমারের জয়ে আশার আলো দেখা দেয়। অনেকেই নীতিশকে মোদীর বিরোধী মুখ হিসেবে তুলে ধরেন। বিপর্যয়টা ঘটে গত বছর – আচমকাই নীতিশ কুমার লালুসঙ্গ ছেড়ে এনডিএতে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। যে আশার আলো বিহার দেখিয়েছিলো, তা হঠাৎই যেন রাজনীতির করাল গ্রাসে কালিমালিপ্ত হয়ে যায়।
ইতিমধ্যেই ২০১৬ সালে বাংলায় বিপুল জনমত নিয়ে দ্বিতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কন্যাশ্রী, যুবশ্রী, সবুজ সাথী, সবুজশ্রী, শিক্ষাশ্রী, গতিধারা, গীতাঞ্জলি, স্বাস্থ্য সাথী ইত্যাদি প্রকল্পের সুফল স্বরূপ বাংলার মানুষের অঢেল আশীর্বাদ ও ভোট মাথায় করে নবান্নে ফিরলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘুরে গেল জাতীয় রাজনীতির মোড়।
স্বাধীনতার আগে বলা হত, বাংলা আজ যা করে, ভারতবর্ষ তা করে আগামীকাল। বাংলাই চিরকাল দেশকে নেতৃত্ব দিয়ে এসেছে। তবে ৩৪ বছরের অপশাসনের ফলে সেই ধারায় ভাঁটার টান পড়েছিল ক্রমশ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে বাংলা আবার শ্রেষ্ঠ আসনটি ফিরে পেয়েছে। ক্রমাগত তিন বছর ইন্ডিয়া টুডে গোষ্ঠীর সমীক্ষায় দেশের সেরা মুখ্যমন্ত্রীর শিরোপা পেয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দেশের গণ্ডী পেরিয়ে রাষ্ট্রসংঘের সেরা পুরস্কার পেয়েছে বাংলার ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্প।
একদিকে মোদীর ‘জুমলা রাজ’ অন্যদিকে দিদির উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ। এই সমীকরণেই ২০১৯-এ মাত দেওয়ার চাল বিরোধীদের। নোটবন্দিই হোক কিংবা জিএসটির ফলে ব্যবসার ক্ষতি, নাগরিক পঞ্জির নামে বাঙালি খেদাও হোক বা মূল্যবৃদ্ধি – প্রত্যেকটি ইস্যুতে সবার আগে সরব হন মমতাই। তাই তো বিরোধী দলগুলি শুধু নয়, এনডি-এর বেশ কিছু শরিকও তাকে নানা ইস্যুতে সমর্থন করেছে।
মোদীও জানেন তাঁর বিদায় আসন্ন। ঘোর বিজেপিপন্থী সংবাদমাধ্যম টাইমস নাও এবং ইন্ডিয়া টুডের সমীক্ষায় আভাস মিলেছে বিজেপি এককভাবে ক্ষমতায় আসতে পারবে না, এবং এনডিএও ২৭২ এর ম্যাজিক ফিগারের চাইতে অনেকটাই কম আসন পাবে। তাই তো চার বছরের রাজপাটের শেষে উন্নয়নের খতিয়ানের বদলে বিজেপির মুখে এখন রামনাম শোনা যাচ্ছে।
( মতামত লেখকের ব্যক্তিগত )