২০১৯ সালে বিজেপি ফের কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর গোটা দেশে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি তালিকা তৈরি করা হবে বলে বিজেপি সহ সভাপতি ওম মাথুরের মন্তব্যের পর প্রশ্ন উঠেছে তাহলে কী জাতীয় নাগরিকত্ব আইনের নতুন কোনও সংশোধনী আসতে চলেছে? বর্তমান নাগরিকত্ব রীতি ১৯৫৫ সালের ভারতীয় নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী প্রযোজ্য। ২০১৬ সালে শেষবার এই আইনে সংশোধনী এনে একটি সংশোধনী বিল পেশ করা হয়েছিল সংসদে। সেই সংশোধনী প্রস্তাবটি এখন যুগ্ম সংসদীয় কমিটির বিবেচনাধীন। ওই সংশোধনীতে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, বাংলাদেশের মতো প্রতিবেশি দেশ থেকে ওইসব দেশের সংখ্যালঘুরা যদি ভারতে প্রবেশ করে (অর্থাৎ হিন্দু, শিখ প্রভৃতি) তাঁদের অনুপ্রবেশকারী হিসাবে বিবেচনা করা হবে না। তাদের আগামীদিনে নাগরিকত্ব প্রদান করা হবে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে গোটা দেশে রাষ্ট্রীয় নাগরিক পঞ্জি তালিকা তৈরির কোনও প্রস্তাব এখনও নেই। কিন্তু অসমের নাগরিক পঞ্জিকরণ খসড়া তালিকা প্রকাশের পর বিজেপি নেতারা বিভিন্ন রাজ্যের জন্য নাগরিক পঞ্জিকরণ তালিকা তৈরির দাবি তুলেছেন। বাংলার জন্য নাগরিক পঞ্জিকরণ করা হবে বলে দাবি করেছেন দিলীপ ঘোষ। বিজেপি এমপি নরেশ আগরওয়াল দাবি করেছেন বিহারের জন্য নাগরিক পঞ্জিকরণ করতে হবে। কারণ প্রচুর বাংলাভাষী অনুপ্রবেশকারী বিহার ও ঝাড়খন্ডেও ঢুকে বসবাস করছে দশকের পর দশক। রাজস্থানেও এই দাবি উঠেছে। এই প্রেক্ষিতে গতকাল বিজেপি সহ সভাপতি ওম মাথুর বলেছেন অসম থেকে শুরু হয়েছে। সব রাজ্যেই এই পঞ্জিকরণ তালিকা তৈরি করা হবে। সেরকমই পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি বলেছেন, ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের পর আবার মোদি সরকার ক্ষমতায় আসবে। আর তারপরই গোটা দেশে শুরু হবে। তাঁর এই মন্তব্যের পরই জল্পনা শুরু হয়েছে তাহলে সেক্ষেত্রে নাগরিকত্ব আইনের কী সংশোধন করা হবে? কারণ গোটা দেশের নাগরিকত্ব আইনের পাশাপাশি একমাত্র অসমের ক্ষেত্রেই বিচ্ছিন্ন একটি আইন রয়েছে। সেটি ১৯৫১ সালের এন আর সি আইন। ওই আইনের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে অসমের একটি চুক্তিও রয়েছে। সেই মাপকাঠিতেই অসমের পঞ্জিকরণ তালিকা তৈরি করা হচ্ছে ২০১৫ সাল থেকে। কিন্তু অন্য রাজ্যের ক্ষেত্রেও এই একই ব্যবস্থা চালু করার আগে আইনে পরিবর্তন করা হতে পারে?
বিরোধীদের অভিযোগের উত্তরে বারংবার কেন্দ্রীয় সরকার ও বিজেপি নেতূত্ব বলেছে এই পঞ্জিকরণ ধর্মের ভিত্তিতে হচ্ছে না। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বেআইনি নাগরিক চিহ্নিতকরণ করা হচ্ছে। প্রকৃত ভারতবাসী হলে কোনও ভয় নেই। অসমের খসড়া তালিকায় হিন্দু মুসলিম উভয়পক্ষই রয়েছে। সুতরাং শুধুই মুসলিমদের বাছাই করা হচ্ছে এমন নয়। বহু হিন্দু বাঙালির নামও তালিকায় নেই। তাই একইভাবে অন্য রাজ্যেও যদি একইভাবে পঞ্জিকরণ হয় তাহলেও প্রকৃত ভারতীয়ত্বই দেখা হবে। হিন্দু মুসলিম দেখা হবে না। গতকালই প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন একজনও প্রকৃত বৈধ নাগরিকের নাম তালিকার বাইরে থাকবে না। ওম মাথুরের মন্তব্যের পর চর্চা শুরু হয়েছে সব রাজ্যে এন আর সি চালু করার প্রক্রিয়াটি সত্যিই আগামী বছর শুরু হবে কিনা। সেক্ষেত্রে অনুপ্রবেশকারী ও শরণার্থীর বিভাজন করার নিয়মটি কী হবে?