রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই শিল্পে বিনিয়োগ এবং শিল্পের উন্নতি নিয়ে সচেষ্ট মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তাঁর ঐকান্তিক চেষ্টা যেমন রাজ্যের ধুঁকতে থাকা শিল্পক্ষেত্রগুলিতে নয়া প্রাণ সঞ্চার করেছে, তেমনি গড়ে উঠছে নানা শিল্পতালুকও। এবার মুখ্যমন্ত্রীর নেকনজরে ছোট ও মাঝারি শিল্প। যেহেতু এই শিল্পগুলি থেকে বড় মাপের কর্মসংস্থানের রাস্তা খোলে, তাই এর বহর বাড়াতে তৎপর রাজ্য সরকার। এখানে যাতে জমি কোনও সমস্যা না হয়, তার জন্য উদ্যোগী হয়েছে সংশ্লিষ্ট শিল্প দফতর।
এখনও পর্যন্ত রাজ্যের ১৮টি মহকুমায় ছোট শিল্পের পার্ক বা এস্টেট আছে। দফতর চায়, মহকুমা ধরে ধরে ছোট শিল্পের জন্য জমি বরাদ্দ করা হোক। তা যাতে করা যায়, তার জন্য আরও ৩৮টি মহকুমায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট বা পার্কের জন্য জমি চিহ্নিত করতে চায় ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প দফতর। সেই কাজ যাতে দ্রুত করা যায়, তার জন্য খাস জমি চিহ্নিত করতে ২১টি জেলার জেলাশাসককে চিঠি পাঠিয়েছিল রাজ্য ক্ষুদ্র শিল্প উন্নয়ন নিগম। তাতে ইতিমধ্যেই ১০০ একর জমির সন্ধান মিলেছে। ফের সেই কাজে গতি আনতে আবারও জেলাশাসকদের তদ্বির করা হচ্ছে।
বড় শিল্পের জন্য একলপ্তে জমি পাওয়া সমস্যা, এমন অভিযোগ ওঠে এ রাজ্যে। তার জবাব দিতে মুখ্যমন্ত্রী প্রায়শই বলে থাকেন, সরকারের হাতে যে ল্যান্ড ব্যাঙ্ক আছে, সেখানে অনায়াসেই কোনও বড় শিল্প হতে পারে। কিন্তু ছোট শিল্পের জন্য জমি কিনতে সমস্যা হতে পারে শিল্পপতিদের। সেই দিকটি মাথায় রেখেই সরকার নিজেই জমি কিনতে এগিয়ে আসে। রাজ্যের প্রায় প্রতিটি জেলাতেই গড়ে ওঠে শিল্প পার্ক ও এস্টেট। এখনও পর্যন্ত খাতায়-কলমে রাজ্য ক্ষুদ্র শিল্প উন্নয়ন নিগমের আওতায় আছে ৫২টি এস্টেট। তাতে আছে ৭৬৫ একর জমি।
প্রসঙ্গত, রাজ্যের বার্ষিক শিল্প সম্মেলন বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিটে ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেটগুলি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা গড়ে দেয় রাজ্য। কোথায় কোথায় জমি আছে, তার পরিকাঠামোই বা কী, তারই বিস্তারিত তথ্য শিল্পপতিদের সামনে তুলে ধরা হয়। সরকার বুঝিয়ে দেয়, ছোট শিল্পের জন্যও তারা ভিনরাজ্য বা বাইরের দেশের বিনিয়োগে আগ্রহী। তার জন্য আগে থেকেই সাজিয়ে রাখা হয়েছে জমি ও পরিকাঠামোর বরণডালা। সেই কাজটি যাতে আরও বিস্তারিত ও নিখুঁতভাবে করা যায়, তারই উদ্যোগ নিচ্ছে রাজ্য ক্ষুদ্র শিল্প উন্নয়ন নিগম।
নিগমের কর্তারা বলছেন, ছোট শিল্পের ক্ষেত্রে জমির পরিকাঠামো যেমন অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তেমনই তার অবস্থানও সমান গুরুত্বপূর্ণ। কোনও পণ্য তৈরি হওয়া এবং তার চাহিদা ও বিপণনের অনেকটাই নির্ভর করে কোন এলাকায় শিল্প গড়া হচ্ছে, তার উপর। নির্ভর করে পণ্য উৎপাদনের খরচও। সেই কারণেই জেলাগুলিতে আরও নিবিড়ভাবে খোঁজা হচ্ছে জমি। এস্টেট বা পার্ক তৈরি হলেই সেখানে রাতারাতি শিল্প আসবে, এমন নয়। কিন্তু শিল্প নিয়ে সরকারের ভূমিকা ও আন্তরিকতায় যাতে কোনও প্রশ্ন না ওঠে, সেই কারণেই জমির বহর বাড়াতে চাইছে রাজ্য।
নিগম কর্তারা এ-ও বলছেন, ছোট শিল্পের জন্য ছোট জমির দরকার হলেও, তা কিনতে অনেক সময় স্থানীয় সমস্যা তৈরি হয়। গোল বাঁধে দাম নিয়েও। সরকার যদি নিজেই এই বিষয়ে উদ্যোগী হয় এবং নিগমের থেকে শিল্পপতিরা সরাসরি লিজে জমি নেন বা কিনে নেন, তাহলে আদতে তাঁদেরই সুবিধা। রাজ্য ক্ষুদ্র শিল্প উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান বিপ্লব রায়চৌধুরী বলেন, মুখ্যমন্ত্রী সবসময়ই শিল্পের জন্য জমি জোগাড়কে প্রাধান্য দিয়ে এসেছেন। আমরাও সেই কারণে মহকুমা স্তরে জমি চেয়ে চিঠি দিয়েছিলাম জেলাশাসকদের। তারই ফলশ্রুতি হিসেবে প্রায় ১০০ একর জমির সন্ধান মিলেছে।