বাংলার গ্রামের দেওয়ালে দেওয়ালে কাস্তে-হাতুড়ি-তারা আর পদ্মফুল জায়গা করে নিয়েছিল একসাথে। এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে। জেলায় জেলায় বাম-রামের জোট ছিল এবারের পঞ্চায়েত ভোটের লজ্জাজনক বাস্তব। ত্রিপুরার সিপিএম এর মত বাংলার সিপিএম ও বিজেপির কাছে নিঃশর্ত ও নির্লজ্জ আত্মসমর্পণ করে বসে। শুধু নিচের তলার কর্মীরা নন। এই জোটে সামিল হন তাবড় রাজ্য কমিটির নেতারাও । নদিয়ায় রাজ্য কমিটির নেত্রী এবং এমএলএ রমা বিশ্বাস এই জোটে নেতৃত্ব দেন। টেবিল ঠুকে তার এই অবস্থানকে তিনি সঠিক বলে দাবীও করেন। পুরুলিয়ার সম্পাদক প্রদীপ রায়ও একই অবস্থান গ্রহণ করেন। দেওয়ালে দেওয়ালে বাম-রামের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় সিপিএম রাজ্য নেতৃত্বকে মুখ খুলতে হয়। স্বভাব সিদ্ধ ভঙ্গিমায় গোটা বিষয়টিকে উড়িয়ে দিয়ে আলিমুদ্দিন এর বসেরা বলে দেন যে এরকম কোন ঘটনাই ঘটেনি। আর যদি কেউ এরম ঘটনা ঘটান তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বাম-রামের দেওয়ালের ছবি গোটা দেশ জুড়ে ছড়িয়ে পরায় নিন্দার ঝড় ওঠে। একেজি ভবন হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয় । মুখ বাঁচাতে তড়িঘড়ি দেওয়াল মোছার কাজ শুরু হয়। ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে গিয়ে বিড়ম্বনা আরো বেড়ে যায়। তড়িঘড়িতে ভালো করে দেওয়াল না মোছায় চুনকামের ফাঁক দিয়ে কাস্তে হাতুড়ি আর পদ্মফুল দেখা যেতে থাকে। বহু দেওয়াল মোছাও সম্ভব হয় না।
বাম-রাম জোটে লাভ হয় বিজেপির । সিপিএম নেমে যায় তৃতীয় স্থানে । ফলাফল এতটাই ভয়ানক যে গোটা রাজ্যে একটিও জেলা পরিষদ আসন জিততে পারে না আলিমুদ্দিন। বাম-রামের অনৈতিক জোটের ফলে লাভের গুড় খেয়ে নেয় বিজেপি।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর্যালোচনায় ডাকা সিপিএম এর রাজ্য কমিটির মিটিংএ অবশেষে ঝুলি থেকে বেড়াল বেরিয়ে পড়েছে। প্রায় সমস্ত জেলার নেতারাই স্বীকার করে নিয়েছেন যে বিজেপির সঙ্গে সমঝোতা হয়ে ছিল নিচের তলায়। কোথাও একেবারে খোলাখুলি ভাবে। কোথাও নির্দলের মুখোশে।
তাহলে জেলার নেতারা জানেন যে কারা বিজেপির সাথে আঁতাত করেছেন। প্রশ্ন এখন একটাই যে এই সমস্ত কর্মীদের বিরুদ্ধে আলিমুদ্দিন কি ব্যবস্থা নেবে? উত্তরের জন্যে অপেক্ষার প্রয়োজন নেই । উত্তর সবার জানা। রাজ্য কমিটির মিটিংএ রিপোর্ট প্লেস করতে গিয়ে সূর্য মিশ্রকে অসহায়ের মতো বলতে শোনা গিয়েছে যে এক বছর ধরে বারবার পঞ্চায়েত নিয়ে প্রস্তুতির কথা বলা হলেও অনেকেই প্রার্থী হওয়ার সাহস করে উঠতে পারেননি।
সাহস দেবে কে? কলকাতায় কেন্দ্রীয় প্রোগ্রাম , সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্যুইটের বাণী, সকাল সন্ধ্যা মিডিয়া বাইট নিয়ে যারা ব্যস্ত তাদের থেকে নিচের তলার কর্মীরা সাহস পাবে এটা আশা করাও বাতুলতা। ফলে যা হবার তাই হচ্ছে। নেতাদের তাত্ত্বিক ব্যখ্যা নিচের তলার কর্মীরা আর খাচ্ছেন না। আজ সকালবেলা বর্ধমানের কয়েকজন সিপিএম কর্মী বাড়িতে এসেছিলেন। তাদের থেকে জানলাম যে তাদের গ্রামে ভোট একদম শান্তিপূর্ণ ও অবাধ। সেই ভোটে সিপিএমকে দূরবীন দিয়ে খুঁজতে হচ্ছে। দ্বিতীয় স্থানে বিজেপি আর বিজেপির থেকে কয়েক যোজন এগিয়ে প্রথম তৃণমূল। সন্ত্রাসের “শাক” দিয়ে মাছ ঢাকা যাচ্ছে না। নিচের তলার কর্মীরা আলিমুদ্দিনের উপর আর ভরসা রাখতে পারছেন না। এসি গাড়ি চড়া, এসি ঘরে বসে নিদান হাঁকা নেতাদের প্রবোধ বাক্য তে চিড়ে আর ভিজছে না। নিচের তলায় দু’ধরণের প্রবণতা। একটা অংশ বাম-রামের জোটকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর। আরেকটা অংশ বিজেপির কাছে আত্মসমর্পণে বিরক্ত ও ক্ষিপ্ত। কর্মীরা দেখছেন ” লাইনের” তোয়াক্কা না করেই কয়েকজন তাবড় রাজ্য নেতা বিজেপি থেকে মাওবাদী — সবার সাথেই সমান স্বাচ্ছন্দ্য।
হতাশা বাড়ছে। ক্ষোভ বাড়ছে। বিজেপির সাথে যারা প্রকাশ্যে গেল তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হবে না তাই নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বিজেপির সাথে প্রকাশ্যে মিছিল করা নেতাদের কেন শাস্তি হবে না ? – উঠছে সে প্রশ্নও। কর্মীরা অবাক বিস্ময়ে দেখছেন বিজেপি থেকে মাওবাদীদের সাথে আঁতাত করা নেতাদের প্রমোশন মিলছে।
কার শাস্তি হবে? কে শাস্তি দেবে? এখন শাস্তি দেওয়া সাইনবোর্ড হতে চলা আলিমুদ্দিনের কাছে বিলাসিতা। জোটে সবুজ সংকেত দিয়েছে নেতারাই। শাস্তি দিলে তো আগে তাদের দিতে হয়। সেটা সম্ভব নয় । আর নিচের তলায় শাস্তি দিতে গেলে তো অবশিষ্ট গাঁও উজাড় হয়ে যাবে। শাস্তি হবে না কারুর। শুধু লোক দেখানো বিবৃতি-বাইট চলবে।
” আনলিমিটেড” দ্বিচারিতা দীর্ঘজীবী হোক।