ছবি থেকে কবিতা- সংস্কৃতির অঙ্গনে স্বছন্দ গতিবিধি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বিরোধী নেত্রী থাকার সময় থেকেই কখনও নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে বই লিখেছেন তিনি। কখনও আবার কবিতা। বিদ্যাসাগর কলেজে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার প্রতিবাদে হোক বা বিরোধীদের পিছনে কেন্দ্রীয় এজেন্সি লেলিয়ে দেওয়ার বিরোধিতায়, বারবরই গর্জে উঠেছে মমতার কলম। এবার রাজ্যের উৎসব প্রাঙ্গণেও কার্যত রাজ করল মমতার বিপুল রচনাসম্ভার আর জাগো বাংলা। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলল ‘দিদিকে বলো’র প্রচার।
পাড়ায় পাড়ায় পুজো মণ্ডপের আশপাশে তৃণমূলের মুখপত্রের নামে হওয়া স্টলে মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রীর লেখা বইয়ের সম্ভার নিয়ে বসেছিলেন দলের কর্মীরা। দলীয় সূত্রের দাবি, এবার অনেক বেশি সংগঠিত উদ্যোগে ব্যাপক সাড়া মিলেছে। উল্লেখ্য, বেশ কয়েক বছর ধরেই পুজোর সময় বইয়ের স্টল দেওয়া শুরু করে তৃণমূল। দলের মুখপত্র ‘জাগো বাংলা’র নামে এই বইয়ের স্টল দেওয়া হলেও দলনেত্রীর লেখা বই তার প্রধান আকর্ষণ। আর ‘দিদিকে বলো’র সৌজন্যে রাজ্যের শাসকদলের এই বই বিক্রয় কেন্দ্রগুলি বস্তুত জনসংযোগ কেন্দ্রে পর্যবসিত হয়েছিল।
এ বছরই পুরভোট। আর ২০২১য়ে রয়েছে রাজ্যে বিধানসভা ভোট। তাই জনসংযোগে বাড়তি গুরুত্ব দিয়েছে তৃণমূল। সেই লক্ষ্যেই ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচির নিয়ে মানুষের বাড়ির উঠোন পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছেন শাসকদলের প্রতিনিধিরা। এবার পুজোয় সেই জনসম্পর্ককে আরও সংহত করতে সক্রিয় হয়েছিল তৃণমূল। পুজো মণ্ডপকে ঘিরে যে জনসমাগম, তাকে কাজে লাগাতেই এবার পরিকল্পনা নিয়েছিল তৃণমূল।
দলের পক্ষ থেকে পুজোর আগেই মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক রাজ্যের সমস্ত জেলা নেতৃত্বকে সার্কুলার দিয়ে ‘জাগো বাংলা’র নামে স্টল দেওয়ার দলীয় সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন। দলের মুখপত্রের উৎসব সংখ্যার সঙ্গে মমতার লেখা ৮০টি বইয়ের তালিকাও দিয়ে দেন তিনি। তাঁর দাবি, একদিকে বিজেপি সরকারের আর্থিক নীতির ফলে মানুষের দুর্দশা, অন্যদিকে এনআরসি’র নাম করে বাংলাকে হুমকি, এই দুইয়ের বিরুদ্ধে প্রচারের কাজ চলেছে এই স্টলগুলি থেকে। তৃণমূল নেত্রীর বইয়ের চাহিদাও এবার ছিল অনেক বেশি।
প্রায় সব স্টলেই ছিল ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচীর প্রচার। দলের এক নেতার মতে, ইতিমধ্যেই ‘দিদিকে বলো’র প্রভাবে আমজনতার সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক আরও নিবিড় হয়েছে। সেই সুবাদে ভিড় বেড়েছে তৃণমূলের স্টলে। তৃণমূলের উত্তর কলকাতার এক যুবনেতার মতে, রাজনীতির বই ছাড়াও মুখ্যমন্ত্রীর লেখা ছোটদের বইয়ের বিক্রিও ভালো হয়েছে। তাঁর আক্ষেপ, চাহিদার তুলনায় বই কম ছিল। আগে বুঝতে পারলে শিশু-কিশোরদের জন্য লেখা বইয়ের সম্ভার আরও বাড়ানো যেত। তবে শুধু বই নয়, নেত্রীর লেখা গানের সিডিও বিক্রি হয়েছে বইয়ের স্টলগুলিতে।