২৩ মে লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকেই আরও আগ্রাসী হয়ে উঠেছে গেরুয়া শিবির। দিকে দিকে তৃণমূল কর্মীদের ওপর চলছে মারধর, ঘর ভাঙচুর, ঘরছাড়া করার হুমকি। এরপরই দলীয় নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত করার দায়িত্ব মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তুলে দেন পরিবহণ তথা সেচ ও জলসম্পদ দফতরের মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর কাঁধে। আর দায়িত্ব পেয়েই শাসক দলের কর্মী-সমর্থকদের ফের চাঙ্গা করতে রাস্তায় নেমে পড়েছেন খোদ মন্ত্রী। দলীয় নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত করতে বুধবারের পরে বৃহস্পতিবারও খেজুরির ঠাকুরনগর থেকে জরানগর পর্যন্ত ধিক্কার মিছিলে হাঁটলেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গতকাল খেজুরি বিধানসভার ঠাকুরনগর থেকে জরারনগর পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার রাস্তাজুড়ে আয়োজিত এই পদযাত্রা রীতিমতো মহামিছিলের চেহারা নেয়। ভোট পরবর্তী সময়ে এলাকায় বিজেপির সন্ত্রাস ঠেকাতে, শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এবং নেতা-কর্মীদের রাজনৈতিকভাবে চাঙ্গা করার জন্যই খেজুরি-১ ব্লক তৃণমূল এই পদযাত্রার ডাক দিয়েছিল। ঠাকুরনগরে দোলমেলা প্রাঙ্গণে দীঘা-নন্দকুমার ১১৬বি জাতীয় সড়ক থেকে পদযাত্রাটি শুরু হয়। তার আগে দলীয় নেতা-কর্মী-সমর্থকরা সেখানে জমায়েত করেন।
পদযাত্রাকে ঘিরে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যে উৎসাহ, আবেগ ও উচ্ছ্বাস ছিল নজরকাড়া। পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষ পদযাত্রায় শামিল হন। নেতা-কর্মীদের স্লোগান এবং বিভিন্ন ধরনের বাদ্যযন্ত্রের মিশেলে পদযাত্রাটি বেশ জমজমাট হয়ে ওঠে। এদিন শুভেন্দুবাবুকে কাছে পেয়ে রীতিমতো চাঙ্গা হয়ে ওঠেন খেজুরি এলাকার নেতা-কর্মীরা। পদযাত্রার সঙ্গে বন্দেমাতরম এবং ‘শুভেন্দুদা তুমি এগিয়ে চল, আমরা তোমার সঙ্গে আছি’, কখনও আবার ‘বিজেপির সন্ত্রাস মানব না’-সহ নানা ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে আকাশ-বাতাস। এক একটা সময় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে স্লোগান দিতে দেখা যায় মন্ত্রীকেও।
মন্ত্রীর সঙ্গে গতকালের পদযাত্রায় পা মেলান খেজুরির বিধায়ক রণজিৎ মণ্ডল, জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম দাস, জেলা পরিষদ সদস্য বিমান নায়ক সহ অন্যান্যরা। খেজুরি কলেজ, মুগবেড়িয়া কলেজ, বাজকুল কলেজের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্যরা এবং পার্শ্ববর্তী ভগবানপুর বিধানসভার বহু নেতা-কর্মী-সমর্থকও ওই পদযাত্রায় শামিল হন। জাতীয় সড়ক ধরে পদযাত্রাটি হেঁড়িয়া হয়ে ঘুরে হেঁড়িয়া-ইটাবেড়িয়া রাস্তার খেজুরির জরারনগর মসজিদের কাছে গিয়ে শেষ হয়।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে শুভেন্দু বলেন, বিজেপির এই জয়ে আমাদের নেতা-কর্মীদের নিরুৎসাহ হওয়ার কিছু নেই। বরং রাজ্যে আমাদের ফল ভালো হয়েছে। আমরা ২২টি আসনে জিতেছি। সিপিএমের লোকেরা লাল জামা পাল্টে গেরুয়া জামা পরে এলাকায় সন্ত্রাস চালাচ্ছে। আমরা এর আগে সন্ত্রাস রুখে দিয়েছি। আবারও রুখব। আমরা বিজেপির সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছি। ওদের প্ররোচনায় মানুষকে পা না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আগামী দিনগুলিতে এলাকায় এলাকায় আমরা পদযাত্রা করব। সকলকে একজোট হয়ে চলার আবেদন জানাব।
পদযাত্রা শেষে সন্ধ্যায় উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় রাজ্যে মেধাতালিকায় দ্বিতীয় স্থানাধিকারী বাজকুল বলাইচাঁদ বিদ্যাপীঠের ছাত্র তন্ময় মেইকাপের বাজকুলের বাড়িতে যান মন্ত্রী। তন্ময় এবং তাঁর বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। তন্ময়কে পুষ্পস্তবক ও অন্যান্য উপহারসামগ্রী দিয়ে সংবর্ধিত করা হয়। সাংবাদিকদের শুভেন্দু জানান, এর আগে মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভগবানপুর এলাকারই বাসিন্দা সৌগত দাস রাজ্যে প্রথম হয়েছিল। সেই ভগবানপুরেরই বাসিন্দা তন্ময় উচ্চমাধ্যমিকে রাজ্যে দ্বিতীয় হয়েছে। মেদিনীপুরের বাসিন্দা হিসেবে আমার এতটা আনন্দ হচ্ছে যে, বলার মতো ভাষা নেই।