মেদিনীপুরে প্রধানমন্ত্রীর মিটিং-এর একদিকে প্রাণভয়ে মানুষের ছুটোছুটি, অন্যদিকে মঞ্চ থেকে তৃণমূলকে নিশানা করে চলছে মোদীর ভাষণ। দলের কর্মী, সমর্থকরা মঞ্চ ভেঙে পড়ে কাতরাচ্ছেন। কিন্তু সেদিকে ভ্রূক্ষেপই নেই ‘সবকা সাথ-সবকা বিকাশের প্রাণ পুরুষের’। এই না হলে তিনি নেতা!
কৃষকদের উন্নতির দিশা দেখাতে মেদিনীপুরে কলেজ মাঠে সভা করেন প্রধানমন্ত্রী। মোদীর ভাষণ চলাকালীনই তখন ভেঙে পড়ে মূল মঞ্চের বাঁদিকের মঞ্চ। ভাঙা লোহার কাঠামোর তলায় পড়ে তখন কাতরাচ্ছেন বিজেপির স্থানীয় কর্মীরা। তাতে অবশ্য কিছু এসে যায় না বিজেপি-র ‘আইকন ম্যান’-এর। ওসবে বিশেষ নজর না দিয়ে তিনি তখন ব্যস্ত মমতা বিরোধিতায়। একবার কানে এল অবশ্য হুড়োহুড়ির শব্দ। কিন্তু তাতে আমল না দিয়েই চললো মোদীর ভাষণ। স্থানীয় নেতৃত্ব তখন দিশেহারা।
নিজের কথা বলার মাঝেই প্রধানমন্ত্রী আঁচ করতে পারলেন কিছু একটা হয়েছে। সব শুনেও কোনও হেলদোল নেই তাঁর।প্রধানমন্ত্রী বলে কথা। পরতে পরতে ঔদ্ধত্যের প্রকাশ। মানুষের আর্তনাদ শুনেও নিতান্ত মামুলি ব্যাপার ঠাউরে শুধু বললেন, ‘ হাসপাতালে নিয়ে যান আহতদের। কিন্তু সভা বন্ধ হবে না।’ সত্যি মানুষের দুঃখে তাঁরও তো মন কাঁদে! তারই মধ্যে অবশ্য দুর্ঘটনার উল্লেখ করে বিজেপি কর্মীদের শৃঙ্খলার কথা তুলে ধরে চ্যালেঞ্জ জানালেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে। এই দৃশ্যের কথা বলে যদি কোনও ফায়দা মেলে আর কী।
কিন্তু যাঁকে উদ্দেশ্য করে বলা সেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ততক্ষণে মানবিকতার পরিচয় দিয়েছে। দুর্ঘটনায় আহতদের জন্য সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। যাহ! ফস্কে গেল স্পর্শকাতর একটি বিষয়কে পুঁজি করে মোদীর ফায়দা তোলার পরিকল্পনা।
মঞ্চ ভেঙে পড়লেও ভাষণ চালিয়ে যাওয়ায় দেশ জুড়ে সমালোচিত প্রধানমন্ত্রী। বিরোধীরা বলছেন মঞ্চ ভেঙে মানুষ যখন যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন তখন ক্ষমতার লোভে ভাষণে ব্যস্ত প্রদানমন্ত্রী।কটাক্ষ ধেয়ে এসেছে কংগ্রসের দিক থেকেও। কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিং সুরজেওয়ালার দাবি, ‘দেশের এক তৃতীয়াংশ যখম বন্যার জলে ডুবে তখন ভাষণে ডুবে প্রধানমন্ত্রী। এইতো তাঁর আসল রূপ।’
ঘটনায় বেশ চাপে গেরুয়া বাহিনীর রাজ্য নেতৃত্ব। ঘটনার কোনও যুক্তি দেখাতে পাচ্ছেন না তাঁরাও।
আসলে ক্ষমতার স্পৃহায় প্রধানমন্ত্রীর লোক দেখানো ‘দরদী মন’-এর কর্কশ রূপ সময় হতেই উন্মুক্ত হয়ে পড়ল আরও একবার।