বিশ্বকাপের সময় গার্দিওলা যে দেশের লিগে দায়িত্ব পালন করেন, সেই দেশই চ্যাম্পিয়ন হয়। ২০১০-এ তিনি ছিলেন স্পেনে, ২০১৪-তে জার্মানি। এবার তিনি কাজ করছেন ইংল্যান্ডে। এবারও কি একই ব্যাপার ঘটতে যাচ্ছে?
বিশ্বকাপে তাহলে পেপ গার্দিওলাও আছেন!
না, হঠাৎ করে বিশ্বকাপের শুভেচ্ছাদূত হয়ে যাননি স্প্যানিশ কোচ, কিংবা কোনো দলের পরামর্শকের দায়িত্বও নেননি। তিনি ম্যানচেস্টার সিটিতেই আছেন। আর এই বিশ্বকাপে তো সিটি থেকেই সবচেয়ে বেশি খেলোয়াড় এসেছেন। কোচের প্রভাব যেহেতু খেলোয়াড়দের মধ্যে বেশ প্রবলভাবে থাকে, না থেকেও আছেন গার্দিওলা।
তো সেই প্রভাবটা বিশ্বকাপের কোন দলে সবচেয়ে বেশি পড়ছে? অবশ্যই এখন গার্দিওলা যে দেশের লিগে আছেন, সেই ইংল্যান্ডে। বিশ্বকাপের সময় গার্দিওলা যে দেশের লিগে থাকেন, সেই দেশ চ্যাম্পিয়ন হয়। এটা অনেকের কাছে কাকতালীয় হতে পারে, অনেকের কাছে একটা তত্ত্বও। নইলে ২০১০ বিশ্বকাপে স্পেনের যে দলটা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল, সেখানে কেন গার্দিওলার তখনকার দল বার্সেলোনার খেলোয়াড়দের আধিপত্য থাকবে। ২০১৪ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন জার্মানির বেশির ভাগ খেলোয়াড়ও তো গার্দিওলার বায়ার্ন থেকেই এসেছিলেন।
এবার অবশ্য ইংল্যান্ডে সিটির খেলোয়াড়দের সংখ্যাটা এত বেশি নয়। জন স্টোনস, কাইল ওয়াকার, রাহিম স্টার্লিং ও ফ্যাবিয়ান ডেলফ। সমান চারজন আছেন ব্রাজিলেও-এদেরসন, দানিলো, ফার্নান্দিনহো ও গ্যাব্রিয়েল জেসুস। দানিলো অবশ্য চোটের কারণে ছিটকে পড়েছেন। তবে গার্দিওলার কাছ থেকে ব্রাজিল নয়, ইংল্যান্ডই বেশি নিয়েছে আসলে। ইংলিশ ডিফেন্ডার জন স্টোনস যেমন বলছেন, পেপের ছোঁয়া তো আমাদের সিটি খেলোয়াড়দের মধ্যে আছেই। আমরা চেষ্টা করেছি ওর কাছ থেকে যা শিখেছি, সেটা ইংল্যান্ড দলের বাকিদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে।
কীভাবে ছড়িয়েছেন? তিউনিসিয়ার বিপক্ষে যোগ হওয়া সময়ে হ্যারি কেইনের গোলটার উদাহরণ দিয়েছেন সিটি থেকে আসা আরেক ইংল্যান্ড ডিফেন্ডার কাইল ওয়াকার। যেভাবে কর্নার আদায় করেছিল ইংল্যান্ড, তারপর সেখান থেকে কর্নারে কেইনের হেড, পুরো জিনিসটাই দারুণ এক বোঝাপড়ার ফল। যেটা সিটির হয়ে খেলার সময় তৈরি হয়েছে ওয়াকার-স্টোনসের মধ্যে। স্টোনস তো বললেনই, ওর অধীনে না খেললে আমি বিশ্বকাপেই আসতে পারতাম বলে মনে হয় না। গত দুই বছরে খেলোয়াড় ও মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠতে পেপ আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন।
এটা শুধু খেলোয়াড়দের মত নয়। বিশ্বকাপ শুরুর আগে ইংল্যান্ড কোচ গ্যারেথ সাউথগেট নিজেও গার্দিওলার পরামর্শ নিয়েছেন। তিনি যে গার্দিওলার গুণমুগ্ধ বলেছেন সেটাও, ও আসলে একজন উদ্ভাবক। সিটি যে ধরনের ফুটবল খেলেছে , সেটা দুর্দান্ত।
গার্দিওলার দর্শনের ফুটবল মাঠে যাঁর পায়ে সবচেয়ে সফলভাবে রূপায়িত হয়েছে, তাঁদের একজন সাবেক বার্সেলোনা মিডমিল্ডার জাভি। বিশ্বকাপের আগে তিনিও বলেছিলেন, ‘আপনার মধ্যে যদি শেখার আর জানার আগ্রহ থাকে, গার্দিওলার অধীনে খেলে না শেখাটা আপনার জন্য অসম্ভব হয়ে যাবে। সিটি যেভাবে খেলেছে, আমি নিশ্চিত বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড সেটা থেকে লাভবান হবে।’
সেটা হলে সাউথগেটই বোধ হয় সবচেয়ে খুশি হবেন।