বাংলার মাটিতে দাঁড়িয়ে বাংলা ও বাঙালী বিরোধী ‘অসত্য’ ভাষণের ফুলঝুড়ি ছুটিয়েছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। ওনার ‘অসত্য’ দাবি বনাম বাংলার মাটির বাস্তবতা তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য।
১. দাবি- পুরুলিয়াতে মহিলাদের ৫ কিমি হেঁটে জল আনতে হয়।
বাস্তব – ১,২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজ্যের সবচেয়ে বড় পানীয় জল প্রকল্প তৈরি হচ্ছে পুরুলিয়ায়। পুরুলিয়া পৌরসভা দৈনিক জল সরবরাহ ৪৫ লাখ লিটার থেকে বাড়িয়ে করেছে ৮৫ লাখ লিটার। তেলেডি এবং শিমুলিয়ায় ৭ টি নদী-গর্ভস্থ নলকূপ বানানো হচ্ছে। বাঘমুন্ডি ব্লকে ১৬ টি ট্যাপের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং রঘুনাথপুর ও হীরায় ২ টি পানীয় জল প্রকল্প স্থাপিত হয়েছে।
২. দাবি- মানুষ এখনও অন্ধকারে বাস করছেন।
বাস্তব- ‘সবার ঘরে আলো’ প্রকল্পের অধীনে গ্রামীণ এলাকায় ১০০% বিদ্যুতায়ন করা হয়েছে।
৩. দাবি- কোনও কাজ নেই। মানুষ এখনও বেকার।
বাস্তব- গত ৭ বছরে ৯০ লাখ কর্মসংস্থান হয়েছে এবং বেকারত্বের হার ৪০% কমেছে ।
পুরুলিয়া জেলায়- ‘আনন্দধারা প্রকল্পে’ ৩০,০০০ হাজার স্বনির্ভর গোষ্টী স্থাপিত করা হয়েছে ।
স্বামী বিবাকানন্দ স্বনির্ভর কর্মসুচী প্রকল্পের মাধ্যমে ৮,০০০ উদ্যোগকে ৫৪ কোটি টাকা অনুদান প্রদান করা হয়েছে ।
জঙ্গলমহলের ৩৩,০০০ যুবকদের পুলিসে চাকরী পাওয়ার সুবিধার্থে এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্কে নথিভুক্ত করা হয়েছে।
স্থানীয় মানুষের সুবিধার্থে ২৬ টি কর্মতীর্থ বানানো হয়েছে ।
‘গতিধারা প্রকল্পের’ সাহায্যে ২২০ জন যুবক বানিজ্যিক ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য গাড়ী কিনতে পেরেছেন।
৪. দাবি- বাংলা একসময়ে দেশের ২৫% জিডিপি-র ভাগীদার ছিল, এখন মাত্র ৪% ।
বাস্তব- বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার আগে বাংলার জিডিপি তলানিতে ঠেকেছিল এবং ঋণের পরিমান ছিল আকাশছোঁয়া। কিন্তু গত সাত বছরে বাংলার অর্থনৈতিক হাল ক্রমশঃ উর্দ্ধমুখী ।
গত ৭ বছরে দেশের থেকে অনেক বেশী হারে (প্রায় দ্বিগুণ) বাংলার অর্থনৈতিক বৃদ্ধি হয়েছে। এছাড়াও রাজ্যে রাজস্ব সংগ্রহ বেড়েছে দ্বিগুণ।
৫. দাবি- তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার সময় রাজ্যের ঋণ ছিল ২ লক্ষ কোটি টাকা, তা এখন ৩.৫ লক্ষ কোটি টাকা
বাস্তব- বর্তমান রাজ্য সরকার কেন্দ্রকে ২.১৪ লক্ষ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। ৭০% টাকা খরচ হয়েছে পুর্বতন ঋণ পরিশোধের জন্য। আগে রাজ্যে যেখানে ঋণ এবং জিএসডিপি অনুপাত ছিল ৫০% বেশী, তা এখন কমে হয়েছে ৩৩%।
৬. দাবি- রাজ্যে ব্যাঙ্ক থেকে নতুন ঋণ দেওয়া হয়নি ।
বাস্তব- ২০১১-২০১৮ সময়কালে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে ব্যাঙ্ক থেকে সব থেকে বেশি ঋণ দেওয়া হয়েছে বাংলায়, যার পরিমান প্রায় ২৪,২৭২ কোটি টাকা।
