আগামীকাল, মঙ্গলবারই রয়েছে বহু প্রতীক্ষিত বিসর্জন কার্নিভাল। যা নিয়ে পুজোর আগে থেকেই মানুষের উন্মাদনা ছিল তুঙ্গে। আজ টুইট করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ‘আগামীকাল রেড রোডে বিসর্জন কার্নিভাল। কলকাতার সব পুরস্কার বিজয়ী দুর্গা পূজাগুলি এই শোভাযাত্রায় অংশ নেবে। সকলে আসুন, অংশগ্রহণ করুন।’ তিনি আরও জানান যে, আগামীকাল বিকেল ৪:১৫ মিনিট থেকে তাঁর ফেসবুক পেজে পুরো অনুষ্ঠানটি লাইভ দেখা যাবে।
বছর দুয়েক আগে থেকে রেড রোডে দুর্গাপুজো কার্নিভাল শুরু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। যা কম আকর্ষণীয় নয়। শুধু বর্ণাঢ্য বললে কম বলা হয়, এই অনুষ্ঠান যেন এক দিগন্তের দিকে সুদীর্ঘ যাত্রা। যে দিগন্তযাত্রায় উঠে আসে ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, সম্প্রীতির বিভিন্ন রং। সব রং মিশে তৈরি হয় এক আলোকিত বর্ণমালা। আগামী মঙ্গলবারই রয়েছে এ বছরের পুজো কার্নিভাল।
সেই কারণে রেড রোড ও সংলগ্ন চত্বরে এখন সাজো সাজো রব। চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়ার মতো আয়োজন চলছে জোরকদমে। কার্নিভালে অংশ নেবে ৭৫টি পুজো কমিটি। এর মধ্যে কলকাতা সহ সংলগ্ন শহরতলি, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার নজরকাড়া প্রতিমাও এবার দেখা যাবে কার্নিভালে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ বিদেশি অতিথিদের বসার জন্য তৈরি হয়েছে সুদৃশ্য মঞ্চ। রাজবাড়ির আদলে যে মঞ্চ তৈরি হয়েছে, তা কোনও নামকরা পুজো প্যান্ডেলের নান্দনিকতাকেও হার মানাবে। ঠিক উল্টোদিকের মঞ্চে বসবেন বিদেশি অতিথিরা।
রবিবার বিকেলে গিয়ে দেখা গেল, কার্নিভালের মূল রাস্তার পাশের বিভিন্ন রাস্তায় একাধিক দুর্গাপ্রতিমা ইতিমধ্যেই এসে গিয়েছে। সারি দিয়ে রেড রোডের একদিক দিয়ে ঢুকে অন্যদিক দিয়ে বেরিয়ে যাবে গঙ্গার দিকে। কার্নিভালের পর অনেকেই সরাসরি বাবুঘাটে গিয়ে প্রতিমা বিসর্জন করবে। আবার অনেকে প্রতিমা নিয়ে ফিরে যাবে নিজেদের জায়গায়।
২০১৬ সালে শুরু হওয়া এই পুজো কার্নিভালের দিন থেকেই এমনটা হয়ে আসছে। আগে এর জন্য আড়াই-তিন মিনিট সময় দেওয়া হলেও এবার কার্নিভালে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বাড়ায় সময় কমানো হয়েছে। এবার অংশগ্রহণকারী পুজোর সংখ্যা যেমন বেশি, তেমনি সারা বিশ্বের নজর কাড়তে জাঁকজমজকও গতবারের আয়োজনগুলিকে ছাপিয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এতবড় আয়োজনে নিরাপত্তার যাতে কোনও ফাঁক না থেকে যায়, তার জন্য রবিবার থেকেই তৎপর হয়েছে পুলিশ। মাঝেমাঝেই কুকুর এনে তল্লাশি ও নজরদারি চলছে। রেড রোডের দু’দিকে যে জায়গাগুলিতে অতিথিরা বসবেন, সেখানে এখন সাজানো চলছে চেয়ার।
নবান্ন সূত্রে খবর, সব মিলিয়ে মোট ২৬ হাজার দর্শনার্থীর বসার জন্য চেয়ারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এর বাইরেও হাজার পাঁচেক দর্শনার্থী যাতে কার্নিভাল চাক্ষুষ করতে পারেন, তার ব্যবস্থা থাকছে। রেড রোডে যান নিয়ন্ত্রণ শুরু হয়েছে এদিন থেকেই। কার্নিভালের দিন গাড়িঘোড়ার গতি যাতে শ্লথ না হয়, সেদিকে নজর দিতে এখন থেকেই তৎপর রয়েছে পুলিশ।
সবমিলিয়ে আজ থেকেই সাজো সাজো রব। গতকাল আবারও নাচে, গানে, বন্দনায় মুখর হয়ে উঠতে দেখা যাবে ইতিহাসের রেড রোডকে। আশ্বিনের সন্ধ্যায় এক ‘অন্য’ পুজোয় মেতে উঠবে গোটা মহানগর।