নোটবন্দী, জিএসটি-র পর নাগরিকপঞ্জি নিয়ে বিজেপি–র ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করতে চলেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সংগঠন বাড়িয়ে এবার আসাম থেকেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আরও জোরদার আন্দোলন করতে চান মমতা। আজ তাঁর নির্দেশে আসাম গিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী ও অসমের পর্যবেক্ষক ফিরহাদ হাকিম। এদিনই গুয়াহাটিতে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ের উদ্বোধন করবেন তিনি। দুপুর ২টোয় শুরু হয়েছে এই অনুষ্ঠান পর্ব। আজ ১২টা ৪০–এর বিমানে গুয়াহাটি গিয়েছেন ফিরহাদ। গুয়াহাটি ছাড়াও বরপেটা, করিমগঞ্জ থেকে তৃণমূল কর্মীরা এসেছেন বলে জানা গিয়েছে। এছাড়া সব জেলার নেতাদেরও ডাকা হয়েছিল।
নাগরিকপঞ্জি নিয়ে তাঁরা কী ভাবছেন, পরবর্তী কর্মসূচি কী হবে, এইসব নিয়ে ফিরহাদ বিস্তারিত আলোচনা করবেন। পাশাপাশি নাগরিকপঞ্জি নিয়ে বাংলায় আন্দোলন চলবে। বুধবার মহাকরণে ফিরহাদ হাকিম জানান, ‘তৃণমূলের প্রতি সমর্থন ক্রমশই বাড়ছে। লোকজন মমতার কথা শুনে তৃণমূল করতে আসছেন।’ এদিকে, নাগরিকপঞ্জি ঘোষণা হওয়ার পর দেখা গেল আসাম থেকে ৪০ লক্ষ মানুষের নাম বাদ চলে গেল। ক্ষোভ জানালেন মুখ্যমন্ত্রী। কলকাতা–সহ বিভিন্ন জেলায় মিছিল হল। মমতা জানিয়ে দিলেন নাগরিকপঞ্জি নিয়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করা পর্যন্ত আসামের পাশে থাকবে বাংলা। তৃণমূল যুব কংগ্রেস সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিলেন, তাঁদের আন্দোলন চলবে। মমতা বলে দিলেন, ‘বাংলায় নাগরিকপঞ্জি করতে এলে দেখিয়ে দেওয়া হবে, এখানে বাঘের বাচ্চারা বসে আছেন।’ ফিরহাদ বলেন, ‘আসামে এখনও দলের সভাপতি করা হয়নি। কাজ করার জন্য ওয়ার্কিং গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে। ওঁদের সঙ্গে আরও আলোচনা করতে হবে।’
নাগরিকপঞ্জি ঘোষণার পর মমতা দলের এক প্রতিনিধিদলকে শিলচরে যাওয়ার জন্য পাঠিয়েছিলেন। বিমানবন্দরে প্রতিনিধিদলকে আটকে দেওয়া হয়। শিলচর তাঁদের যাওয়া হয় না। এরপর ফিরহাদ হাকিম ক্রমাগত অসমে বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করেন। মুখ্যমন্ত্রীকে সব জানান। তারপরই দলীয় কার্যালয় করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০১৯–এ লোকসভা নির্বাচন। এই নির্বাচনে বিজেপিকে কেন্দ্র থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যে বিভিন্ন রাজ্যের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে জোট বাঁধার প্রস্তুতির ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েছেন। তিনি বারবারই বলেছেন, বিরোধী জোট শক্তিশালী হলে বিজেপির পরাজয় অবশ্যম্ভবী। বিভিন্ন সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘বিজেপি নাগরিকপঞ্জি করে শুধু বাঙালিদের নয়, অন্য ভাষীদেরও নাম বাদ দিয়ে দিয়েছেন। এমনকী কোপ মারা হয়েছে অসমিয়াদের ওপরও। দেশকে তাঁরা টুকরো করতে চাইছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে চাইছে। একটাই লক্ষ্য দাঙ্গা বাধিয়ে দেওয়া।’ গতকাল মহাকরণে বসে ফিরহাদ বলেন, ‘শিলচরে যাওয়ার জন্য সাংসদদের সঙ্গে আমিও ছিলাম। আমাকেও যেতে দেওয়া হয়নি। কেস দেওয়া হয়েছে। অসমে গিয়ে বুঝতে পারব, কী অবস্থায় আছে।’ তৃণমুল ভবন উদ্বোধনের পাশাপাশি, আসামে দলের সংগঠন আরও মজবুত করার দিকে নজর দিয়েছেন মমতা। এখন থেকে বাংলা এবং দিল্লীর সঙ্গে আসাম থেকেও বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাবে তৃণমুল।