বাঙালির বারো মাসের তেরো পার্বণের একটি হল জামাইষষ্ঠী। এই একদিন বাঙালি সাজে ধুতি-পাঞ্জাবি পরে হাতে মিষ্টির হাড়ি নিয়ে সক্কাল সক্কাল শ্বশুরবাড়ি হাজির হয়ে যান জামাইরা। শাশুড়ি মা উপবাস রেখে পরম যত্ন করে করেন জামাই সেবা। এ তো গেল পশ্চিমবঙ্গের ব্যাপার। আর ওপার বাংলার রীতি কি? মানে বাংলাদেশে কী হয় সেটা তো অনেকই জানেন না৷ সেখানে যেমন জামাইষষ্ঠী হয় তেমনই হয় মজাদার জামাই মেলা। অবিভক্ত বাংলাদেশে ইংরেজ আমল থেকেই চল এই ‘জামাই মেলা’র। ভারতে তথা বঙ্গ প্রদেশে এই মেলার চল না থাকলেও ওপার বাংলায় এখনও সুপার হিট ‘জামাই মেলা’। বাংলাদেশের টাঙ্গাইল থেকে বগুড়া সমস্ত অঞ্চলেই জমিয়ে পালিত হয় ‘জামাই মেলা’!
মূলত বাংলাদেশে দুটি স্থানের জামাই মেলা বিখ্যাত৷ একটি হল টাঙ্গাইল অন্যটি হল বগুড়া৷ দেশভাগের অনেক আগে থেকেই তৎকালীন পূর্ববঙ্গ বা পরে পূর্ব পাকিস্তান আরও পরে বাংলাদেশ তৈরি হলেও আরও পরে সেখানে বসবাসকারী সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবারগুলি চিরাচরিত প্রথায় জামাই বরণ করে থাকেন৷
প্রতিবছরই বাংলা মাস অনুযায়ী বৈশাখ মাসের ১১, ১২ ও ১৩ তারিখ টাঙ্গাইল সদর উপজেলার রসুলপুর বাছিরননেছা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে বসে জামাই মেলা। এই মেলাকে কেন্দ্র করে এলাকার জামাইয়েরা শ্বশুরবাড়ি আসেন। মেলার মূল আকর্ষণ তাঁরাই। এই তিন দিন রসুলপুর সহ আশপাশের অন্তত ৩০টি গ্রামের মানুষের সমাগম ঘটে। মেলা প্রাঙ্গনে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসেন দোকানিরা। বসে রকমারি খাবার, মিষ্টান্ন দ্রব্য, প্রসাধনী জিনিসপত্র, খেলনার শতাধিক পসরা।
মেলার উৎপত্তি নিয়ে দ্বন্দ্ব থাকলেও এলাকাবাসীদের থেকে জানা যায়, মেলা বহু যুগের প্রাচীন। বৈশাখী মেলা হিসেবে ব্রিটিশ আমলে শুরু হলেও এখন এটি ‘জামাই মেলা’ হিসেবেই পরিচিত। গ্রামের বিবাহিত মেয়েরা স্বামীকে নিয়ে বাবার বাড়ি আসেন। জামাইকে মেলা উপলক্ষে বরণ করে নেওয়ার জন্য শ্বশুর-শাশুড়িরা বেশ আগে থেকেই নেন নানা প্রস্তুতি।
বাংলাদেশের উত্তরে বগুড়া জেলার সদর থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে পোড়াদহ নামক স্থানে বসে সুপ্রাচীন ‘জামাই মেলা’। ধর্ম,বর্ণ, মত নির্বিশেষে এই মেলা এক মিলন ক্ষেত্র। ব্রিটিশ আমল থেকেই চলে আসছে এই মেলা। প্রতি বছর ১ চৈত্র থেকে শুরু হয়ে ৩ চৈত্র পর্যন্ত চলে এই মেলা। মেলা উপলক্ষে পুতুলনাচ, নাগরদোলা ও লাঠি খেলার আসর বসে৷