মুখ্যমন্ত্রী কালিম্পংয়ে পৌঁছনোর আগেই কালিম্পংই যেন তাঁকে মন দিয়ে বসেছিল। বৃষ্টিস্নাত কালিম্পং তাঁকে যে অভাবনীয় সংবর্ধনা দিল সোমবার, তাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভাবতেই পারেন, পাহাড় নিয়ে তাঁর দুশ্চিন্তার দিন এবার শেষ হল। উন্নয়নে মুড়ে কালিম্পংকে শান্ত থাকার বার্তা দিতে এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর পাঁচ দিনের কালিম্পং সফর শুরু হল। সন্ধ্যাবেলায় কালিম্পংয়ে পৌঁছন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর বিমান বাগডোগরায় নামার খবর পাওয়া মাত্র যেন রাস্তায় নেমে পড়ল গোটা কালিম্পং। হাজার মানুষের সেই ভিড় ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে শুরু হয়ে শেষ হয়েছিল একেবারে ডেলোয়, যেখানে তাঁর রাত্রে থাকার কথা। তৃণমূলের চেয়ে যেন বিনয় তামাংয়ের নেতৃত্বাধীন মোর্চার উৎসাহই বেশি। দলীয় পতাকা নিয়ে বৃষ্টির মধ্যেই মোর্চাকর্মীদের নাচনকোদন ছিল দেখার মতো।
ডম্বর চকের দখল যদি মোর্চাকর্মীরা নিয়ে থাকেন, তবে ত্রিকোণ পার্কের দখল গিয়েছিল তৃণমূল কর্মীদের হাতে। আবার কালিম্পং শহরে ঢোকার আগে সার বেঁধে দাঁড়ালেন বিভিন্ন জনজাতি উন্নয়ন বোর্ডের সদস্যরা। মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ির পিছনে স্লোগান দিতে দিতে দৌড়লেন মোর্চা কর্মীরা। মমতা কালিম্পং শহরে ঢোকার কিছুক্ষণ আগেও কিন্তু প্রবল বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি থেকে মাথা বাঁচাতে অনেকেই এদিক ওদিকে সরে গিয়েছিলেন। কিন্তু হুটারের আওয়াজ পেতেই পিলপিল করে মানুষ ফের রাস্তায়। তখনও বৃষ্টি পড়ছে। এমন উন্মাদনার কেন?
এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘গত কয়েক বছরে সবই তো দেখলাম। এখন বুঝতে পারছি, পাহাড়ে শান্তি এবং উন্নয়ন হতে পারে একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতেই।’ ভিড়ের মধ্যে থেকে অন্য একজন বলেন, ‘এর আগে কেউই কালিম্পংয়ের উন্নতি করতে পারেননি। এ বার মুখ্যমন্ত্রীর উপর ভরসা রাখতে চাই।’ কালিম্পং কলেজের ছাত্র বলেন, ‘এখানে অনেক কিছু করার আছে। আমরাও বিএড কলেজ চাই। মেডিক্যাল কলেজ চাই। এতদিন কিছুই পাইনি। এ বার দেখি কিছু হয় কি না।’ অথচ এই কালিম্পংয়ে বিমল গুরুংয়ের এখনও প্রভাব আছে। আছে হরকাবাহাদুর ছেত্রীর জনভিত্তিও। তাহলে কোন জাদুতে বদলে গেল কালিম্পং। পাহাড়ে তৃণমূলের নেতা তথা রাজ্যসভা সাংসদ শান্তা ছেত্রী বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে কালিম্পংও যে শান্তির পক্ষে দাঁড়াবে, সেটা আমরা জানতামই।’
মুখ্যমন্ত্রীর এ বারের পাহাড় সফরকে ঘিরে কয়েকদিন ধরেই প্রশাসনিক মহলে জোর তৎপরতা ছিল। বিনয় তামাংয়ের নির্দেশে মোর্চাও যে পথে নামবে, সেই ইঙ্গিতও ছিল। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় কালিম্পং ত্রিকোণ পার্কের সামনে পৌঁছনোর পর যা ঘটল, তা সত্যিই অভাবিত। সান্দাকফু ল্যান্ডরোভার অ্যাসোসিয়েশনও মুখ্যমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে এসেছিল। সমিতির কো-অর্ডিনেটর অনিল তামাং বলেছেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীকে আমরা সান্দাকফুতে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। উনি গেলে আমাদের এলাকারও উন্নতি হবে।’
মুখ্যমন্ত্রী কালিম্পং-এ গ্রাহামস গ্রাউন্ডে পর্ষদ কর্তাদের সাথে বৈঠক করবেন। সেই বৈঠক থেকে নতুন জেলার প্রাপ্তির ভাঁড়ার অনেকটাই ভরবে। পাশাপাশি গোটা পাহাড়ের বকেয়া কাজ দ্রুত সমাপ্ত করার তাগাদাও বারবার দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই এজেন্ডাকে সামনে রেখে বুধবার কালিম্পং ও দার্জিলিং জেলার কর্তাদের নিয়ে বৈঠক করবেন তিনি।