বাদাবনে বাড়ছে ম্যানগ্রোভের বসতি। ২০১৫ সালের তুলনায় পরের দু বছরে সুন্দরবনে ম্যানগ্রোভ বেড়েছে প্রায় ৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে। দ্য ইন্ডিয়ান স্টেট অফ ফরেস্ট রিপোর্টে এই তথ্য প্রকাশ পেয়েছে।
রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে সুন্দরবনে বাড়ছে বিপন্ন ‘ওরা’ প্রজাতীর ম্যানগ্রোভ। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচারের তথ্য অনুশারে, সুন্দরবনে যে ১৮০ ধরনের ম্যানগ্রোভ বা এর কাছাকাছি প্রজাতির উদ্ভিদ মেলে, তার মধ্যে বিশুদ্ধ ম্যানগ্রোভ রয়েছে ৩৪টি প্রজাতির।
ইউনাইটেড নেশনস ফ্রেমওয়ার্ক কনেভনশন অন ক্লাইমেটচেঞ্জ প্রোটোকল অনুযায়ী ২০১০ থেকে ২০১৫-র মধ্যে সুন্দরবনের প্রায় সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে ম্যানগ্রোভের জঙ্গল তৈরির কাজ হয়। এই কর্মসূচিতে কেওড়া, ওরা, জাত গরান, মাঠ গরান, কাকড়া, গর্জন, সুন্দরী, ধুধুল, গেওয়া, খলসির মতো ১৬টি প্রজাতির প্রায় এক কোটি ম্যানগ্রোভ চারা তৈরি করা হয়েছিল। তৈরি করা হয় ৫২টি নার্সারি। ১৬৩টি জায়গায় রোপণ করা হয় ম্যানগ্রোভ চারা। ফলে বেড়েছে ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছের সংখ্যা। এই বিষয়টিকে ‘সাফল্য’ হিসেবেই দেখতে চান এই কাজের সঙ্গে যুক্ত মানুষগুলি।
সুন্দরবনের ঠাকুরান এবং সপ্তমুখানি অববাহিকার পাথরপ্রতিমা এবং রামগঙ্গায় ম্যানগ্রোভ চারা রোপণ করা হয়েছিল। সেখানেই ম্যানগ্রোভের ভালো বৃদ্ধি হয়েছে। এছাড়াও হুগলির মধুসূদনপুরের চর এবং বিদ্যা নদীর অববাহিকায় রামশশীর চরেও ম্যানগ্রোভের বৃদ্ধি হয়েছে চোখে পড়ার মতো।
তবে প্রদীপের নীচে অন্ধকারও রযেছে। সুন্দরবনে ম্যানগ্রোভ রোপণের কাজ চললেও তা ধ্বংসও চলছে নির্বিচারে। জনবসতির বৃদ্ধির পাশাপাশি মাছ চাষের জন্যও ম্যানগ্রোভের ক্ষতি হচ্ছে। ম্যানগ্রোভগুলি সরাসরি না-কেটে তার চারপাশে পাঁচিল তুলে দেওয়া হচ্ছে। পর্যাপ্ত জল না-মেলায় ম্যানগ্রোভগুলি শুকিয়ে যেতে শুরু করলে তা ধীরে ধীরে কাটা হচ্ছে।
পরিবেশবিদদের মতে সুন্দরবনের জীববৈচিত্রে ম্যানগ্রোভোর ভূমিকা আছে। এই গাছ নষ্ট করে ফেললে মানুষেরই সমুহ ক্ষতি। ভেঙে পড়বে জীববৈচিত্রও। তাই সচেতন করতে হবে মানুষকে। ম্যানগ্রোভ বাঁচাতে সরকারের তরফেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে হবে।
তাই দ্য ইন্ডিয়ান স্টেট অফ ফরেস্ট রিপোর্টে সন্তুষ্ট না থেকে ম্যানগ্রোভ বাঁচাতে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের উদ্যোগ নিতে হবে সবাইকে একযোগে।