দ্বিতীয় মোদী সরকারের পেশ করা কেন্দ্রীয় বাজেটে চলতি আর্থিক বছরের জন্য ১ লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছিল। যা জিডিপির ৩.৩ শতাংশ। কিন্তু প্রত্যাশা মতো আয় না হওয়ায় সেপ্টেম্বরের শেষে কেন্দ্রের আর্থিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬.৫২ লক্ষ কোটি। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের প্রথম ছ’মাসেই বাজেট লক্ষ্যমাত্রার ৯২.৭ শতাংশে পৌঁছেছে রাজকোষ ঘাটতি।
প্রসঙ্গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের রাজকোষ ঘাটতি ৭.০৩ লক্ষ টাকা বা জাতীয় উৎপাদনের ৩.৩ শতাংশ হবে বলে কেন্দ্রীয় বাজেটে জানিয়েছিলেন মোদী সরকারের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। কিন্তু, এপ্রিল-সেপ্টেম্বর পর্বে কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যয় ও আয়ের ঘাটতি ৬.৫২ লক্ষ কোটি টাকা ছুঁয়েছে। যেখানে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম ছ’মাসে রাজকোষ ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৫.৯৫ লক্ষ কোটি টাকা।
এই ঘাটতি বৃদ্ধির প্রধান কারণ, চলতি অর্থবছরে সরকারের রাজস্ব আদায় কমে যাওয়া। ওই ছ’মাসে কর, শুল্ক প্রভৃতি বাবদ সরকারের রাজস্ব আদায় কমেছে ৪.৮৫ লক্ষ কোটি টাকা — বাজেট লক্ষ্যমাত্রার ৯৯.৮ শতাংশ! পরের ছ’মাসে, অর্থাৎ অক্টোবর-মার্চ, পর্বে অর্থনীতি ঘুরে না দাঁড়ালে সরকারের রাজস্ব আদায় আরও কমবে সন্দেহ নেই।
ইতিমধ্যেই প্রতি মাসে জিএসটি আদায়ের পরিমাণ বাজেট লক্ষ্যমাত্রার (১.১২ লক্ষ কোটি টাকা) অনেক নীচে নেমে গিয়েছে। সেপ্টেম্বরে জিএসটি আদায় গত ১৯ মাসের সর্বনিম্ন ৯১,৯১৬ কোটি টাকা হয়েছে। সরকারের প্রত্যক্ষ কর আদায়ও আশানুরূপ নয়। সেইসঙ্গে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন সম্প্রতি যে সমস্ত পদক্ষেপ করেছেন তাতে সরকারকে প্রায় ১.৪৫ লক্ষ কোটি টাকার আয় হারাতে হবে।
তাছাড়া, এপ্রিল-সেপ্টেম্বর পর্বে সরকারের ব্যয়ও বেড়েছে। প্রথম ছ’মাসেই সরকারের ব্যয় পৌঁছেছে ১৪.৮৯ লক্ষ কোটি টাকায়। তুলনায়, মোট আয় হয়েছে ৮.৩৭ লক্ষ কোটি টাকা। এই পরিস্থিতিতে গোদের ওপর বিষফোড়ার সামিল কলকারখানা, খনিতে উৎপাদন কমা। সেপ্টেম্বর মাসে আটটি বুনিয়াদী শিল্পক্ষেত্র, কয়লা, তেল, গ্যাস, ইস্পাত, সিমেন্ট, বিদ্যুৎ, সার ও রাসায়নিক পণ্য উৎপাদন গত বছরের তুলনায় ৫.২ শতাংশ কমেছে।
এই পরিসংখ্যানের প্রেক্ষিতে জুলাই-সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকে অর্থনীতির বৃদ্ধির হার এপ্রিল-জুনের তুলনায় বিশেষ হেরফের হবে না বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এপ্রিল-জুন মাসে অর্থনীতির বৃদ্ধির হার গত পাঁচ বছরের সর্বনিম্ন ৫ শতাংশ হয়েছিল।