বউয়ের খুব শখ ছিল রান্না ঘরটা হতে হবে মড্যুলার কিচেন। তিন তলাটা বানানোর সময়ে মাথায় ছিল বিষয়টা। বছর দশেক আগের কথা। খুঁজে পেতে একের পর এক লোক ডেকে দরদাম করা থেকে ডিজাইন পছন্দের কাজ করতে গিয়ে দেখলাম অত খরচ করে মড্যুলার কিচেন বানানো সম্ভব হবে না। গিন্নিকে বোঝালাম, ছবিতে যা দেখলাম তাতে প্লাম্বার ইলেক্ট্রিশিয়ান, কাঠের মিস্ত্রী ডেকে করালে অনেক কম খরচে হয়ে যাবে।
শুরু হল রান্না ঘর রিনোভেশনের কাজ। মেঝেতে সাদা পাথর বসলো, গ্লেজড টাইলসে ঢেকে গেল দেওয়ালের একটা দিক। ছোট ফ্রিজ আর সেমি অটোমেটিক ওয়াশিং মেশিন বদলে গিয়ে পেল্লায় ফ্রিজ আর ফুললি অটোমেটিক ওয়াশিং মেশিন এল দেওয়ালের রঙের সাথে তাল মিলিয়ে। এসে গেল পঁচিশ লিটারের মাইক্রোওয়েভ ওভেন। অরেঞ্জ রঙের সানমাইকায় নতুন ফার্নিচার গুলো ঝকঝক করতে লাগলো। গিন্নি আদেশ দিলেন অ্যাকোয়াগার্ড চাই, তাও এল। গ্যাসের নোংরা সিলিণ্ডারকে ফার্নিচারের আড়ালে লুকিয়ে ফেলার দারুণ ব্যবস্থা করা হল বুদ্ধি খাটিয়ে। গিন্নি বললেন রান্নার জন্য হবস আর চিমনী না হলে রান্নাঘর পূর্ণতা পাবে না, সঙ্গে সঙ্গে কুটচিনাকে ফোন, তাও এসে গেল দু দিনের মধ্যেই। পরিপাটি করে সেজে উঠলো রান্না ঘর।
সবই হল, শুধু গুল ঘুঁটের উনুনের ব্যবস্থা করা হল না। ওটাও যে ভবিষ্যতে দরকার হবে তখন ভাবি নি। দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদী আমার মড্যুলার কিচেনের যাচ্ছেতা দিন গুলো পার করে ফের মা, ঠাকুমার সময়ের আচ্ছে দিন ফিরিয়ে দেবেন কল্পনাও করিনি। যেভাবে গ্যাসের দাম আগুন হচ্ছে তাতে আমার সাধের মড্যুলার কিচেনটাকে আবার ভেঙে সাবেকী রান্নাঘর বানাতে হবে। গ্যাসের ব্যবহার কমিয়ে (শুধু বাড়ীতে কেউ এলে চা করে দেবার জন্য) লোহার ঢালাই করা উনুন কিনতে হবে, তাতে বালতির মত হাতল থাকবে। গিন্নি ব্যালকনিতে উনুন ধরাবেন। তা থেকে গলগল করে সাদা ধোঁয়া বের হতে হতে এক সময় গনগনে আঁচ ধরে উঠবে। গিন্নি আদুরে গলায় বলবেন, “হ্যাঁগো, শুনছো, আঁচ উঠে গেছে, উনুনটা রান্নাঘরে দিয়ে যাও না!!!” আমিও খবরের কাগজে আচ্ছে দিনের খবর মুড়ে রেখে ব্যালকনিতে যাবার জন্য পা বাড়াবো।