গত ৯ নভেম্বর, শনিবার অযোধ্যা মামলার ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে সুপ্রিম। শীর্ষ আদালতের নির্দেশ, বিতর্কিত ২.৭৭ একর জমিতেই তৈরি হবে রাম মন্দির। স্বভাবতই এরপরই জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছিল, বাবরি মসজিদের পক্ষে থাকা সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ড এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রিভিউ পিটিশন দাখিল করবে কি না। যদিও শনিবার বিকেলেই সেই জল্পনায় জল ঢেলে উত্তরপ্রদেশ সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান জাফর আহমেদ ফারুকি জানিয়ে দেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়কেই সম্মান দিচ্ছেন তাঁরা। তাই কোনও রিভিউ আবেদন জানানো হবে না। তবে মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড মনে করে, রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন জানানো উচিত।
এবার তাঁদের পাশে দাঁড়ালেন জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও দেশের প্রথম তথ্য কমিশনার (২০০৫–২০১০) ওয়াজাহাত হবিবুল্লা। সুপ্রিম কোর্টের রায়কে ‘ভুলে ভরা’ বলে মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, ভবিষ্যতে এই রায়ের কারণে অনেক আইনি সমস্যা হতে পারে। আবার কংগ্রেস রায়কে স্বাগত জানালেও কেরালায় ইউডিএফ-এর দ্বিতীয় বৃহত্তম শরিক ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ (আইইউএমএল)-এর সাংসদ-নেতা পি কে কুনহালিকুট্টি বলেছেন, এই রায় মুসলিম সমাজকে আহত করেছে। ইতিমধ্যে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী অযোধ্যায় মন্দির তৈরি ও মুসলিমদের বিকল্প জায়গা দেওয়ার জন্য ট্রাস্ট তৈরির প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে।
তবে অযোধ্যা নগরীর কর্তৃপক্ষ সূত্রের খবর, সেখানে মসজিদ গড়ার জন্য ৫ একর জমি নেই। আছে সরযূ নদীর অপর পাড়ে, যেখানে মুসলিম অধ্যুষিত গ্রামে একটি উপনগরী তৈরি করতে চায় যোগী আদিত্যনাথের সরকার। মসজিদের জন্য সেখানে ৫ একর জমি দেওয়ার পক্ষপাতী তাঁরা। তবে অযোধ্যা মামলার অন্যতম শরিক ইকবাল আনসারি ও আর এক শরিক অল ইন্ডিয়া মিল্লি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক খলিল আহমেদ খান বলেছেন, জমি যদি দিতেই হয় তাহলে তা দেওয়া হোক অধিগৃহীত ৬৭ একর এলাকার মধ্যে। নচেৎ নয়।
ওয়াজাহাত হবিবুল্লা বলেছেন, ‘আমার মনে হয় এই রায় ভুলে ভরা। আমি এই রায়কে গঠনমূলক বলব না। তবে এই রায় ধ্বংসাত্মকও নয়। কারণ এই রায়ে দুটি বড় সম্প্রদায়ের উদ্বেগের নিরসন করার চেষ্টা করা হয়েছে। যেমন বলা হয়েছে, মসজিদ ভেঙে ফেলা বেআইনি ছিল। এই কথাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ওখানে হিন্দুদের অধিকার ছিল, সে কথাও স্বীকার করা হয়েছে। তবে সেই অধিকারের চরিত্র নিয়ে রায়ের সঙ্গে আমার দ্বিমত রয়েছে।’ পুনর্বিবেচনার আবেদন প্রসঙ্গে হবিবুল্লা বলেছেন, ‘যেহেতু এই রায়ের প্রভাব ভবিষ্যতের বিভিন্ন মামলায় পড়বে, তাই সর্বোচ্চ আদালত নিজেদের রায় আর একবার খতিয়ে দেখলে ভালই হবে।’