মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণার পর ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই রাজ্যে ২৬০০ সমবায় ব্যাঙ্কের শাখা খোলার কাজ দ্রুতগতিতে করার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সমবায় দপ্তর। এই মুহূর্তে রাজ্যের ৭১০টি গ্রাম পঞ্চায়েতে কোনও ব্যাঙ্কেরই শাখা নেই। মুখ্যমন্ত্রী এই ধরনের গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতে সমবায় ব্যাঙ্কের শাখা খুলতে নির্দেশ দেন। তারপরই এই শাখা খোলার ব্যাপারে তৎপর হয় সমবায় দপ্তর। চলতি আর্থিক বছরেই যে সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েতে কোনও ব্যাঙ্কের শাখা নেই, সেখানে একাধিক শাখা খোলা হবে। এর জন্য সমবায় দপ্তর ৩৯৫ কোটি টাকা বরাদ্দও করেছে। প্রতিটি শাখায় কোর ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা দেওয়া হবে। একইভাবে এটিএম পরিষেবা চালু করা হবে। রাজ্য সমবায় দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতে অ্যকাউন্ট খুলতে গেলে মোটা টাকা জমা রাখতে হয়। কিন্তু, এখানে কৃষকরা শূন্য ব্যালেন্স অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন।
রাজ্যের সমবায়মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, মুখ্যমন্ত্রী বরাবরই গ্রামীণ কৃষক ও গরিব মানুষের কথা ভেবে নানা রকম পরিকল্পনা নিয়েছেন। রাজ্যের কৃষকরা শুধুমাত্র সমবায় ব্যাঙ্ক থেকেই কৃষিঋণ পান। অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক তাঁদের ঋণ দেয় না। তাই মুখ্যমন্ত্রী সমবায় ব্যাঙ্কের শাখা বৃদ্ধি করার নির্দেশ দিয়েছেন। সেইমতো ২৬০০ নতুন শাখা খোলার কাজ দ্রুতগতিতে করা হবে। এর জন্য ৩৯৫ কোটি টাকা বরাদ্দও করা হয়েছে। চলতি আর্থিক বছরের মধ্যে সমস্ত শাখা খোলার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। এই শাখাগুলি চালু হয়ে গেলে গ্রামীণ এলাকার প্রচুর মানুষ উপকৃত হবেন।
হাওড়ার শরৎ সদনে প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দিতে এসেছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে তিনি নানা রকম প্রশাসনিক কাজের হিসেব যেমন নিয়েছেন, তেমনই গ্রামীণ এলাকার মানুষ যাতে ব্যাঙ্কের সুবিধা পান, সেদিকে নজর রাখতে সমবায় দপ্তরকে নির্দেশ দেন। মুখ্যমন্ত্রী কর্তাদের কাছে জানতে চান, এই মুহূর্তে রাজ্যে কতগুলি গ্রাম পঞ্চায়েতে কোনও ব্যাঙ্কের শাখা নেই? তার উত্তরে সমবায় দপ্তরের কর্তারা বলেন, ৭১০টি গ্রাম পঞ্চায়েতে কোনও ব্যাঙ্কেরই শাখা নেই। তারপরই সেখানে সমবায় ব্যাঙ্ক খোলার জন্য নির্দেশ দেন। প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে দপ্তর। দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত আর্থিক বাজেটেই সমবায় ব্যাঙ্কের শাখা খোলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরই তা আরও দ্রুত করার দিকে নজর দেওয়া হয়।
দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, কৃষিঋণ যাঁরা পাবেন, তাঁদের এই ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। তাঁদের এটিএম কার্ড দেওয়া হবে। এতদিন কৃষিঋণ প্রাপকদের একেবারে ঋণের টাকা তুলে নিতে হত। এতে টাকা অপচয় হওয়ার আশঙ্কা থাকত। কিন্তু, এই এটিএম কার্ড পাওয়া গেলে, প্রয়োজনমতো তাঁরা টাকা তুলে চাষের কাজে ব্যবহার করতে পারবেন। সমবায়মন্ত্রী বলেন, যে ব্যাঙ্কগুলি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, সেগুলি খোলার ব্যাপারে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। কাসুন্দিয়া সমবায় ব্যাঙ্কের দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে। কিন্তু, হাওড়ার রামকৃষ্ণ ব্যাঙ্ক খোলার জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমরা অডিট করিয়ে দেখেছি, প্রায় ৬৯.৫০ কোটি টাকা এরজন্য সরকারকে ভর্তুকি দিতে হবে। সেই ভর্তুকি দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। ইতিমধ্যেই ২০১০ সালে এই ব্যাঙ্ক বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর যাঁদের লকারে বিভিন্ন গয়না, বাড়ির দলিল, ইত্যাদি ছিল, তা ইতিমধ্যেই লকার খুলে ফেরত দেওয়া হয়েছে। এই ব্যাঙ্কটি খোলার বাকি প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।