গত ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় সিআরপিএফ কনভয়ে হওয়া জঙ্গী হামলার বদলা নিতেই ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানের বালাকোটে জইশ-ই-মহম্মদের প্রশিক্ষণ শিবিরের ওপর বিমান হামলা চালায় ভারতীয় বায়ুসেনা। এরপর মোদী সরকার বালাকোটে শিবির গুঁড়িয়ে জইশ জঙ্গী মেরেছে বলে দাবি করতে শুরু করে। কত জঙ্গী নিকেশ হয়েছে, তার হিসেবও দিতে শুরু করে বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা। তবে বিশ্বের তাবড় তাবড় সংবাদ সংস্থাগুলির তরফে উপগ্রহ চিত্র দেখিয়ে দাবি করা হয়, জইশ ঘাঁটিগুলি এখনও অক্ষত রয়েছে। ভারতের নিশানা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছে। তবে এবার এক সংবাদ সংস্থা জানাল যে, ভারতীয় বায়ুসেনার রিপোর্টে বলা হয়েছে, নাকি সবটা পরিকল্পনামাফিক হয়নি। শেষ মুহূর্তে বদল করতে হয়েছিল ছক। আর তাই বালাকোটের জঙ্গী ডেরায় হামলার ভিডিও নেই বায়ুসেনার হাতে।
প্রসঙ্গত, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের বালাকোটে জইশ-ই-মহম্মদের ডেরায় হামলা চালায় বায়ুসেনা। পুলওয়ামার জবাব দিতেই ওই এয়ার স্ট্রাইক চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছিল মোদী সরকার। কিন্তু তার পর থেকে বালাকোট নিয়ে বিতর্ক চলছেই। একদিকে হামলার প্রমাণ নিয়ে যেমন প্রশ্ন তুলেছে বিরোধী দলগুলি। তেমনি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাও সন্দেহ প্রকাশ করেছে ওই এয়ার স্ট্রাইকের সাফল্য নিয়ে। সম্প্রতি বায়ুসেনার রিপোর্টে তার জবাব দেওয়া হয়েছে বলে দাবি ওই সংবাদ সংস্থাটির। দাবি করা হয়েছে, সে দিন বালাকোটের জঙ্গী শিবির ধ্বংস করতে ‘ক্রিস্টাল মেজ’ নামে একটি ইজরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র (আকাশ থেকে মাটিতে) ছোড়ার কথাও ছিল। হামলার পাশাপাশি গোটা ঘটনা ভিডিও করার বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে এই ক্ষেপণাস্ত্রটির। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ওই ক্ষেপণাস্ত্রটি আর ছোড়া সম্ভব হয়নি। আর তাই সেনার হাতে ভিডিও নেই।
এয়ার স্ট্রাইক ও জঙ্গী নিকেশের কোনও ভিডিও নেই, বায়ুসেনার এই স্বীকারোক্তির পড়েই মুখ পুড়েছে মোদী-শাহ থেকে শুরু করে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের, যাঁরা নিহত জঙ্গীর সংখ্যা নিয়ে নানা সময়ে নানা মন্তব্য করেছেন। হিসেব দিয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই এখন এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে যে, বায়ুসেনার হাতেই যখন হামলার ভিডিও নেই, তখন কীভাবে সরকারের তরফে মন্ত্রী থেকে শুরু করে বিজেপির সাংসদ-বিধায়করা নিহত জঙ্গীর সংখ্যা জানিয়েছিলেন? তা কি কেবল মাত্র জাতীয়তাবাদকে হাতিয়ার করে রাজনীতি করার জন্যই? লোকসভা নির্বাচনে ভোটবাক্সে এর ফায়দা তুলতে? বায়ুসেনার রিপোর্টের পরই মুখে কুলুপ বিজেপি নেতৃত্বের।
বায়ুসেনার ওই সূত্রটি সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছে, সে দিন মেঘ অনেকটা নীচে ছিল। তার জন্যেই পূর্ব নির্ধারিত ভাবে ‘স্পাইস ২০০০’-এর সঙ্গে ছ’টি ‘ক্রিস্টাল মেজ’ উৎক্ষেপণ করা যায়নি। ঠিক ছিল এক সঙ্গে হামলা করবে ‘ক্রিস্টাল মেজ’ ও ‘স্পাইস ২০০০’। শিবিরের উপরের তলায় হামলা চালানোর কথা ছিল ‘ক্রিস্টাল মেজ’-এর। নীচের তলায় আঘাত হানত অন্যটি। জঙ্গী নিধনের পাশাপাশি শিবিরটিকে সম্পূর্ণ গুঁড়িয়ে দেওয়া যেত তা হলে। জোড়া হামলা না হওয়ায় মিশন সম্পূর্ণ সফল হয়নি। আরও একটি বিষয় স্বীকার করে নিয়েছে ভারতীয় বায়ুসেনা। রিপোর্টে বলা হয়েছে, কার্গিল যুদ্ধের পর থেকে পাকিস্তানের বায়ুসেনা অনেক বেশি শক্তিশালী হয়েছে। তুলনায় ভারত কিছুটা পিছিয়ে। তারা জানিয়েছে, উপযুক্ত প্রযুক্তি হাতে থাকলে বালাকোটের পরে পাক বায়ুসেনার হামলার সময়ে তাদের আরও শিক্ষা দেওয়া যেত।
বায়ুসেনার এই স্বীকারোক্তি যে মোদী সরকারের অস্বস্তি বাড়াবে, তা বলাই বাহুল্য। উল্লেখ্য, সম্প্রতি বিদেশমন্ত্রী তথা বিজেপি নেত্রী সুষমা স্বরাজ জানিয়েছিলেন, পাকিস্তানের বালাকোটে ভারতীয় বায়ুসেনার বিমানহানায় মৃত্যু হয়নি কোনও পাক নাগরিকের, এমনকি নিহত হননি কোনও পাকসেনাও। যদিও বালাকোটের হামলায় জইশ-ই-মহম্মদের আদৌ কোনও জঙ্গী মারা পড়েছে কি না, তা নিয়ে সে’সময় কোনও মন্তব্য করেননি তিনি।