কৃষি বিল নিয়ে তুঙ্গে উঠেছে রাজনৈতিক তরজা। মোদী সরকার যেমন এই বিলকে কৃষকের স্বার্থের পক্ষে বলে ব্যাখ্যা করছে, তেমনি বিরোধীরা এই বিলকে কৃষক বিরোধী বলে আখ্যা দিয়েছে। সংসদে পাশ হওয়া দুটি কৃষি বিলকে এককথায় ‘কৃষক বিরোধী’ আখ্যা দিচ্ছেন সমগ্র উত্তর ভারতের কৃষকেরাও। বিলের প্রতিবাদে পাঞ্জাব, হরিয়ানার কৃষকেরা রাস্তায় নেমেছেন। অসন্তোষ মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশেও। রবিবার যুব কংগ্রেসের উদ্যোগে এক ট্রাক্টর র্যালি পাঞ্জাব থেকে দিল্লীর উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। একটি কৃষক সংগঠন ২৪ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর ‘রেল রোকো’ কর্মসূচী নিয়েছে পাঞ্জাবে। ২৫ সেপ্টেম্বর একাধিক কৃষক সংগঠন সর্বাত্মক বনধের ডাক দিয়েছে কৃষক সংগঠনগুলি। ওই দিন ভারত বনধের ডাক দিয়ে রেখেছে কিষাণ সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি। তাদের দাবি, হরিয়ানা, রাজস্থান-সহ কিছু রাজ্যে সর্বাত্মক বন্ধ হবে। অন্য রাজ্যগুলিতে বিক্ষোভ হবে। তারই অঙ্গ হিসেবে ২৫ তারিখ বাংলায় জাতীয় ও রাজ্য সড়কে চার ঘণ্টা করে অবরোধের ডাক দেওয়া হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার মোদী মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন শিরোমণি অকালি দলের নেত্রী হরসিমরত কউর বাদল। হরিয়ানায় বিজেপি সরকারের শরিক দল জেজেপি বেঁকে বসেছে। দলের কয়েকজন বিধায়ক আন্দোলনকারী কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সোনপত, পাটিয়ালা, রোহতক–সহ নানা জায়গায় রাস্তা অবরোধে নেমে পড়েছেন কৃষকেরা। পোড়াচ্ছেন মোদীর কুশপুতুল। রবিবার সকালে হরিয়ানার শাহাবাদের জেজেপি বিধায়ক রামকরণ কালা আন্দোলনকারী কৃষকদের সঙ্গে দেখা করে বিল প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘আমি কৃষকের পাশে রয়েছি। বিতর্কিত বিলগুলি সংসদে পেশ করার আগে কৃষক, কৃষক সংগঠন, রাজ্য সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল সরকারের। এখনও সময় আছে, বিল প্রত্যাহার করুক সরকার। আন্দোলনকারী কৃষকের ওপর যারা লাঠি চালিয়েছে, তাদের খুঁজে বের করে শাস্তি দিতে হবে। সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।’
এদিকে বাংলায় কিষাণ সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির রাজ্য শাখার আহ্বায়ক অমল হালদার রবিবার ঘোষণা করেছেন ২৫ তারিখ বিক্ষোভের কর্মসূচী। তিনি জানিয়েছেন, ওই দিন গ্রামীণ জেলাগুলিতে গঞ্জ ও বাজার এলাকায় প্রতিবাদ বা বিক্ষোভ-সভা হবে। তার পাশাপাশি জাতীয় ও রাজ্য সড়কে (হাইওয়ে) দুপুরে অবরোধেও শামিল হবেন কৃষক সংগঠনের কর্মী-সমর্থকেরা। তিনি বলেন, ছাত্র, যুব সমাজ, শ্রমজীবী-সহ সব ধরনের মানুষের কাছে আবেদন, কেন্দ্রীয় সরকারের এই বিলগুলির প্রতিবাদ করুন। দেশের কৃষক সমাজকে বাঁচাতে এই প্রতিবাদ জরুরি। অমলবাবুদের অভিযোগ, ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নিশ্চিত থাকবে বলে কেন্দ্র আশ্বাস দিলেও তাদেরই গঠিত শান্তা কুমার কমিটি রিপোর্টে বলেছে, মাত্র ৬ শতাংশ কৃষক সহায়ক মূল্যের সুবিধা পান! এফসিআই এবং নাফেডের মাধ্যমে শস্য সংগ্রহও তারা বন্ধ করে দিতে চায়। তৃণমূলের সাংসদ তথা আইএনটিটিইউসি নেত্রী দোলা সেনের বক্তব্য, ‘দেশের কৃষি ও কৃষকদের স্বার্থরক্ষা করতে হলে এই বিল মানা যায় না।’