সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে বহু সফলতা অর্জন করেছেন তিনি। দলকে জিতিয়েছেন বহু ম্যাচে। তাঁর পায়ের ছন্দে গোটা মোহন বাগান গ্যালারি উত্তাল হয়ে উঠত। তাঁর গোটা ফুটবল কেরিয়ার তিনি কাটিয়ে দিয়েছিলেন সবুজ-মেরুন তাঁবুতে। তাঁর অবসরের সময় ভারাক্রান্ত হয়ে উঠেছিল সমর্থকদের মন। সেই সবুজ তোতা ফের ফিরছেন মোহনবাগানে! খেলোয়াড় হিসেবে না কোচের ভূমিকায়। সোমবার থেকে বেইতিয়াদের কোচিং করাতে মোহনবাগান মাঠে নেমে পড়ছেন আর কেউ নন, হোসে র্যামিরেজ ব্যারেটো!
কিন্তু কেন এমন সিদ্ধান্ত নিলেন মোহনবাগানের ঘরের ছেলে সবুজ-মেরুনের ভগবান? ছ’দিনের এই সংক্ষিপ্ত কোচিং অভিযানের পিছনে তাহলে কি অন্যরকম কিছু ভাবনা রয়েছে সবুজ-মেরুনে? এদিনই মুম্বই থেকে কলকাতায় চলে আসা মোহনবাগানের প্রাণভোমরা হাসতে হাসতে বলছিলেন, “প্লিজ, এরমধ্যে আবার অন্যরকম কিছু ভাববেন না। এখন আমি কোচিংয়ের অনুগত ছাত্র। তাই সুযোগ পেয়েছি যখন, যতটা সম্ভব শিখে নিতে চাইছি।”
মুম্বইয়ে রিলায়েন্স অ্যাকাডেমির সহকারী কোচ হিসাবে কাজ করার পাশাপাশি এএফসির ‘বি’ লাইসেন্সটা ইতিমধ্যে শেষ করে ফেলেছেন সবুজ তোতা। ইচ্ছে, নতুন বছরের শুরুতেই শেষ করে ফেলবেন ‘এ’ লাইসেন্স। মাঝের এই সময়টায় যেহেতু কিছুদিনের জন্য ছুটি পেয়েছেন, ঠিক করে ফেলেছেন, ‘ঘরের ক্লাবে’ কোচিংটা ঝালিয়ে রাখবেন। ৪-৯ নভেম্বর পর্যন্ত বেইতিয়াদের কোচিং করিয়ে ফের মুম্বই গিয়ে যোগ দেবেন রিলায়েন্স অ্যাকাডেমিতে।
মোহনবাগান কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে ছ’দিনের কোচিং করানোর এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পিছনে ব্যারেটোর ব্যখ্যা হল, “ধরুন, আমি হোটেল ম্যানেজমেন্ট কোর্স শেষ করেছি। এবার কোথাও চাকরি করার আগে যদি নিজেদের কোনও জানাশোনা হোটেল থাকে, তাহলে অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জন্য কিছুদিন শিক্ষানবিশ হিসাবে কাজ করতেই পারি। মোহনবাগানে আমার এই সংক্ষিপ্ত কোচিং পর্বটা এভাবেই দেখতে পারেন। কারণ, মোহনবাগান আমার ঘরের ক্লাব। কর্মকর্তারা আমার পরিবারের সদস্যর মতো। তাই আমি যদি নিজের কোচিং অভিজ্ঞতা বাড়ানোর জন্য কোনও ক্লাবে কিছুদিন ‘অতিথি’ কোচ হিসাবে কাজ করতে চাই, সেই ক্লাব মোহনবাগান ছাড়া আর অন্য ক্লাব হতেই পারে না। আমি যখনই কিছু সাহায্য চেয়েছি, মোহনবাগান সব সময় আমার পাশে দাঁড়িয়েছে।’’
সবুজ-মেরুন হৃদয়ে ব্যারেটোর স্থান কোথায়, তা জানে একমাত্র মোহনবাগান জনতা আর কর্মকর্তারাই। তিনি যে ভূমিকাতেই ক্লাবের সঙ্গে জড়িত হতে চান না কেন, মোহনবাগানের দরজা সবসময় খোলা। তাই ছুটির সময়ে ব্যারেটো যখন কর্তাদের কাছে প্রস্তাব দিলেন, ছ’দিনের জন্য ভিকুনার কোচিং স্টাফে থেকে বেইতিয়াদের কোচিং করাবেন, আপত্তি করেননি কেউই। বরং ভবিষ্যতের কোচ হয়ে ওঠার পথে উৎসাহই দিয়েছেন সবাই। হাতে এখনও দুটো দিন থাকলেও ফের সবুজ-মেরুন মাঠে বল নিয়ে নামবেন বলে এখন থেকেই উত্তেজিত ব্যারেটো। বললেন, “সত্যিই তর সইছে না। আবার মোহনবাগান মাঠে নামব। তবে এবার নতুন ভূমিকায়। তবে ভিকুনা যেভাবে বলবেন, আমার ভূমিকা সেরমকই হবে। আমি এখন শিক্ষার্থী।”
মোহন বাগানের বর্তমান কোচ ভিকুনার সঙ্গী হিসাবেই বেইতিয়া, ফ্রান গঞ্জালেজদের ছ’দিন প্র্যাকটিস করাবেন ব্যারেটো। মানে, আপাতত ‘অতিথি’ কোচ হিসাবে মোহনবাগানে ব্যারেটোর দ্বিতীয় ইনিংস শুরু হচ্ছে বলা যায়। ভবিষ্যতে কী হবে, তা ভবিষ্যৎই বলবে।