আজ পঞ্চমী। এবার প্রায় প্রথমা থেকেই ঠাকুর দেখার জন্যে সাধারণ মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। আজ বৃষ্টিকে উপেক্ষা করেই মানুষ বেরিয়েছেন। আর পুজো পরিক্রমায় যাতে কোনওরকম বিঘ্ন না ঘটে তাই সবাইকে সামলানোর গুরু দায়িত্ব পালন করেন পুলিশেরা। এই আনন্দোৎসবের নেপথ্য নায়ক কিন্তু পুলিশরাই, যারা এই চার দিনও ছুটি পান না, সময় দিতে পারেন না তাঁদের পরিবারকে।
পুজোর গোটা মাসেই ছুটি বাতিল হয় কলকাতা পুলিশের। জেলা পুলিশেরও। ওঁরা পরিবারের সঙ্গেও কাটাতে পারেন না উৎসবের দিনগুলি। এমার্জেন্সি ডিউটি। পুজোর দিনগুলিতেও খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিনিয়ত গোটা রাজ্যের খোঁজখবর রাখেন। বিভিন্ন পদস্থ কর্তাকে ফোন করে জেনে নেন কী পরিস্থিতি। কোনও ঘটনা ঘটলে, খবর পাওয়ামাত্র তৎক্ষণাৎ নির্দিষ্ট অফিসারদের নির্দেশ দেন বিষয়টি দেখতে।
২৮ সেপ্টেম্বর থেকে কলকাতা পুলিশের ব্যক্তিগত ছুটি বাতিল। চতুর্থীর দিনই ৭ হাজার পুলিশ কলকাতায় কাজে নেমে পড়েছেন। অসুস্থ হয়ে পড়লেও ছুটি নেই। পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। পরিবারের কেউ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে, কয়েক ঘণ্টার জন্য সাময়িক বিরতি। কলকাতা পুলিশের মতোই জেলা পুলিশেও একই চিত্র। আলাদা ডিউটি রোস্টার তৈরি হয় এই দিনগুলোর জন্য। কলকাতা পুলিশের ৩ দফায় ডিউটি হয়। সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৫টা, দুপুর ২টো থেকে ভোর ৪টে (এই সময়ে পথে ১৮ হাজার পুলিশকর্মী ছাড়াও সমস্ত বিভাগীয় উপনগরপাল পথে থাকেন, লালবাজার কন্ট্রোল রুমে বসেন যুগ্ম নগরপাল সদর–সহ অন্য পদস্থ কর্তারা), এবং রাত ১টা থেকে সকাল ৮টা। ভাসান ও কার্নিভ্যাল পর্যন্ত ছুটি নেই। আবার ২৩ অক্টোবর থেকে শুরু করে ছটপুজো পর্যন্ত ছুটি বাতিল। ছুটি পান না সিভিক পুলিশ, গ্রিন পুলিশের কর্মীরাও। একই চিত্র লোকাল ট্রেন ও মেল ট্রেন এবং মেট্রো রেল চালকদের। কাজ বেশি, কারণ, বিশেষ লোকাল ট্রেন, মেল, মেট্রো ছুটতে থাকে।
একই চিত্র সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানেও চিকিৎসক ও নার্সদের রোটেশন ডিউটি থাকে। নিরবচ্ছিন্ন ৪ দিন ছুটি তাঁরাও পান না। এবছর কয়েকটি জেলায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে, তাই সেচ দপ্তর কন্ট্রোল রুম খুলে রেখেছে। সেচ দপ্তরের কর্মীরাও সজাগ। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা যারা অ্যাম্বুল্যান্স সরবরাহ করে, তারাও অতন্দ্র পাহারায় থাকে।
দমকলেরও ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত ছুটি বাতিল। ৩ শিফটে দমকল কর্মীরা ব্যস্ত থাকেন। এমনিতেই পুজোর দিনগুলিতে রাস্তায় মানুষ ও গাড়ি থিকথিক করে। কোথাও হঠাৎ আগুন ধরে গেলে, যত দ্রুত সম্ভব সেখানে পৌঁছনো একটা মস্ত চ্যালেঞ্জ। এবছর আগুন লাগলে পুলিশ এসকর্ট করে নিয়ে দমকলের জলের গাড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেবে। তাই গোটা বাংলা যখন পুজোর আবহে গা ভাসাবে তখন সবকিছু স্বাভাবিক রাখতে নেপথ্য নায়ক হয়ে আড়ালেই থেকে যান এনারা।