ভারতের কৃষক, যুবা কখনও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে নিজের সমস্যার কথা বলতে পারেন না৷ কিন্তু ম্যাডি শর্মা নামের এক আন্তর্জাতিক বিজনেস ব্রোকার ইউরোপিয় সাংসদদের ভারতে আমন্ত্রণ জানিয়ে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করিয়ে দিচ্ছেন তাঁদের। এমনকী দেশের বিরোধীরা কাশ্মীর যাওয়ার ছাড়পত্র না পেলেও, সেই ‘দালাল’ ইইউ দলকে কাশ্মীর সফরে নিয়ে যাচ্ছেন। এ নিয়ে ইতিমধ্যেই যখন তোলপাড় দেশ, বিরোধীরা যখন প্রশ্ন তুলছেন এই ম্যাডি শর্মা কে? কী করে প্রধানমন্ত্রী তাঁকে সময় দেন? তখন চাপের মুখে পড়ে পিছু হটতে বাধ্য হল কেন্দ্র।
হ্যাঁ, কাশ্মীরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের তথাকথিত প্রতিনিধিদের সফর নিয়ে এত ঢক্কানিনাদ, খোদ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিদেশি সাংসদদের সহাস্য ছবি এবং উপত্যকা শান্ত বলে জোর প্রচারের পর অবশেষে মোদী সরকার ঢোক গিলে স্বীকার করল, ওই সফর সরকারি ছিল না। নেহাতই ব্যক্তিগত বক্তব্য পেশ করেছেন সফররত বিদেশি পরিদর্শকরা। বৃহস্পতিবার বিবৃতি দিয়ে বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, এতে মন্ত্রকের কোনও ভূমিকাই ছিল না। সরকার কাউকেই আমন্ত্রণ জানায়নি।
বিদেশ মন্ত্রকের এই অস্বস্তির মূল কারণ, ইউরোপীয় ইউনিয়িনের প্রেস সচিব ভিক্টর আমকিউভিস্ট ‘ন্যাশনাল হেরাল্ড’-এর লন্ডনের প্রতিনিধি অসীম রায়কে জানিয়েছেন, ব্যক্তিগত সফরেই কাশ্মীর গিয়েছিলেন ইইউ সাংসদরা। ওই সফর সরকারি ছিল না। ওঁরা কেউই ইউরোপীয় ইউনিয়িনের প্রতিনিধিত্ব করেননি। গিয়েছিলেন অন্য সূত্র ধরে। ইইউ ওই সম্পর্কে কিছুই জানে না। তবে সরকার আরও বিব্রত কাশ্মীরে এই ‘ব্যক্তিগত’ সফরের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে যাদের নাম, সেই সন্দেহজনক শিল্পদ্যোগী এবং সংস্থাদের নিয়ে। যেমন শ্রীবাস্তব গ্রুপ।
শ্রীবাস্তব গ্রুপ তাদের ওয়েবসাইটে যারা নিজেদের পরিচয় দিয়েছে – ‘দেশের বর্ধমান বাণিজ্যিক সংস্থা। প্রাকৃতিক সম্পদ, পরিস্রুত শক্তি, আকাশপথ, স্বাস্থ্য পরিষেবা, সংবাদ পত্র ও প্রকাশনা এবং আকাশপথে উৎসাহী।’ অথচ ‘ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ নন-অ্যালাইনড স্টাডিজ’, যারা বিদেশি সাংসদদের কাশ্মীর ভ্রমণের সব খরচ দিল, তাদের সঙ্গী এই শ্রীবাস্তব গ্রুপ বাস্তবে কোনও ব্যবসাই করে না। অন্তত তেমনটাই জানাচ্ছে ‘রেজিস্টার অফ কোম্পানীজ’। ফলে ইইউ সাংসদরা যাদের খরচে কাশ্মীর ঘুরে গেলেন, তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ফলে একপ্রকার বাধ্য হয়েই বিদেশ মন্ত্রক বিবৃতি দিয়ে জানাল, এই কাশ্মীর সফরে তাদের কোনও হাত নেই।