বলরামপুরের বিজেপি কর্মী দুলাল কুমারের ময়না তদন্তের রিপোর্টে আত্মহত্যার প্রমাণ মিলেছে বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন পুরুলিয়ার নবনিযুক্ত পুলিস সুপার অশোক মাঘারিয়া।
রবিবার দায়িত্বভার গ্রহণ করেই সাংবাদিক বৈঠক করে পুলিস সুপার জানান, বলরামপুরের ডাভা গ্রামের অদূরে হাইটেনশন লাইনের টাওয়ারে ঝুলন্ত যুবক দুলালের মৃতদেহের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এসেছে। পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের ৫ জন চিকিৎসকের একটি দল ওই ময়নাতদন্ত করেছে। চিকিৎসকেরা তাঁদের রিপোর্টে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলে আত্মহত্যা করার কথাই উল্লেখ করেছেন। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে।
বিজেপি কর্মী দুলালের দেহ উদ্ধারের ঘটনায় এদিন পুরুলিয়া জেলা জুড়ে ১২ ঘণ্টার বন্ধ পালিত হয়। সকাল থেকে জেলার সর্বত্র বন্ধের সমর্থনে রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। মোটরবাইক নিয়ে বন্ধ সমর্থকেরা রাস্তায় নেমে পড়েন। সরকারি বাস চলাচলেও বাধা দেওয়া হয়। পুরুলিয়া শহরের প্রতিটি বাজারে বন্ধ সফল করার দাবিতে মিছিল বেরোয়।
ঘটনার পর একদিন পেরিয়ে গেলেও এখনও আতঙ্কে ডাভা গ্রামের মানুষ। বিজেপি–র নেতা–কর্মী থেকে মৃত দুলালের বাবা মহাদেব কুমারের পাল্টা দাবি, কোনও অবস্থাতেই দুলাল আত্মহত্যা করতে পারেন না। তাঁকে পরিকল্পনা করে খুন করা হয়েছে। এদিন দুলালের বাড়িতে গিয়েছিলেন বিজেপির রাজ্যনেতারা। সেখানে তাঁরা গোটা ঘটনার সিবিআই তদন্ত দাবি করেছেন।
প্রসঙ্গত, শনিবার ভোরে পুরুলিয়ার বলরামপুর থানার ডাভা গ্রামের অদূরে হাইটেনশন টাওয়ারে ঝুলতে সলদেখা যায় ৩২ বছরের দুলালের দেহ। শুক্রবার দলের এক কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন দুলাল। বাড়ি ফিরে বাবাকে বলরামপুরের দোকানে পৌঁছে দিতে যান। তারপর আর বাড়ি ফেরেননি। সকালে বাড়ির অদূরে পাওয়া যায় তাঁর ঝুলন্ত মৃতদেহ। পুলিস মৃতদেহ নামাতে গেলে গ্রামবাসীরা বিক্ষোভ দেখান। পুলিসের ওপর হামলাও হয়। জেলার বিভিন্ন রাস্তায় পথ অবরোধ করা হয়। ঘটনার পর জেলার পুলিস সুপারকে বদলি করে রাজ্য সরকার সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেয়।
প্রসঙ্গত, গত ৩০ মে, বুধবার এই বলরামপুরেই কলেজছাত্র ত্রিলোচন মাহাতোর ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার হয়। প্রতিবাদে পর দিন বৃহস্পতিবার বলরামপুরে ১২ ঘণ্টার বন্ধ ডেকেছিল বিজেপি। তাতে সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হন। এক সপ্তাহের ভেতর পরপর দুটি বন্ধ হওয়ায় ক্ষুব্ধ আমজনতা। তবে ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না।
ত্রিলোচনের ঘটনায় তৎকালীন জেলা পুলিস সুপার জয় বিশ্বাস বলেছিলেন, প্রাথমিক তদন্তে অনুমান যে, ব্যক্তিগত আক্রোশে খুন করা হয়ে থাকতে পারে ওই কলেজছাত্রকে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা বলরামপুরের বিধায়ক ও রাজ্যের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো আবার বলেছিলেন, বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণে এই ঘটনা। কোনওভাবেই ওই ঘটনায় তৃণমূল যুক্ত নয়। সেদিনও বিজেপি নেতৃত্ব পুলিসকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান। বিভিন্ন জায়গায় অবরোধও হয়। মৃতদেহ নামাতে সেদিনও পুলিসকে বাধা দিয়েছিল বিজেপি।