আমরা সবাই জানি নিয়মিত মেডিটেশন করলে স্ট্রেস ধারেকাছে ঘেঁষবেনা। মনঃসংযোগ করার ক্ষমতা বাড়বে। একটা ফিল গুড ফ্যাক্টর তৈরি হবে। তালিকাটা বাড়তেই থাকবে। তাই সব মিলিয়ে বলা যায় নিয়মিত মেডিটেশন একটা হেলদি লাইফস্টাইলের জন্য বেশ উপকারী।
কিন্তু সমস্যা হলো দুটো। এক মেডিটেশন করার নানা প্রক্রিয়া রয়েছে। তার মধ্যে থেকে কোনটা বেছে নেবেন, কোনটা আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো হবে তাই নিয়ে কনফিউশন।
দ্বিতীয় সমস্যাটি হলো মেডিটেশন করতে বসলেই একটু পর থেকেই উশখুশ করতে শুরু করে মন। কিন্তু এইটাই মেডিটেশনের প্রাথমিক শর্ত। আসলে খানিকক্ষণ স্থির হয়ে বসে থাকাটাই আপনার ধাতে নেই। চোখ চলে যায় ঘড়ির দিকে। নির্দিষ্ট সময় শেষ হতে আর কতটা সময় বাকি আছে। শুধু তাই নয় মনের মধ্যে হাজারটা চিন্তা ভিড় করে। এই সবের ঝক্কিতে অনেকে মেডিটেশন করতেই চান না।
তবে পুরো প্রক্রিয়াটা উপভোগ করতে শুরু করলে এটা কোনও সমস্যাই নয়। রইল সহজ সমাধান।
প্রথম সমস্যাটির সমাধান একটাই। যদি সত্যিই নানা ধরনের মেডিটেশন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চান, বা বিশেষ কোনও প্রক্রিয়া ট্রাই করতে চান, তাহলে পেশাদার সাহায্য নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
দ্বিতীয় সমস্যাটি বরং আপনি নিজেই সমাধান করতে পারবেন। সারাদিনের মধ্যে একটা নির্দিষ্ট সময় স্থির হয়ে বসে, মনকে শান্ত করা যদি আপনার মেডিটেশনের লক্ষ্য হয় তাহলে কয়েকটা সহজ টিপস ট্রাই করে দেখতে পারেন।
প্রথমেই বলি, মেডিটেশনের নিয়ম কানুন নিয়ে বেশি চিন্তা করার দরকার নেই। যেভাবে কমফোর্টেবল সেভাবে বসুন। যোগা ম্যাটের উপর সুখাসনে বসেই যে মেডিটেশন করতে হবে তার কোনও মানে নেই। চেয়ারে বা সোফায় বসে এমনকি শুয়ে শুয়েও মেডিটেশন করা যায়। শুধু মাথায় রাখুন মেডিটেশন করার সময় শরীরটা যেন টানটান থাকে।
অনেকক্ষণ স্থির হয়ে চোখ বুজে বসে থাকতে অনেকেই পারেন না। তাই অনেকের পক্ষেই মেডিটেশন করাটা একটা চ্যালেঞ্জ। যারা প্রথম শুরু করছেন তাঁরা বরং প্রথম প্রথম অল্প সময়ের জন্য মেডিটেশন করা শুরু করুন। দুই-তিন মিনিট প্রথম প্রথম যথেষ্ট। সপ্তাহ খানেক বাদে সময় বাড়ান। দেখুন স্থির হয়ে বসে থাকাটা কোনও সমস্যাই নয়।
মেডিটেশন করার সময় নানা রকমের চিন্তা মাথায় আসে। এই নিয়ে চিন্তিত না হয়ে আপনি নিঃশ্বাসের উপর মনঃসংযোগ করুন। আরও একটা সহজ টিপ মেনে দেখতে পারেন। চোখ বুজে জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে নিতে ১০০ গুনুন। দেখবেন কোনও চিন্তা মাথায় আসছেনা। তবে প্রথম প্রথম নিঃশ্বাসের উপর মনঃসংযোগ করতে গিয়ে এক চান্সেই সফল হবেন, তার কোনও মানে নেই। দেখবেন কোন ফাঁকে আপনি আবার কিছু বিষয় নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন। আবার এক থেকে গুণতে শুরু করুন। এটা আসলে অভ্যাসের ব্যাপার।
প্রথম প্রথম দিনের শুরুতেই মেডিটেশন করার চেষ্টা করুন। মেডিটেশন শেষ হয়ে গেলেও সঙ্গে সঙ্গে উঠে পড়বেননা। কিছুক্ষণ স্থির হয়ে থাকলে যে শান্ত ভাব তৈরি হয়, তার রেশ নিজের মধ্যে থেকে যেতে দিন। ধীরে ধীরে হাত পা স্ট্রেচ করে মেডিটেশন পজিশন থেকে উঠুন। তাড়াহুড়ো না করে শান্তভাবে দিন শুরু করুন।
এসব না ইচ্ছে হলে, আপনি একটা মেডিটেশন ন্যাপ নিতে পারেন। সুগন্ধী মোমবাতি জ্বালাতে পারেন। বিশেষ মেডিটেশন ক্যান্ডেল ব্যাবহার করতে পারেন। সুদিং মিউজিক চালান। চোখ বন্ধ করে লম্বা হয়ে শুয়ে ধীরে ধীরে নিঃশ্বাস নিতে থাকুন। স্লিপ মাস্ক ব্যবহার করা যেতে পারে। পরিবেশটা উপভোগ করার চেষ্টা করুন। মেডিটেশন ন্যাপের সময় আপনি মুখে আপনার পছন্দের কোনও প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি কোনও ফেস মাস্ক লাগিয়ে নিতে পারেন। বা ন্যাপ নেওয়ার আগে সারা শরীরে অয়েল ম্যাসাজ নিতে পারেন।
অফিসে বসেও কিন্তু মেডিটেশন ন্যাপ নেওয়া যেতে পারে। আপনার ডেস্কটা পরিষ্কার করে নিন। এবার কানে পছন্দের হেডফোন লাগিয়ে ডেস্কের উপর মাথা রেখে নিঃশ্বাস নিন।
একা একা মেডিটেশন করতে ভালো না লাগলে, কোনও বন্ধু জুটিয়ে নিন। বা পরিবারের অন্যদের সঙ্গেও একটা নির্দিষ্ট সময় বার করে মেডিটেশন করা যেতে পারে। কোনও মেডিটেশন সেন্টারে যোগ দিতে পারেন
এইভাবেই আপনার সুবিধে মতো মেডিটেশনকে আপনার দৈনন্দিন জীবনের একটা জরুরি কাজ হিসেবে দেখুন। উপভোগ করতে শিখুন। দেখবেন একটা ফিল গুড ফ্যাক্টর কখন তৈরি হয়ে গেছে। আপনি জানতেও পারেন নি।