২০১-১৩ সালে, সমগ্র রাজ্যের স্বনির্ভর গোষ্ঠীরা ১৬ হাজার কোটি টাকা ব্যাঙ্ক ঋণ পেয়েছে, যার মধ্যে ৮ হাজার কোটি টাকা ২০১৭-১৮ সালেই দেওয়া হয়েছে। ওই বছরে ৪ লক্ষ ৪০ হাজারেরও বেশি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে ক্রেডিট লিঙ্ক করা হয়েছে।
৭. দাবি- বাংলায় নতুন কোনও শিল্প স্থাপণ হয়নি।
বাস্তব- গত সাত বছরে শিল্পোৎপাদনের হার আড়াইশো শতাংশ বেড়েছে বাংলায়। শিল্প গড়ার সুবিধার ক্ষেত্রে বাংলা এখন ১ নম্বরে। লোডশেডিং এবং বনধ এখন ইতিহাস। ধর্মঘটের কারণে এখন আর কোন কোন কর্মদিবস নষ্ট হয়না, সেই সংখ্যা এখন শূন্য।
৮. দাবি- নরেন্দ্র মোদীর সরকার একটি নতুন স্বাস্থ্য বীমা ঘোষণা করেছে, কিন্তু বাংলা তা প্রত্যাখ্যান করেছে ।
বাস্তব- রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই একটি সফল স্বাস্থ্য বীমা ‘স্বাস্থ্য সাথী’ প্রকল্প চালু করেছে। এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫০ লক্ষ লোকের নাম এই প্রকল্পের আওতায় নথিভুক্ত হয়েছে। এই প্রকল্পের সুবিধা পাওয়া যাবে রাজ্যের ৮৫০ সরকারি হাসপাতাল ও নার্সিং হোমে। এ পর্যন্ত, ৯৬,০৮৮ জন রোগী এই প্রকল্পের মাধ্যমে উপকৃত হয়েছেন।
এই প্রকল্পের জন্য অর্থ দপ্তর ১৩৬৩.৭২ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে।
৯. দাবি- তৃণমূল কংগ্রেস যখন ইউপিএ -২ এর অংশ ছিল তখন ত্রয়োদশ অর্থ কমিশন থেকে বাংলা ১.৩২ লক্ষ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল। আর নরেন্দ্র মোদির সরকারের অধীনে, চতুর্দশ অর্থ কমিশন বাংলাকে ৩.৬ লক্ষ কোটি টাকা দিয়েছে।
বাস্তব- যদিও একদিকে চতুর্দশ অর্থ কমিশনে রাজ্যগুলির জন্য ডেভোলুশন এর পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে, অপরদিকে কেন্দ্রীয় প্রকল্প, অনুদান এবং ঋণের টাকা ১.৩৪ লক্ষ কোটি টাকা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। ২০১৫-১৬ সাধারণ বাজেটে, কেন্দ্র ৮টি প্রকল্পের টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে এবং ২৮ টি প্রকল্পের শেয়ারিং প্যাটার্ন পরিবর্তিত হয়েছে, এর মধ্যে রাজ্যের সঙ্গে শেয়ার সবচেয়ে বেশি।
পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে ‘শর্তাবলি ও সুপারিশ’ পরিবর্তন করে ’৭১-এর জনগণনাকে ‘ভিত্তিবর্ষ’ হিসেবে গ্রহণ করা হোক। প্রস্তাবিত হয়েছে, নতুন অর্থ কমিশন গঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সুপারিশ অনুমোদনের ক্ষেত্রে ২০১১–র আদমশুমারিকে কার্যকর করা হবে।
১০. দাবি- তৃণমূল সরকারের আমলে গরু পাচার ও বাংলাদেশের অনুপ্রবেশকারীদের প্রবেশ বেড়েছে।
বাস্তব- সীমান্তের দায়িত্ব বিএসএফ-এর। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিএসএফ। যদি প্রকৃতপক্ষে গবাদি পশু চোরাচালান ও অনুপ্রবেশ হয়ে থাকে তাহলে কেন বিএসএফ বা কেন্দ্র কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি?