বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা তো বলেনই, খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও এ কথা বারবারই বলে থাকেন, ‘মোদী হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়’। এবারও তাই-ই হল। এবার অর্থহীন হয়ে যেতে বসেছে ছ’বছরের পরিশ্রম, রাজকোষের ১৬০০ কোটি টাকা খরচ, হেনস্থা ও বহু মৃত্যুর নিটফল। হ্যাঁ, শীঘ্রই বাতিল হতে পারে আসামের জাতীয় নাগরিকপঞ্জী তালিকা। রাজ্যসভায় সেই ইঙ্গিতই দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি জানান, গোটা দেশের সঙ্গেই আসামে নতুন করে এনআরসি হবে। যার সূত্র ধরে আসামের অথর্মন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মাও জানান, রাজ্যে হওয়া এনআরসি পুরোপুরি বাতিল করে সারা দেশের সঙ্গে আসামেও নতুন করে এনআরসি হোক।
প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে আসামে হওয়া এনআরসিরর চূড়ান্ত তালিকায় বাদ যান ১৯ লক্ষ মানুষ। যাদের মধ্যে অন্তত ১৩-১৪ লক্ষই হিন্দু। স্বাভাবিকভাবেই তালিকা প্রকাশ হতেই অস্বস্তিতে পড়ে যায় শাসক দল বিজেপি। ওই এনআরসি সঠিক নয় সেই যুক্তিতে সরব হন খোদ রাজ্যের মন্ত্রী হিমন্তও। এনআরসিতে বেশির ভাগ হিন্দুদের নাম বাদ পড়ায় ভোট ব্যাঙ্কে বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলে শীর্ষ নেতৃত্বকে জানায় আসাম বিজেপি। চাপ বাড়াচ্ছিল সঙ্ঘ পরিবারও। এই পরিস্থিতিতে আসামে নতুন করে এনআরসি হবে বলে বিতর্ক তৈরি করেন শাহ। সরকারের ওই সিদ্ধান্তের পর এনআরসি মামলার মূল আবেদনকারী আসাম পাবলিক ওয়ার্কসের সভাপতি অভিজিৎ শর্মা বলেন, ‘১৬০০ কোটি টাকা খরচের সম্পূর্ণ অডিটও হোক।’
উল্লেখ্য, আসাম চুক্তি অনুযায়ী ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চকে এনআরসি তৈরির ভিত্তিবর্ষ বলে ধরা হয়েছিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, ভবিষ্যতে দেশের সব রাজ্যে যখন এনআরসির কাজ শুরু হবে তখন অতীতের একটি নির্দিষ্ট দিনকে ধরে তার ভিত্তিতে তালিকা তৈরি হবে। কোন বছরের কোন তারিখের ভিত্তিতে ওই কাজ শুরু হবে তা এখনও ঠিক হয়নি। তবে ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ ভিত্তিবর্ষ হচ্ছে না। তাই মন্ত্রকের যুক্তি, এক দেশে দু’টি ভিত্তিবর্ষ হতে পারে না। তাই গোটা দেশে যে ভিত্তিবর্ষ ধরা হবে, সেটির হিসাবে আসামেও নতুন তালিকা তৈরি করা হবে। তবে বিরোধীদের মতে, এনআরসি-তে হিন্দুরা বাদ যাচ্ছেন বলে যে প্রচার শুরু হয়েছে তা আটকাতেই ১৬০০ কোটি টাকা জলাঞ্জলি দিতে চান মোদী-শাহেরা।
কিন্তু প্রশ্ন হল, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে করা তালিকা এভাবে বাতিল করা কি শীর্ষ আদালতের অবমাননা নয়? মন্ত্রক জানিয়েছে, ওই তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু তার পরে কী হবে তা নিয়ে কোনও নির্দেশ দেয়নি তারা। আইনের সেই ফাঁক দেখিয়ে এখন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে হওয়া এনআরসি কার্যত বাতিল করতে চাইছে কেন্দ্র।কংগ্রেস মুখপাত্র অভিজিৎ মজুমদারের মতে, ‘নোটবন্দী, জিএসটির পরে এনআরসি বাতিল বিজেপির তুঘলকি শাসনের আরও এক নজির। ১৬০০ কোটি টাকা খরচ হল, কোটি কোটি মানুষ হয়রান হলেন, বহু আত্মঘাতী হলেন। সেই ক্ষতিপূরণ কে দেবে? এনআরসি বাতিল অবশ্যই সুপ্রিম কোর্টের অবমাননা।’