পৃথিবীর প্রায় প্রত্যেকটিই উন্নয়নশীল দেশে জন্মনিয়ন্ত্রণের যাবতীয় উপায়ের প্রয়োগ হয় মূলত মহিলাদের শরীরকেন্দ্রিক। অথচ বিরাট সংখ্যক পুরুষ থাকে এই পদ্ধতি প্রয়োগের সম্পূর্ণ বাইরে। বাজারচলতি মেল কন্ট্রাসেপটিভ পিলের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ভয়ঙ্কর। সেক্ষেত্রে পুরুষদের জন্য কন্ট্রাসেপটিভ ইঞ্জেকশনের প্রয়োগমূলক পরীক্ষা চলছিল বহু বছর ধরেই। অবশেষে দীর্ঘ ৪৯ বছরের গবেষণা সফল। মেল কন্ট্রাসেপটিভ ইঞ্জেকশনের পরীক্ষায় চূড়ান্ত সাফল্য পেল ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)। ওই ওষুধ এখন বাজারে আসা স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। ‘ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়া’ (ডিসিজিআই)-এর সম্মতি পেলে ভারতীয় হবে বিশ্বের প্রথম দেশ, যারা পুরুষদের জন্মনিয়ন্ত্রণের ওপরে অভিনব পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে।
পুরুষদের ক্ষেত্রে জন্মনিয়ন্ত্রণের স্থায়ী পদ্ধতি বা ভ্যাসেক্টমির জন্য এতদিন অস্ত্রোপচারই চালু ছিল গোটা বিশ্বে। এবার বিকল্প পদ্ধতি হবে এই ইঞ্জেকশন। তবে দীর্ঘমেয়াদী জন্মনিয়ন্ত্রণে কার্যকরী হবে এই কন্ট্রাসেপটিভ ইঞ্জেকশন, কিন্তু স্থায়ী প্রভাব ফেলবে না। আইসিএমআর জানিয়েছে, এই ওষুধের কার্যকারিতা থাকবে ১৩ বছর। তারপর নিজে থেকেই এর প্রভাব বন্ধ হয়ে যাবে।
আইসিএমআরের গবেষক ডাক্তার আরএস শর্মা বলেছেন, ‘‘বহু বছরের পরীক্ষানিরীক্ষা সফল। ইঞ্জেকশনও বাজারে আনার জন্য আমরা প্রস্তুত। ড্রাগ কন্ট্রোলারের অনুমতি মিললেই ডাক্তাররা এর প্রয়োগ করতে পারবেন।’’ ডাক্তার শর্মার কথায়, তিনটি পর্যায়ে এর প্রয়োগ করে দেখা হয়েছে। ৩০৩ জন পুরুষের উপর ইঞ্জেকশনের প্রয়োগ ৯৭.৩ শতাংশ সফল। কোনও রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। মেল কন্ট্রাসেপটিভ ইঞ্জেকশনের গবেষণা শুরু হয়েছিল ১৯৭০ সালে।
আইসিএমআর জানাচ্ছে, সক্ষমতা বাড়া, কমা নির্ভর করে টেস্টোস্টেরন হরমোনের তারতম্যের উপর। তাই কৃত্রিম ভাবে ওষুধের সাহায্য টেস্টোটেরন হরমোন বাড়িয়ে কমিয়ে পরীক্ষা চালানো হত একসময়। কিন্তু দেখা গেছে, এইসব কন্ট্রাসেপটিভ পিলের প্রভাব মানব শরীরে মারাত্মক হয়। প্রায় ২০ শতাংশ পুরুষের মধ্যে ওজন বেড়ে যাওয়া, রক্তে কোলেস্টেরলের সাম্য নষ্ট হওয়ার সমস্যা দেখা যায়। এইসব ওষুধ যৌন উদ্দীপনা নষ্ট করে দেয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটা সময় দেখা গিয়েছিল এই ধরনের কৃত্রিম ওষুধ শুক্রাণু উৎপাদনের সক্ষমতা নষ্ট করে দিচ্ছে স্থায়ী ভাবে। ফলে ভবিষ্যতে সন্তানের জন্মও অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। তবে নতুন আবিষ্কৃত এই ইঞ্জেকশনে কোনও রকম শারীরিক ব্যধির জন্ম দেবে না। শুক্রাণু উৎপাদনের সক্ষমতার উপরেও স্থায়ী প্রভাব ফেলবে না।
এই কন্ট্রাসেপটিভ মূলত একধরনের পলিমার। ১৯৭০ সালে প্রথম এটি তৈরি করেছিলেন ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির অধ্যাপক এস কে গুহ। এরপর এই পলিমারের প্রয়োগ নিয়ে বিস্তর গবেষণা হয়েছে। ১৯৮৪ সাল থেকে এই পলিমারকে বাস্তবেই পুরুষ ভ্যাসেক্টমির জন্য প্রয়োগ করার পরীক্ষা শুরু করে আইসিএমআর। ডাক্তার শর্মা জানিয়েছেন, এই দীর্ঘ বছরের গবেষণা এতদিনে সফল হয়েছে।
এই কন্ট্রাসেপটিভকে বলা হচ্ছে ‘রিভার্সিবল ইনহিবিশন অব স্পার্ম আন্ডার গাইডেন্স’। এর মধ্যে রয়েছে স্টাইরিন ম্যালেইক অ্যানহাইড্রাইড। প্রথমে ইদুরের উপর এই ইঞ্জেকশনের পরীক্ষা করা হয়। তারপর মানুষের উপর প্রয়োগ করা হয়। দেখা গেছে এর কার্যকারিতা থাকবে ১৩ বছর। তারপর আপনা থেকেই ওষুধের প্রভাব বন্ধ হয়ে যাবে কোনও রকম শারীরিক সমস্যা ছাড়াই। বার্থ কন্ট্রোল পিলের চেয়ে এই কন্ট্রাসেপটিভ ইঞ্জেকশন অনেক সুরক্ষিত।